নিজস্ব প্রতিনিধি :
ঈমানের প্রধান বিষয়ই হলো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ; অথ্যাৎ এক ‘ইলাহ’র ওপর বিশ্বাস। এই কালেমাটির অর্থ জেনে বুঝে মুখে উচ্চারণ করা, হৃদয়ে ধারণ করা এবং তার দাবি অনুযায়ী চলার নামই ঈমান।
মহান আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন শরীক নেই। তিনিই বিশ্বজাহানের স্রষ্টা ও প্রতিপালক। সবকিছু তাঁরই নিয়ন্ত্রণে। তাঁর নির্দেশিত পথে চলার মধ্যেই মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতে মুক্তি ও চিরশাস্তির জান্নাত লাভের নিশ্চয়তা । এর অন্যথা হলেই দুনিয়ায় সাময়িক সাফল্য লাভ করা হয়েছে মনে করা হলেও আখিরাতে চির জাহান্নামের অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ হওয়া অবধারিত।
অতএব ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমাটি মুখে উচ্চারণ যে কত বড় ঘোষনা সেটা বলারই অপেক্ষা রাখেনা। যুগে যুগে নবী রাসুলগনের দাওয়াতের মূলমন্ত্র ছিল ‘লাই ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।মুশরিকরা তাদের আগে থেকে চলে আসা বহু ইলাহর ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে জেনে সে কালেমাকে গ্রহন করেনি। আবার অনেকে গ্রহন করেছে।
আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) যখন ইসলামের দাওয়াত শুরু করেন তখন মক্কার মানুষও নাস্তিক ছিলনা। তারাও কিন্তু ইবাদাত করতো। তবে সেটা এক আল্লাহর নয়, বহু আল্লাহ বা তাঁর শরীকে বিশ্বাস করতো। এজন্যই তারা পবিত্র কাবাঘরে ৩৬০টি প্রতিমা স্থাপন করেছিল। মুহাম্মদ ( স.) যখন ‘ লা ইলাহা ইল্লাল্লহ’র দাওয়াত দেয়া শুরু করলেন তখন তারা ঠিকই বুঝে নিয়েছিল এই দাওয়াত গ্রহন করার মানে কী ? এজন্যই মক্কার কুরাইশরা তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল।
অতএব ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শুধু কোন আপ্ত বাক্য নয়, মুখে শুধু না বুঝে জপে যাওয়ার বাক্য নয়।
তবে হ্যাঁ, এই বাক্যটি শুধু মুখে উচ্চারণের মধ্যেও অনেক ফজিলতের কথা হাদীস শরীফে এসেছে। এই উচ্চারণ শ্রেষ্ঠ যিকির হিসেবেই গণ্য । আসলে এই বাক্যটির মধ্যে নিহিত
অর্থের কারনেই যে এটি উচ্চারণের মধ্যে এতো ফজিলত সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
তাই এই কালেমা উচ্চারণের সময় সকল ইলাহ ও মুশরিকী চিন্তা বাদ দেয়ার বিষয়টি মনের মধ্যে এনে, আল্লাহর হুমক অনুযায়ী জীবন পরিচালনার বিষয়টি সামনে রেখে উচ্চারণে সচেষ্ট হলে এর ফজিলতের সত্যিকার প্রতিফলন বাস্তব জীবনেও ঈমানদারগণ পাবেন আশা করা যায়।
আরও পড়তে পারেন-
- মহামারিকালেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অপরিবর্তনীয় থাকে কীভাবে?
- সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় রাসূলুল্লাহ (সা.)এর যুগান্তকারী ভূমিকা
- পাকিস্তান-ভারত-শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশে ট্রেনের ভাড়া বেশি
- হাদীসের আলোকে শ্রেষ্ঠ মানুষের ১০ বৈশিষ্ট্য
- রোহিঙ্গা সঙ্কটের ভিত্তিমূল অনেক গভীরে
‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হলো ঈমানের চাবি। এই কালিমা পাঠ করলে ঈমান মজবুত হয়। যে ব্যক্তি কালেমা পাঠ করে মৃত্যুবরণ করবে, ওই ব্যক্তি জান্নাতি হবে।
হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘জান্নাতের চাবি হলো এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রতিপালক নেই।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৩৬/২২১০২)।
হজরত ওসমান রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে হজরত রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র ঘোষণা দেয় এবং এরই উপর মৃত্যুবরণ করে, তবে অবশ্যই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম : ১/২৬)।
মুমিন বান্দার কাছে কালেমার জিকির সর্বত্তোম জিকির। ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র জিকিরে মুমিন বান্দার অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। যে ব্যক্তি বেশি বেশি কালেমার জিকির করবে ওই ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালা পরকালে জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দেবেন এবং আকাশের সব রহমতের দরজা খুলে দেবেন।
হজরত উবাদা ইবনে সামিত রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূল সা:কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এরূপ সাক্ষ্য প্রদান করে যে, ‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সা: আল্লাহর রাসূল। তার জন্য আল্লাহ জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন।’ (মুসলিম : ১/২৯)।
হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো বান্দা যদি ইখলাসের সাথে কালেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করে, তবে তার জন্য আকাশের দরোজাগুলো খুলে দেয়া হয়। (তিরমিজি : ৬৮)
হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে হজরত রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মুমূর্ষু ব্যক্তিদের কালেমার তালকিন করো।’ (মুসলিম : ১/৩০০)
হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তির শেষ কথা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হবে সে জান্নাতে যাবে।’ (আবু দাউদ : ২/৪৪৪) ##
উম্মাহ২৪ডটকম: এফইউবি