Home ইসলাম ছবিটির প্রতি চোখ পড়তেই হৃদয়ে ক্ষরণ হতে শুরু করে!

ছবিটির প্রতি চোখ পড়তেই হৃদয়ে ক্ষরণ হতে শুরু করে!

।। মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া ।।

কী আর বলব, কীভাবে মনের বেদনা প্রকাশ করব- চিন্তা করে কুল পাচ্ছি না। আমরা কোথায় যাচ্ছি? আমাদের গন্তব্য এখন কোন দিকে ফেরানোর চেষ্টা চলছে? কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন তাঁরা?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি দেখে অন্য সবার মতো আমিও হতভম্ব না হয়ে পরিনি। ছবিটির প্রতি চোখ পড়তেই হৃদয়ে ক্ষরণ বয়ে যেতে শুরু করে। অতিথিদের পিছনের ব্যানারে ‘খতমে বুখারী’ লেখা না থাকলে হয়ত কারো কপালে এ নিয়ে চিন্তার ও হতাশার এত গভীর রেখা ভেসে উঠত না।

‘খতমে বুখারী’ লেখা সম্বলিত ব্যানার ইঙ্গিত করে যে, দেশের কোন এক মাদরাসায় বছর ব্যাপী সিহাহ সিত্তার দরস হয়েছে। তার মধ্যে সর্বোচ্চ বিশুদ্ধ কিতাব বুখারী সমাপনী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণতঃ এ জাতীয় দোয়া মাহফিলে মুসলিম জনসাধারণ উপস্থিত হয়ে থাকেন, ধর্মীয় বিষয়ে আলেমদের উপদেশ বাণী শ্রবণের পাশাপাশি বরকতময় দোয়ায় শরীক হওয়ার জন্য। রাব্বে কারিমের শাহী দরবারে কবুলের প্রত্যাশায় আপন আপন মনোবাসনা বিনয়ের সাথে তুলে ধরেন।

[ দুই ]

দরসে খতমে বুখারী’র এ জাতীয় অনুষ্ঠানে মুসলিম সমাজের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুযুর্গ আলিমদের বিশেষ দাওয়াত দেয়া হয়। দোয়া কবুলে অন্তরায় উপকরণ-আয়োজন থেকে বিরত থাকা হয়।

সব মজলিসে সকলের নিমন্ত্রণ কখনো সমীচীন নয়। প্রত্যেক মজলিসের কিছু স্বকীয়তা থাকে। স্বকীয়তা বিনষ্টকারী পদক্ষেপ সর্বাবস্থায় পরিহার করতে হয়। মজলিসের ফযীলত ও গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়। মজলিসের গাম্ভির্যতা রক্ষায় শরীয়ত বিরোধী দূষিত বিষয়াবলী পরিত্যাগ করতে হয়।

ফযীলতপূর্ণ বরকময় মজলিসে যাকে তাকে নিমন্ত্রণ করা হয় না।

[ তিন ]

মৃণাল আর মহিলা সাংসদের দোষ দিয়ে কী লাভ? ওদের তো কিছু ছক আঁকা আছে। ওরা তো অনুপ্রবেশের নীল নকশায় অগ্রসর হয়। আমরা মৌলভীরা ওদের অনুপ্রবেশে মীর জাফরের ভূমিকায় কেন অবতীর্ণ হই? ধিক্কৃত তো তাঁরাই যারা ওদের অনুপ্রবেশের ময়দান হামওয়ার তথা উপযোগী করে দেয়।

এমন প্রতিষ্ঠানের কি প্রয়োজন, যেখানে স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্রতার উদ্যানে মাকাল বৃক্ষ রোপণ করা হয়? যে উদ্যান থেকে সুবাশ বিচ্ছুরিত হয় সেখানে কেন বিচ্ছুরিত হওয়ার বাতায়নগুলো রুদ্ধ করে দেয়া হবে? উদ্যানের পরিচর্যায় যদি ব্যর্থই হতে হয়, তাহলে মালি হতে কে বলেছে? মালি হয়ে উদ্যান ধ্বংসে সহযোগিতার কারণে স্রষ্টার দরবারে অপরাধী হতে হবে। অযোগ্য মালি হওয়া থেকে সুবাশ গ্রহণকারী হওয়াটাই অধিক শ্রেয়।

[ চার ]

কুরআনের পর সর্বোচ্চ বিশুদ্ধ কিতাবের খতম উপলক্ষে বিশুদ্ধতার অস্বীকারকারীকে অতিথি হিসেবে উপস্থিত করিয়ে কোন ধরনের ধর্মনিরপেক্ষতার পরিচয় দেয়া হল? এ ধরনের ধর্মনিরপেক্ষ দোয়া মজলিসের বৈধতা কতটুকু? তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে কি ধর্মনিরপেক্ষতার আবরণে আমাদের একান্ত ধর্মীয় বিষয় ও আমলসমূহকেও ধর্মহীন করার চেষ্টা শুরু হয়ে গেছে। এর এতে সহযোগী হিসেবে আমাদের কোন কোন আলেম ব্যবহৃত হতে শুরু করেছেন! চরম হতাশাজনক।

ধর্মনিরপক্ষ প্রমাণে আমাদের আরো কী কী দেখতে হবে আগামী দিনে, তা আল্লাহই ভাল জানেন।

[ পাঁচ ]

বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বেফাকসহ অন্যান্য যে বোর্ডগুলো আছে, তাদেরকে বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখার আহবান জানাচ্ছি। এ ছাড়াও সবগুলো বোর্ডের সমন্বয় গঠিত হাই আতুল উলইয়াও এ ব্যাপারে কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করি।

লেখক: পরিচালক- জামিয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদ, যুগ্মমহাসচিব- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।