।। মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান ।।
ন্যায় বিচার একটি রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড বলা যেতে পারে। ইসলাম মানবজাতির কল্যাণের জন্য প্রেরিত হয়েছে বিধায় ন্যায় বিচারের প্রতি ইসলাম সর্বাদিক গুরুত্ব প্রদান করেছে।
বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) ন্যায় বিচারের প্রতি যে গুরুত্ব আরোপ করেছেন তা অদ্বিতীয়।
মুসলিম, অমুসলিম, ধনী, গরীব, আপন পর, বন্ধু শত্রু সকলের জন্যই তিনি ন্যায় বিচার ও ইনসাফ সমভাবে প্রয়োগ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.)এর জীবনে অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে এমন যে, তার দরবারে কয়েকবার বিচার দায়ের করা হলো, বাদী বিবাদীর মধ্যে এক পক্ষ মুসলিম অপর পক্ষ অমুসলিম।
হজরত রাসুল (সাঃ) সাক্ষী গ্রহণের মাধ্যমে অমুসলিম ব্যক্তির পক্ষে রায় দিয়ে ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
কোনো ব্যক্তির অপরাধ সম্পর্কে পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে তিনি তাকে শাস্তি নিশ্চিত করতেন না।
একবার বিশিষ্ট সাহাবী হজরত আব্দুল্লাহ বিন সাহলকে তার চাচাতো ভাই মোহাইয়েসা (রাঃ) সহ খায়বারের খেজুর পরিমাপ করার জন্য প্রেরণ করলেন। রাস্তায় আততায়ীদের হাতে শহীদ হন হজরত আব্দুল্লাহ। এসময় তার চাচাতো ভাই মোহাইয়েসা (রাঃ)তার পাশে ছিলেন না। এলাকাটি যেহেতু ইহুদি অধ্যুষিত ছিল, আর ইহুদিরা যেহেতু মুসলমানদের চরম শত্রু তাই ধারণা করা হচ্ছে ইহুদিরা ই হজরত আব্দুল্লাহ (রাঃ)কে হত্যা করেছে। কিন্তু হত্যাকারীকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
চাচাতো ভাই মোহাইয়েসা (রাযি.) রাসুল (সা.)এর দরবারে বিচারপ্রার্থী হলে রাসুল (সাঃ)তাকে বললেন, তুমি কি শপথ করে বলতে পারবে যে, এই হত্যাকাণ্ড ইহুদি দ্বারাই ঘটেছে?
উত্তরে তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) আমি নিজ চোখে তো তা দেখিনি। তারপর হুজুর (সা.) বললেন তাহলে ইহুদিদের থেকে শপথ গ্রহণ করা হোক। মোহাইয়েসা (রাঃ)বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, ইহুদিরা তো শুধুই মিথ্যে কথা বলে। এক্ষেত্রে ও এমনটাই করে বলবে তারা এই হত্যার সাথে জড়িত নয়।
অত:পর, যেহেতু নির্দিষ্ট কোনো সাক্ষী পাওয়া গেল না, এই জন্য হুজুর (সা.) ইহুদিদের জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করলেন না। এবং হজরত আব্দুল্লাহ বিন সাহল (রাঃ)র’ হত্যার বিনিময়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে একশত উষ্ট্র তার ওয়ারিশদের প্রদান করা হলো। (বোখারী শরীফ)।
এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবনে। যা তিনি অত্যন্ত ন্যায় বিচার করে ইনসাফপূর্ন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
আজও কোনো সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে সেই সমাজ ও রাষ্ট্র হবে সূখী, কল্যাণকর ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ