।। সাইমুম সাদী ।।
আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় অফিসের পূর্ব পাশে আমি এবং মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি ভাই কোনোরকমে একটু জায়গা বের করে দাঁড়িয়েছিলাম জানাযায়। কিন্তু জনতার স্রোত কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে টের পাচ্ছিলাম না।
এক মাদ্রাসা পড়ুয়া কিশোর আরেকজনের কাঁধে উঠে ছবি তুলতে চাইলো। কিন্তু ক্যামেরার চোখ তা ধারণ করতে অক্ষম। সে বলে ওঠল, যতদূর চোখ যায় শুধু টুপি আর টুপি। আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
আমাদের পাশেই একজন দাঁড়ালেন জানাযার জন্য। জানলাম, তিনি সচিবালয়ে চাকরি করেন। বললেন, কাসেমী সাহেব হুজুরকে মাঝে মধ্যে মিডিয়ায় দেখতাম। কিন্তু উনার এত ভক্ত আছে জানতাম না। এত জনপ্রিয়তা নিয়ে একজন মানুষ আমাদের মধ্যে ছিলেন, ভাবতেই অবাক লাগছে। হুজুরদের দল তো তাহলে অনেক শক্তিশালী।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
আমার জবাব দেওয়ার আগেই এক বয়স্ক আলেম ওপাশ থেকে উত্তর দিলেন, এই উত্তাল জনসমুদ্র দল বা রাজনীতির জন্য নয়। একজন নবীর উত্তরাধিকার আলেমের প্রতি জনতার ভালোবাসা। আল্লামা কাসেমী ছিলেন একজন শায়খুল হাদীস, একজন মুহতামিম এবং দেওবন্দের বিপ্লবী উত্তরাধিকার, বাংলার মাদানী। সেজন্যই এই জনস্রোত।
আমার মনে পড়লো, দেড় হাজার বছর আগের একটি ঘটনা। মক্কা বিজয়ের দিন আবু সুফিয়ান এবং নবিজীর চাচা আব্বাস (রাযি.) পাহাড়ের পাদদেশ থেকে লুকিয়ে সাহাবায়ে কেরামের জনস্রোত দেখছিলেন। বিভিন্ন কবিলা ও গোত্রের দল কালেমার পতাকা তুলে ধরে প্রবেশ করছিলেন একে একে মক্কা নগরীতে। এক অলৌকিক দৃশ্য।
আবু সুফিয়ান বললেন, আব্বাস, তোমার ভাতিজা মুহাম্মদ তো বিরাট বাদশাহ হয়ে গেছে। আব্বাস (রাযি.) বললেন, আবু সুফিয়ান ভুল বললে। এটা বাদশাহী নয়, নবুওয়ত। বাদশাহী আর নবুওয়তের মধ্যে পার্থক্য আকাশ পাতাল।
জানাযা শেষ হলো। আমার মনে ভাসতে লাগলো কয়েকটি কথা, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী অবশ্যই একজন মুকুটহীন সম্রাট। তবে তা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সম্রাট নয়, নববী ইলমের সম্রাট। নূর হোসাইন কাসেমীর মত সম্রাটদের জন্য জাতীয় ঈদগাহ লাগে না। তাদের স্থান হয় তৌহিদী জনতার বুকের গভীরে। যেখানে হাত বাড়ানোর সামর্থ্য দুনিয়ার কোনো শক্তিরই নেই।
[লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে]
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ