আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর প্রকৃত নামের ব্যপারে বিভিন্ন অভিমত পাওয়া যায়। প্রসিদ্ধ অভিমত অনুযায়ী, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তাঁর নাম ছিল আবদুশ শামস বা আবদে উমর। ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর নাম রাখা হয় আবদুর রহমান। তিনি দক্ষিণ আরবের আযদ গোত্রের সুলায়ম ইবন ফাহাম গোত্রের বংশোদ্ভূত ছিলেন। তাঁর পিতার নাম সাখর এবং মাতার নাম মায়মুনা। বিড়াল ছানাকে অত্যধিক ভালবাসতেন বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ‘আবু হুরাইরাহ’ তথা বিড়াল ছানার মালিক বা পিতা উপনামে ডাকতেন। এ উপনামেই তিনি পরবর্তীতে পরিচিতি লাভ করেন।
আবু হুরাইরাহ নামটিতে একটি মজার কাহিনী রয়েছে। একদিন হযরত আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) জামার আস্তিনের নিচে একটি বিড়াল ছানা নিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট উপস্থিত হন। বিড়ালটি হঠাৎ সকলের সামনে বেরিয়ে আসে। এ অবস্থা দেখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে রসিকতা করে- ‘আবু হুরাইরাহ (বিড়ালের পিতা)’! বলে সম্বোধন করেন। এরপর থেকে তিনি আবু হুরাইরাহ নামে খ্যাতি লাভ করেন।
একদিন তিনি মাটিতে শুয়ে আছেন দেখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন ‘হে আবু তুরাব (মাটিওয়ালা) মাটিতে শুয়ে আছো কেন?’ এরপর থেকে তাকে আবু তুরাব নামেও ডাকা হত।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর ইসলাম গ্রহণ
তিনি ৭ম হিজরী মোতাবেক ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে মুহররম মাসে খায়বর যুদ্ধের প্রাক্কালে মদীনায় এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ত্রিশ বছরের মত।
যুদ্ধে অংশগ্রহণ
ইসলাম গ্রহণের পর হতে তিনি ইসলামের সকল যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে অংশগ্রহণ করেন। ইবনে আসীর তাঁর সম্পর্কে বলেন, “ইসলাম গ্রহণের পর তিনি রাসূলের সাথে সকল যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন।”
আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর ইসলামের দাওয়াত
রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ)-এর বৃদ্ধা মা জীবিত ছিলেন। তখনও তাঁর মা মুর্তিপূজার উপর অটল ছিলেন। তিনি তাঁর মাকে সব সময় ইসলামের দাওয়াত দিতেন, কিন্তু তাঁর মা তা অস্বীকার করতেন। ফলে তিনি খুবই দুঃখ অনুভব করতেন।
একদিন তাঁর মাকে আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি ঈমান আনার আহ্বান জানালে তাঁর মা রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এতে আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) ভীষণ মর্মাহত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট উপস্থিত হলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞেস তাকে কাঁদার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় আমার মাকে ইসলামের দাওয়াত দিই; কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করেন। প্রতিদিনের মতো আজও আমি তাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলাম। এরপর তিনি আপনার সম্পর্কে এমন কিছু কথা বলেছেন যা আমাকে ভীষণ বেদনা ও পীড়া দিয়েছে। ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাঁর জন্য এমন দু’আ করুন যাতে আল্লাহ তার হৃদয়কে ইসলামের জন্য আলোকিত করে দেন।’
তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম দু’আ করেন, ‘হে আল্লাহ! আবু হুরাইরার মাকে হেদায়াত দান করো।’। এই দু’আর বদৌলতে তাঁর মা ইসলামের ছাঁয়াতলে প্রবেশ করে নিজেকে ধন্য করেন।
হাদীস শাস্ত্রে আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর অবদান
বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী, সাহাবীদের মাঝে তিনিই সর্বাধিক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা মোট ৫৩৭৫টি। এ কারণে তাকে ‘হাদিস বর্ণনাকারীদের নেতা’ বলা হয়। ইমাম বুখারীর মতে, আট শতাধিক রাবী (হাদিস বর্ণনাকারী) তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি আসহাবে সুফফার অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।
প্রথমে তাঁর অবস্থা এমন ছিল যে, তিনি যা শুনতেন তাই ভুলে যেতেন। একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হাজির হয়ে তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি যা পড়ি তাই ভুলে যাই।’ তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, ‘তোমার চাদরটি আমার সামনে মেলে ধরো।’ তিনি তা মেলে ধরলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের দুই হাত ভরে পানি নেয়ার মতো করে তা আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ)-এর চাদরে ঢেলে দিলেন। যেন তিনি হাত ভরে কোনো কিছু নিয়ে তার চাদরে ঢাললেন। এরপর বললেন, ‘আবু হুরাইরাহ, চাদরটি তোমার বুকে জড়িয়ে নাও।’ তিনি তা জড়িয়ে নিলেন। আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) বলেন, ‘এরপর থেকে আমি আর কোনো কিছু ভুলিনি।’ (বুখারী)
এটিই ছিল তাঁর ইলমের বরকত। আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন মাত্র আড়াই বছরের মত। কিন্তু এ অল্প সময়েই তিনি অন্য সকল সাহাবী থেকে বেশি হাদিস মুখস্থ করেছেন ও বর্ণনা করেছেন। অল্প সময়ের মেহনতে অনেক বেশি ফল পেয়েছেন।
ইন্তেকাল
৫৭ মতান্তরে ৫৮ বা ৫৯ হিজরীতে হাদিসের সম্রাট এই সাহাবী মদীনায় ইন্তেকাল করেন। তাকে জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ