বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত ইন্টারনেট-সংযোগসম্পন্ন ডিভাইস যেমন কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব ও স্মার্টফোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বর্তমানে সময়ের একটি অনিবার্য দাবি। সেই সঙ্গে ইন্টারনেটে শিশুদের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। এর জন্য অনেকেই নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকেন। যাতে ইন্টারনেটে গেম বা পছন্দের কোনো বিষয় অনুসন্ধান বা দেখার সময় শিশুরা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে না পারে; যা তাদেরকে মানসিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে।
এজন্য আজকের নিবন্ধে অনলাইনে শিশুদের নিরাপত্তার জন্য কিছু পরামর্শ শেয়ার করা হল যা সচেতন অভিভাবকরা কাজে লাগাতে পারেনঃ
নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার ও শিশুদের নিরাপত্তার চিন্তা
শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন কোনো ব্যবস্থা চালু করুন। প্রয়োজনে প্রত্যেক শিশুর জন্য আলাদা আলাদা লগইন আইডি এবং পাসওয়ার্ডের ব্যবস্থা করুন। এছাড়া তারা যাতে ডিভাইস অ্যাডমিনের পাসওয়ার্ড জানতে না পারে, সে ব্যবস্থাও গ্রহণ করুন। এরকম করা গেলে ইন্টারনেটে প্রত্যেক শিশুর কার্যকলাপ ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
শিশুদের নিরাপত্তার জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট ব্রাউজার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
গেমস এবং প্রজেক্টের জন্য শিশুরা যেন সবসময় কিডস ফ্রেন্ডলি ব্রাউজার ব্যবহার করে সেটি নিশ্চিত করুন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্যের সর্বাধিক নিরাপত্তা জোরদারকরণে শিশুদেরকে সাহায্য করুন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তারা যেন শুধু পরিচিতদের সাথেই কথা বলে সেটি নিশ্চিত করুন। ওয়েবসাইটের পপ-আপ ব্লক করে রাখুন এবং ওয়েবক্যাম ও জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম অচল করে রাখুন।
শিশুদের নিরাপত্তার জন্য ইন্টারনেট প্রবেশাধিকারে সীমা সেট করুন
তুলনামূলক কম বয়সী শিশুরা সাধারণত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে গেমস খেলা কিংবা ভিডিও দেখার জন্য। এরকম ক্ষেত্রে ডিভাইসের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে রাখুন। অভিভাবকের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যে রেখে বাচ্চাদের জন্য নির্মিত নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইট ব্যবহারের সুযোগ তাদেরকে করে দিন এবং প্রতিদিন ডিভাইস ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিন।
শিশুদের সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করুন
সমসাময়িক সাইবার ইস্যুর ভালো-মন্দ দিক নিয়ে আপনার শিশুর সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন। এরপর অনুসন্ধানের চেষ্টা করুন ইন্টারনেট ব্যবহারে বাস্তবে তার উপর কোন ধরনের প্রভাব পড়ছে কিনা। ইন্টারনেট ব্যবহারের পর আপনার সন্তান কোনো অস্বাভাবিক আচরণ করছে কিনা, তা খেয়াল করুণ। প্রয়োজনে জিজ্ঞেস করুন সে বা তার কোনো বন্ধু সাইবার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে কিনা।
বিনামূল্যে অফার সম্পর্কে সতর্ক করুন
ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় আপনার শিশু যাতে কোনো বিনামূল্যের চমকপ্রদ অফার গ্রহণে আগ্রহী না হয়, সে বিষয়ে তাকে সতর্ক করুন।
এ ধরনের ফ্রি অফারের মাধ্যমে এমবেডেড কুকিজ এবং ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে থাকে সাইবার অপরাধীরা। ভুল করেও যাতে এ ধরনের লিংকে ক্লিক না করে, সে বিষয়ে তাদেরকে বুঝিয়ে বলুন।
ইন্টারনেট সম্পর্কে শিক্ষা দিন
শিশুকে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিন। অনলাইনে তারা কার সঙ্গে কথা বলবে এবং কথা বলার ধরন কিরুপ হবে সে সম্পর্কে তাদেরকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিন।
এছাড়া ইন্টারনেট একজন মানুষকে বাস্তবিকই কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, সে বিষয়ে তাদেরকে বিস্তারিত বলুন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাতে তারা বাস্তব জীবনের সঙ্গে বেমানান কোনো কিছু করতে আগ্রহী না হয়ে ওঠে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখুন।
শিশুর অনলাইন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করুন
সচেতন পিতামাতা কখনই নিজেদের শিশুকে একা পার্কে হাঁটতে বা খেলতে পাঠাতে চান না। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এ কাজটিই করুন। যেহেতু ইন্টারনেট ব্যবহার অন্য সাধারণ পাবলিক প্লেসের মতোই উন্মুক্ত, তাই আপনার শিশু অনলাইনে অবস্থানকালীন তার প্রতিটি কার্যকলাপের উপর নজরদারি করুন। সে কি করছে, কোন লিংকে প্রবেশ করছে সবকিছু নজরদারিতে রাখুন।
ঘুমের সময় ডিভাইস নয়
শিশুদের ঘুমানোর সময় স্মার্টফোনসহ যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুন। এছাড়া ঘুমানোর সময় যাতে প্রযুক্তির কোনো অনুষঙ্গ তারা বিছানায় নিতে না পারে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করুন। রাতে খাওয়ার পর চ্যাটিং, টেক্সটিং ও মেইল চেক করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুন এবং প্রতিনিয়ত এই নিয়মটি অনুসরণ করুন।
সার্চ বারে তালিকা নয়
শিশুর নৈতিক অনুশীলনকে গুরুত্ব দিন এবং সার্চ বারে পূর্বের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট কোনো তালিকা রাখবেন না। অনলাইনে শিশুর নিরাপত্তায় যৌথ চ্যাটরুম ব্যবহার করা এবং অবৈধভাবে পাইরেসি করে কোনোকিছু ডাউনলোড না করার ব্যাপারে পরামর্শ দিন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন নেতিবাচক দিক সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করুন।
শিশুকে ইন্টারনেট বুঝতে শেখান
বর্তমানে প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে অনেকটাই সহজ ও আরামদায়ক করে দিয়েছে। শিক্ষা, বিনোদন ও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেটের কোনো তুলনা নেই। তবে শিশুদেরকে অবশ্যই এর ইতিবাচক দিকগুলির বিষয়ে উৎসাহিত করতে হবে। ইন্টারনেটে কোনো লিংক বা কনটেন্টে প্রবেশের আগে আপনার শিশুকে ভাবতে শেখান। যাতে সে নিজ থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে, কোনটা ইতিবাচক আর কোনটা নেতিবাচক।
ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিটি নিয়ে শিশুর সাথে নিয়মিত আলোচনা করুন
শিশুর অনলাইন অ্যাক্টিভিটি নিয়ে নিয়মিত তার সাথে আলোচনা করুন। এতে নেতিবাচক কোনো কনটেন্ট তার সামনে প্রদর্শিত হলে সে অনায়াসে তা আপনার সামনে প্রকাশ করবে। ফলে এ ধরনের কনটেন্টে যাতে আর প্রবেশ না করতে পারে সে ব্যাপারে অভিভাবকর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এছাড়া ডিভাইসের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ