এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর বলেছেন, দেশের একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে দেশ, জাতি ও নতুন প্রজন্মকে কল্যাণ রাষ্ট্র ও রাজনীতির নতুন অভিমুখ দেখানোর দু:সাহসিক লক্ষ্যেই এবি পার্টির অভিযাত্রা।
দল ঘোষনার পূর্ব থেকে বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমরা আজকের অবস্থানে পৌছেছি।গণতান্ত্রিক রাজনীতির অনুপস্থিতির এসময়ে আমাদের এই দল ঘোষনা কোনোক্রমেই সাধারণ বিষয় ছিলনা।
১৭ই অক্টোবর শনিবার এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্কিং কমিটি’র সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন,ধীরে সুস্থে হিসেব নিকেশ করে সামনে এগিয়ে চলাই হলো আমাদের প্রায়োরিটি। সাবধানে ও কৌশলে ভূমিকা রাখতে পারা হবে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আপাতত আমাদের দায়িত্ব।
সুলায়মান চৌধুরী দলের বিভিন্ন এ পযন্ত কাজের পরিসংস্থান তুলে ধরতে গিয়ে বলেন,
এবি পার্টির পথচলার প্রায় ছয় মাস অতিক্রান্ত হতে চলছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহাক্রান্তিকালের মধ্যেই ২মে ২০২০ থেকে আমাদের এই পার্টির আনুষ্ঠানিক যাত্রা। দল ঘোষনার পূর্ব থেকে বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমরা আজকের অবস্থানে পৌছেছি। গণতান্ত্রিক রাজনীতির অনুপস্থিতির এসময়ে আমাদের এই দল ঘোষনা কোনোক্রমেই সাধারণ বিষয় ছিলনা।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
যখন সংবিধানের দোহাই দিয়ে সাংবিধানিক রাজনীতির সকল পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচনের নামে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামাশার উৎসব চালু করা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দমন পীড়নের মাধ্যমে ভীত সন্ত্রস্থ ও রাজনৈতিকভাবে পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে। এরকম অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে দেশ, জাতি ও নতুন প্রজন্মকে কল্যান রাষ্ট্র ও রাজনীতির নতুন অভিমুখ দেখানোর দু:সাহসিক লক্ষ্যেই এবি পার্টির অভিযাত্রা।
এটা আমাদের সবার কাছে পরিস্কার যে এই কাজ কোন সহজ ও সাধারণ কাজ নয়।
২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল হোটেল সেভেনটি ওয়ান এর হল রুমে জনাকীর্ন এক সাংবাদিক সম্মেলনে মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে “জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ“ নামে আমাদের এই নতুন রাজনৈতিক উদ্যেগের থিম ঘোষনা করা হয়। এই ঘোষনার পরে ঢাকাসহ সারাদেশে মতবিনিময় সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং আলোচনা সভার মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশার সাথে এই রাজনৈতিক উদ্যেগের বিষয়ে মতামত গ্রহন করা হয়। দলের নাম, উদ্দেশ্য-লক্ষ্য, কর্মসূচী, আদর্শ, ইশতেহার এবং গঠনতন্ত্র নিয়ে ব্যাপক আলোচনা পর্যালোচনা করা হয়। নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের এই চর্চা বাংলাদেশে একটি বিরল দৃষ্টান্ত। এমনকি দেশের বাইরে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, তুরস্ক, মালয়েশিয়াসহ বিদেশের মাটিতেও আমাদের সচেতন ও উদ্যোগী জনগোষ্ঠীর সাথে আমরা মতবিনিময় করেছি। দেশে বিদেশে এভাবে ব্যাপক আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যমতের ভিত্তিতেই দল ঘোষনার সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। যা ইতিহাসের একটি মাইলফলক বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ভয়ঙ্কর থাবা হানার পরম্পরায় আমাদের দেশে করোনা মহামারির মধ্যে ২ মে, ২০২০ ইং তারিখে এবি পার্টির আত্মপ্রকাশের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এবি পার্টির মূল লক্ষ্যই হলো সেবা ও সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে কল্যান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। তাই আমরা আমাদের কর্মসূচী প্রতিপালন শুরুই করেছি করোনা-চ্যালেঞ্জ ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে। এ সময়ে সারাদেশে সামর্থ্যবান মানুষদেরকে ফুড ব্যাংকে সম্পৃক্তকরনের মাধ্যমে অভাবী মানুষের মধ্যে ত্রান বিতরন ছিল আমাদের প্রথম উদ্যোগ। এর পাশাপাশি দল ঘোষনার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সারাদেশে অনলাইন ও অফলাইনে যেভাবে সাড়া পেয়েছি তা আমাদের প্রত্যাশার চাইতেও বেশী। বর্তমানে দেশপ্রেম ও কল্যানমূলক রাজনীতির জন্য সম্পূর্ন প্রতিকুল সময় আমরা অতিক্রম করছি। তদুপরি বিভিন্ন রকম অপপ্রচার, ফতোয়া এবং সরকারী বাহিনীর হয়রানি ও নানা নজরদারির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। বিভিন্নমুখী ভয়ভীতি ও উস্কানীর মাঝেও আমরা ধৈর্যের সাথে কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। আপনারা জানেন ঝুঁকি নিয়ে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সহায়তা, অক্সিজেন সিলিন্ডার ও প্লাজমা প্রদানে উদ্বুদ্ধকরন কর্মসূচী আমরা পালন করেছি। যা দেশে-বিদেশে জনগন ও সুধী মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদেরকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে নতুনভাবে গড়ে ওঠা সম্ভাবনাময় একটি দলের আমরা নেতৃত্ব দিচ্ছি। বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য, জুনিয়র-সিনিয়রিটি, মূল্যায়ন-অবমূল্যায়নের টানাপোড়েন, ভূল বুঝাবুঝি ইত্যাদি রাজনীতির স্বাভাবিক ব্যপার। সামনে এরকম চ্যালেঞ্জ আমাদের মধ্যে আসতে পারে। এর বাইরে বহু রকম ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার আরও তীব্র হতে পারে। এসব মোকাবেলায় আমাদেরকে সক্ষমতার পরিচয় দিতে হবে। জাতীয় রাজনীতির ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে। আমরা যেনো যেকোনো চ্যালেঞ্জ ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে পারি। আমাদের নেতৃত্বকে বড় কোন ভূল করা যাবেনা। অতিউৎসাহ, হটকারিতা এবং অন্যদলের বা উদ্যোগের সাথে দ্বন্দ্ব, বিতর্কে লিপ্ত হওয়া থেকে আমাদের মুক্ত থাকতে হবে।
ধীরে সুস্থে হিসাব নিকাশ করে সামনে এগিয়ে চলাই হলো আমাদের প্রায়োরিটি। সাবধানে ও কৌশলে ভূমিকা রাখতে পারা হবে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আপাতত আমাদের দায়িত্ব।
আগামী দিনে আমাদের সামনে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো সংগঠন কে তৃণমূলে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত করা। নিজেদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও বুঝকে দৃঢ় করা। ঢাকা সহ সকল বড় শহর ও মহানগরী সংগঠনগুলো আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাই নগর সংগঠনের কাজের গতিবৃদ্ধি ও মজবুতির জন্য আমরা সাংগঠনিক বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন ও বাস্তবায়ন করব। সেক্ষেত্রে আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা বিশেষভাবে কাম্য। এছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন সেক্টরে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। দলের অর্থনৈতিক শক্তি-সমর্থ্য বাড়ানো গেলে অনেক কাজ সহজ হয়ে যাবে।
উম্মাহ২৪ডটকম: এফইউবি