সামান্থা পাওয়ার: গত চার বছর আগে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী যে ‘জাতিগত শুদ্ধি অভিযান’ চালায়, তাতে জোরপূর্বক উচ্ছেদ, নির্বিচার গণহত্যা আর যৌন সন্ত্রাসের শিকার হন অগণিত মানুষ। প্রতিক্রিয়ায় চীন তাদের প্রতিবেশী মিয়ানমার সরকারের পক্ষে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে, পশ্চিমা দেশগুলোও খুব বেশি এগিয়ে ছিল না। তাদের প্রতিবাদ ও নিন্দার ভাষায় ছিল আন্তরিকতার স্পষ্ট অভাব।
তাদের মতো সাহসহীন ছিলেন না ৪৭ বছরের আবুবকর তাম্বাদু। রুয়ান্ডা গণহত্যায় গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক কৌঁসুলি ছিলেন। এ ট্রাইব্যুনালে তিনি প্রসিকিউটরের বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনিই এখন গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী ও দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল।
২০১৮ সালে তিনি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে আসেন। সেখানে গণহত্যা থেকে বেঁচে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছে শোনেন; রক্তহীম করা দুঃস্বপ্নের মতো অত্যাচার-নির্যাতনের বিবরণ। প্রভাবশালী দেশগুলো যখন মিয়ানমারের গণহত্যায় তথাকথিত নিন্দা-জ্ঞাপন করছে, তখন তাম্বাদু এবং তার গাম্বিয়া সরকার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যা সংগঠনের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছিল।
- গুজব ছড়ানো মিথ্যার সমপর্যায়ের কবীরা গুনাহ
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্র সংকুচিত করছে করোনা
- ফেরাউনি জমানার পাপাচার এবং মহামারির ইতিবৃত্ত
সেই মামলায় আংশিক জয় হয়েছে গাম্বিয়ার। চলতি ২০২০ সালের জানুয়ারিতেই মিয়ানমার এবং দেশটির নেত্রী অং সান সূ চি’ বিরুদ্ধে রায় দেন আইসিজে বিচারকদের প্যানেল। সূ চি’কে মিথ্যাচারী অভিহিত করে আদালত রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারকে তার সব ক্ষমতা ব্যবহারের আদেশ দেন। একইসঙ্গে, অতীতের গণহত্যার ঘটনা আইসিজে’র অনুসন্ধানকারীরা তদন্ত করে দেখবে, বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।
জয় যে দেশটি পেল, প্রশ্ন জাগে তাকে ঘিরে। কেন আফ্রিকার মূল ভূখণ্ডের সবচেয়ে ছোট আয়তনের এ দেশটি পৃথিবীর আরেক প্রান্তে সংগঠিত গণহত্যার বিচার নিয়ে উদ্যোগ নিল? কেন তারা এই বিচার চাইতে গেল- যখন প্রতিবাদের ক্ষমতা বা বাঁধা দেওয়ার শক্তি থাকার মতো দেশগুলো নিশ্চুপ ছিল! স্বাভাবিক এটাই ছিল, তারা যদি এবিষয়ে অন্যদের মতোই অবজ্ঞা দেখাতো।
কিন্তু, এমনটা না হওয়ার কারণ, গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রীর জন্য রোহিঙ্গা গণহত্যা অনেকটা তার ব্যক্তিগত অনুভূতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। প্রায় দুই দশক ধরে নির্মম এক স্বৈরশাসকের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল দেশটি। ওই সময়ে বাইরের শক্তিগুলো চাপ প্রয়োগ করলে, আরও তাড়াতাড়ি নিষ্ঠুর শাসনের অবসান হতে পারতো। কিন্তু, তা হয়নি। অন্ধকার ওই সময়ে গাম্বিয়া একাই ছিল। ছিল অন্ধকার মহাদেশের এক কোণায় ভুলে যাওয়া কোনো নাম।
তবে এটা একমাত্র কারণ নয়। তাম্বাদু জানান, প্রধান কারণ; বিচারের উদ্যোগ নেওয়াটা সঠিক পদক্ষেপ ছিল, তাই কোনো দ্বিধা কাজ করেনি।
”আন্তর্জাতিক আইন শুধু ধনী এবং শক্তিশালী দেশের স্বার্থরক্ষার জন্য সংরক্ষিত কোনো বিষয় নয়। ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে আপনার দেশটিকে সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তিতে বলীয়ান হতে হবে, এমন ধারণা ভ্রান্ত। আমরা যা করেছি তা মানবতার স্বার্থে, মানবতার নামেই করেছি” তিনি বলেছিলেন। সূত্র- দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ড।
– সামান্থা পাওয়ার, জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ।
অনুবাদ: নূর মাজিদ
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ