মৃত ব্যক্তির ভালো কাজগুলো আলোচনা করার কথা বলা হয়েছে ইসলামে, সমালোচনা বা চোষ চর্চা নিষেধ করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০০)
ইসলামে মৃত ব্যক্তির দোষ চর্চা নিষিদ্ধ
হে মু’মিনগণ! তোমরা অধিক ধারণা হতে বিরত থাক। কতক ধারণা পাপের অন্তর্ভুক্ত। তোমরা অন্যের দোষ খোঁজাখুঁজি করো না, একে অন্যের অনুপস্থিতিতে দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো সেটাকে ঘৃণাই করে থাক। আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ খুব বেশি তাওবাহ কবূলকারী, অতি দয়ালু। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াতঃ১২]
যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়োনা। কর্ণ, চক্ষু, হৃদয় – ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে। [সূরা আল-ইসরা, আয়াতঃ৩৬]
মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা গ্রহণ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে। [সূরা কাফ, আয়াতঃ১৮]
আর অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত রয়েছে। কিরামান কাতিবীন (সম্মানিত লেখকদ্বয়)। তারা সব জানেন তোমরা যা করছো। [সূরা ইনফিতার, আয়াতঃ১০-১২]
উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা মৃতদেরকে গালমন্দ করবে না, কারণ তারা যে কর্ম করেছিল সেগুলোর কাছে তারা পৌঁছে গেছে। [বুখারী ]
হযরত ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের উত্তমভাবে স্মরণ করো। তাদের মন্দ বিষয়গুলোর আলোচনা থেকে বিরত থাকো। [মিরমিযী]
দোষ গোপন রাখা
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে বান্দা অন্য বান্দার দোষত্রুটি এ পার্থিব জীবনে গোপন রাখবে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন।’ (মুসলিম )।
হিংসা বিদ্বেষ প্রকাশ না করা
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাক। কেননা হিংসা মানুষের ভালো গুণসমূহ এমনভাবে ধ্বংস করে দেয়, যেমনিভাবে আগুন শুকনো কাঠ জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। (আবু দাউদ থেকে মিশকাতে)
মৃত ব্যক্তির সমালোচনা নয়, জানাযায় অংশ নেয়া
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হয়ে সালাতুল জানাযা আদায় করবে তার জন্য এক কীরাত পরিমাণ সওয়াব। কবর দেওয়া পর্যন্ত যে উপস্থিত থাকবে তার জন্য দুই কীরাত সওয়াব রয়েছে। জিজ্ঞেস করা হলো দুই কীরাত কতুটুক? নবীজি এরশাদ করেন, বিশাল দুইটি পাহাড় পরিমাণ সওয়াব। [বুখারী ও মুসলিম]
সামলোচনা নয়, মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত কামনা করা
হযরত বুরায়দা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা কবর যিয়ারত আমাদেরকে পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। [মুসলিম ]
হযরত ওসমান ইবনে আফ্ফান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মৃত ব্যক্তির কবর দেয়া সমাপ্ত হলে তার পাশে দাঁড়াতেন এবং বলতেন তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য মাগফিরাত কামনা করো। এবং তার জন্য দৃঢ় থাকার তাওফিক প্রার্থনা কর। কারণ তাকে এখন প্রশ্ন করা হচ্ছে। [আবু দাঊদ ]
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহর নবী ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সব ঈমানদারকে ক্ষমা করুন। ’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪১)
অন্য জায়গায় নূহ আলাইহিস সালামের এ দুআ বর্ণিত হয়েছে,‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পিতা-মাতাকেও এবং যে ঈমান অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে আর সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও। ’ (সুরা নুহ, আয়াত : ২৮)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন মানুষ মারা যায় তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমলের ফায়দা ভোগ করে—সদকায়ে জারিয়া; এমন জ্ঞান, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং ওই সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ১৬৩১) ##