।। ফারজানা ইসলাম লিনু ।।
শৈশবে ভয়াবহ এক ভুতের গল্প বলতেন আম্মা। গল্পটা একবার নয় বহু বার শুনা। মৃত ব্যক্তির হাড়গোড় ভেঙে কড়মড় করে খাচ্ছে এক আত্মীয়ারূপী রাক্ষসী।
রাক্ষসীর মতলব টের পেয়ে কালবিলম্ব না করে সন্তানদের নিয়ে কোনমতে পালিয়ে বাঁচে লোকটার বউ। জলজ্যান্ত শিকার পালিয়ে যাওয়াতে রাক্ষুসীটা বেশ মনোঃক্ষুন্ন হয়। মহিলার উদ্দেশ্যে চিল্লায় চিল্লায় বলে, আরেকবার হাতের কাছে পাই তাইলে আর ছাড়ছিনে তোমায়। তোমার মুণ্ডু আমি চিবিয়ে খাবো।
এই গল্প শুনার সময় আমার গলা শুকিয়ে কাঠ, হাত পা ঠাইয়্যা হিম। তাও ক’দিন পর পর বায়না, আম্মা রাক্ষসনীর গল্পটা বলো না।
মানুষ বড় হলে সাহস বাড়ে। আমার হয়েছে উলটো। রাক্ষসীর গল্পটা একসময় আমি আর নিতে পারিনা। আম্মাকে অনুরোধ করি ভুতের গল্প ছাড়া,অন্য কিছু বলো। আম্মা ভুতের গল্পের পৃষ্ঠা উলটে ফেলেন। আমিও আর ঠান দিদির থলে ও ঠাকুমার ঝুলিতে মজা পাই না।
রাক্ষুস, খোক্কশ, কংকাল, হাড়, মাথার খুলিতে আমার আতংকিত শৈশব চাপা পড়লেও ভয় ডর পুরোপুরি কাটেনা।
কংকালের ছবি দেখে হুমায়ুন আহমেদের নাটকের রহিমার মায়ের মতো বেহুশ হয়ে পড়ার আগেই চোখ বন্ধ করি।
হরর সিনেমা, ভুতের নাটক দেখলেই আমার ঘুম পালায়, হৃদ কম্প দিয়ে জ্বর আসে। তাই অমন বিনোদন থেকে নিরাপদ দুরত্বে।
স্কুলের বায়োলজি ল্যাবে একটা আর্টিফিশিয়াল কঙ্কাল ঝুলানো আছে। ঐ রুমে গেলে কঙ্কাল হাত পা মৃদু নেড়ে সাদর সম্ভাষণ জানানোর আগেই আমি চোখ মুখ আলগা দিয়ে ত্রস্তে হাঁটা দেই।
আজকের দৈনিকে দেখলাম একবাসা থেকে বস্তাভর্তি মানুষের হাড়গোড়, মাথার খুলি ও কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে।
খবরে প্রকাশ, কবর থেকে লাশ চুরি করে এই কঙ্কাল গুলো বিক্রির জন্য জমিয়ে রেখেছে এক মরকির বলা।
চিন্তা করা যায়, কি বীভৎস ব্যবসার ভয়াবহ নমুনা!
– ফারজানা ইসলাম লিনু
শিক্ষক, কথাসাহিত্যিক।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ