।। মজিবুর রহমান মঞ্জু ।।
আজ শুক্রবার, পবিত্র দিন। এরকম পবিত্র দিনে মাওলানা শাহ আহমদ শফী ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রা-জিউন।
মৃত্যুর কোন ভাল দিন বা খারাপ দিন কি আছে? থাকতে পারে। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা অবস্থায় তাঁর বিদায় তাৎপর্যপূর্ণ। বেশ কয়েক বছর এবং বিশেষ করে গত ৩/৪ দিন তাঁর সম্পর্কে নানা রকম নেতিবাচক মন্তব্য চোখে পড়ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। অবশ্যই তিনি আলোচিত-সমলোচিত। মৃত্যুর পর মানুষের সমলোচনা আমাদের সমাজ-সংস্কৃতিতে ভাল চোখে দেখে না কেউ।
মাওলানা আহমদ শফী একজন খ্যাতনামা আ’লেম। হাদীস শাস্ত্রের শিক্ষক ও বোখারির বিশেষজ্ঞ তিনি। তাঁর লক্ষ লক্ষ ছাত্র দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে আছেন। তিনি বাংলায় ১৩টি এবং উদুর্তে ৯টি বই রচনা করেছেন। কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) এর সভাপতি ছিলেন তিনি। দেশের কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কাছে ‘বড় হুজুর’ হিসেবে পরিচিত আহমদ শফী।
২০১৩ সালে ১৩ দফা দাবীতে হেফাজত ইসলামীর আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি আলেম-ওলামাদের ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ রক্ষায় মাদ্রাসার হুজরাখানা ছেড়ে মাঠে নেমে এসেছিলেন। সরকার দাবী না মেনে হেফাজত ইসলামীর উপর রাষ্ট্রীয় দমন নিপীড়ন শুরু করলে তিনি কৌশলী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তাঁর এই ভূমিকা অনেকের দৃষ্টিতে ছিল আপোষকামী এবং অনাকাঙ্খিত।
আরও পড়তে পারেন-
- গুজব ছড়ানো মিথ্যার সমপর্যায়ের কবীরা গুনাহ
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্র সংকুচিত করছে করোনা
- ফেরাউনি জমানার পাপাচার এবং মহামারির ইতিবৃত্ত
তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, উলামাদের সাথে রাষ্ট্রযন্ত্রের মুখোমুখি ও মারমুখী অবস্থান দেওবন্দের ঐতিহ্য বিরোধী। তাঁর এই অবস্থান ও বক্তব্য নিয়ে হেফাজতে আভ্যন্তরীন বিরোধ বাড়ে এবং বিতর্ক তৈরী হয়। নিজ সন্তানের ভূমিকা নিয়েও তিনি বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন।
গত কয়েক বছর যাবত কওমী ডিগ্রীর স্বীকৃতি, ঢাকায় সমাবেশ ও সরকারের হস্তক্ষেপে এই বিরোধ আরও বিস্তৃত হয়। শেষ পর্যন্ত তা প্রকাশ্য ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও আন্দোলনে রূপ নেয়। অনেকের ধারণা, তাঁর মত একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমের প্রস্থান আরও সুন্দর মর্যাদাকর হতে পারত।
আজ মাওলানা শফীর পক্ষ-বিপক্ষ সকলেই খুব ব্যাথিত। নানা কারণে তা সকল পক্ষের জন্য অত্যন্ত কষ্টের কারণ হবে। গত কয়দিন যাবত যারা তাঁর সমলোচনায় মুখর ছিলেন তাঁরা সকলেই শোক প্রকাশ করছেন। তাদের ভাষা এখন অনেক সংযত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাঁর এই মৃত্যু আলেমদের ঐক্যকে আরও ব্যাহত করবে বলে আমার ধারণা।
ইতিহাস মাওলানা শাহ আহমদ শফীকে নানা মাত্রিক বিবেচনায় বিচার করবে। তার জ্ঞান সাধনা বলে তিনি ইতিহাসের অংশ হয়েছেন। দুনিয়া ও পরকালীন দুই প্রান্তের বিচারে আহমদ শফী সফল- এই ধারণা তাঁর সম্পর্কে আমার।
আমার ধারণা সত্য হোক। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সফলকামদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন। আমীন।
– মজিবুর রহমান মঞ্জু, সদস্য সচিব- এবি পার্টি।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ