Home পরিবার ও সমাজ ওয়েব সিরিজের নামে নোংরামি ও নগ্নপনার চর্চা বন্ধ করুন

ওয়েব সিরিজের নামে নোংরামি ও নগ্নপনার চর্চা বন্ধ করুন

।। শায়খ আহমাদুল্লাহ ।।

দেশের সভ্য, ভদ্র ও রুচিসম্পন্ন সাধারণ মানুষজনের মাথাব্যাথার নতুন নাম হলো ‘ওয়েব সিরিজ’। সাধারণ সমাজ এমনকি বিশেষ করে যুব সমাজের চরিত্র ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই তথাকথিত ওয়েব সিরিজ।

যেখানে দর্শকরা ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে নিজের ঘরে বসে স্মার্টফোন স্মার্ট টিভি,কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মাধ্যমে বিনোদনমূলক যেসব ধারাবাহিক ভিডিও হয়, সাধারণ অথে সেটাকে ওয়েব সিরিজ বলা হয়।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক আগে থেকেই ওয়েব সিরিজের প্রচলন থাকলেও বাংলাদেশে ২০১৭ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। সম্প্রতিক একটি ওয়েব সিরিজের নগ্ন-অশ্লীল দৃশ্য এবং সংলাপ গোটা দেশে সমালোচনার ঝড় তুলছে। এমন কি বামপন্থি অনেক মিডিয়াতেও এই নিয়ে রিপোর্ট হয়েছে।

গত ১৮ জুন দৈনিক যুগান্তরে ‘অশ্লীলতার অপর নাম ওয়েব সিরিজ’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ১৪ মার্চ সমকালে ‘কি আছে ওয়েব সিরিজে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিবিসি বাংলা’সহ অন্যন্য মিডিয়াতে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

এই প্রতিবেদনসমূহের সারসংক্ষেপ হলো- সাধারণ নাটক সিনেমাতে যেহেতু সেন্সর হয়ে থাকে, যে কারণে নির্মাতারা চাইলে যে কোন অশ্লীল দৃশ্য বা সংলাপ জুড়ে দিতে পারেন না। সেগুলো সেন্সর বোর্ডের কাঁচিতে কাটা পড়ে যায়। কিন্তু ওয়েব সিরিজে চাইলে কোন সংলাপ বা দৃশ্য সেন্সর ছাড়াই দর্শক-শ্রোতার কাছে তুলে ধরা যায়। সে সুবাদে নির্মাতারা ব্যবসার স্বার্থে অথবা বিশেষ কোন এজেন্ডার কারণে ইতিমধ্যেই এই সুযোগের অপব্যবহার শুরু করেছেন।

আরও পড়তে পারেন-

* ‘আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা পেতে হলে সঠিক আক্বিদা-বিশ্বাসে ফিরে আসা জরুরী’

* বিশ্বব্যাপী একই দিনে ঈদ উদযাপন চিন্তা মনগড়া ও শরয়ী সিদ্ধান্ত বিরোধী

* পবিত্র ঈদুল আযহা ও কুরবানীর ফাযায়েল ও মাসায়েল

* ইসলামের পথে আমার জীবনকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি: অভিনেত্রী এ্যানি খান

* মওলানা বরকতুল্লাহ আমাদের ইতিহাসের কে হন?

এ দেশের সাধারণ মানুষের চেতনাবোধ, বিশ্বাস, ঈমান-আমল, কৃষ্টি-কালচারকে ধ্বংসের জন্য ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কিংবা সংশ্লিষ্টদের মাত্রাহীন ব্যবসায়িক ধান্দার কারণে পর্দার অন্তরালের ইসলামবিদ্বেষী চক্র সুযোগ নিয়ে ওয়েব সিরিজে এমন কিছু অশ্লীল দৃশ্য এবং জঘন্য সংলাপ জুড়ে দিচ্ছেন, যেগুলো এ দেশের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, কালচারের সঙ্গে মোটেই যায় না। বরং কোন কোন ওয়েব সিরিজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এত নোংরামো দৃশ্য এবং অশ্লীল সংলাপ রয়েছে, যৌনতা দিয়ে পরিপূর্ণ রয়েছে, যেগুলো মুখে উচ্চারণ করা দূরের কথা, গণমাধ্যমগুলো তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করতে ইতস্ত বোধ করেছেন।

বিভিন্ন আপত্তিকর ও জঘন্য দৃশ্য এবং সংলাপে ভরপুর এ সমস্ত ওয়েব সিরিজ বাংলাদেশে যারা সম্প্রচার করছেন, তারা মূলত: কিছু অর্থ বা ব্যক্তি স্বার্থের জন্য নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ধ্বংসের এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজটাই এগিয়ে নিচ্ছেন- বললে অত্যুক্তি হবে না।

আমরা সকলেই জানি, বর্তমানে আমরা একটি ভয়াবহ মহামারির মধ্য দিয়ে সময় পার করছি। জুলুম, অত্যাচার ও পাপাচার সমাজে বিস্তার করলে মহামারির মতো আযাব অবতীর্ণ হয় বান্দাকে সতর্ক করতে। অথচ এমন সঙ্কটময় সময়ে এসব অশ্লীল ওয়েব সিরিজের বিস্তার মহামারির ভয়াবহতাকে আরো ডেকে আনার শামিল।

সুতরাং মহামারির এই কঠিন ভয়াবহতা থেকে দেশ ও জাতিকে আল্লাহর ক্রোধ থেকে রক্ষার জন্য ওয়েব সিরিজগুলো বন্ধ করতে সাধারণ নাগরিকের জায়গা থেকে আমাদের প্রত্যেকের কথা বলা দরকার। কারণ, পাপাচারের এরূপ ভয়াবহ বিস্তারে মহামারির মতো আরো নানা বিপদে পুরো দেশ ও জাতি নিমজ্জিত হওয়ার সমূহ আশংকা।

নারীর প্রতি পাষবিক নির্যাতন, ধর্ষণ এমন সব লোহমর্ষক ঘটনার কথা আমরা কয়দিন পর পর মিডিয়া মারফতে জানতে পারি, যা জাতি হিসেবে আমাদের মাথা অবনত করে দেয়।

আমরা প্রায় শুনতে পাই, মাদকের করাল থাবায় আমাদের সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, পরিবারগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, যুব সমাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের অভিভাবক মহল চরম দু:শ্চিন্তা ও হতাশার মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন। অথচ তথাকথিত ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে কিশোর-যুবকদেরকে এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ডের প্রতি সুড়সুড়ি দিচ্ছে। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে ব্যক্তি অধিকার বলে শেখাচ্ছে। যুবকদের পাষবিক শক্তিকে জাগ্রত করে তুলছে এবং যৌন উম্মাদনা তাদের মাধ্যে সৃষ্টি করছে, তাদেরকে অশ্লীল বাক্য আলাপ শিখানো হচ্ছে। এমনকি অধিকাংশ ওয়েব সিরিজে ধুমপান এবং নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার খুব স্বাভাবিকভাবে দেখানো হয়ে থাকে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

একদিকে অশ্লীল ওয়েব সিরিজ চলবে, অপরদিকে আমরা ধর্ষণ বন্ধ করার জন্য এবং নারীর প্রতি পাষবিক নির্যাতন থামানোর জন্য, এমনকি মদ তথা নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার সমাজ থেকে দূর করার জন্য আহ্বান তুলব, এটা তো স্পষ্ট স্ববিরোধী ও সাংঘর্ষিক অবস্থান।

আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “লা তাক্বরাবুয যিনা”। অর্থাৎ- তোমরা যিনার ধারে কাছেও যেও না। কারণ, আল্লাহ তায়ালা জানেন, মানুষ যদি যেনার কাছাকাছি যায়, তাহলে তারা যেনায় নিপাতিত হয়ে যায়। যে কারণে অনেক আগে থেকে যেনার প্রতি উদ্বুব্ধ করে এমন কর্মকাণ্ড বাদ দিতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে।

অতএব, এ সমস্ত ওয়েব সিরিজের প্রচলন যদি আমাদের সমাজে বন্ধ করা না হয়, তাহলে সমাজ এমনিতেই ধ্বংসের ধারপ্রান্তের উপনিত হয়েছে এবং আরও ধ্বংসের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। আমাদের পাশের দেশ ভারতে পর্যন্ত এরকম অনেকগুলো অশ্লীল ওয়েভ সিরিজ বন্ধের ঘোষণা এসেছে সে দেশের কোর্ট থেকে। সুতরাং, আমাদের দেশেও প্রচলিত আইন অনুযায়ী এ সমস্ত ওয়েব সিরিজগুলোকে বন্ধ করা সহজ এবং সে সাথে আমাদের প্রত্যেকে যে যার জায়গা থেকে এগুলো বন্ধের আহ্বান করা উচিত এবং দাবি তোলা উচিত।

পর্ণোগ্রাফি আইন ২০১২ এর সংজ্ঞায় উল্লেখ করা হয়েছে, পর্ণোগ্রাফি মানে- যৌন উত্তেজনার পর কোন অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গ-ভঙ্গি, নগ্ন-অর্ধনগ্ন, নৃত্য, অডিও-ভিডিও চিত্র, স্থির চিত্র, গ্রাফিক্স বা অন্য কোন উপায়ে ধারণকৃত প্রদর্শনযোগ্য এবং যার কোন শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই।

এই সংজ্ঞার আলোকে যদি কেউ কোন প্রকার পর্ণোগ্রাফি সম্প্রচার করে অনলাইনে অথবা অফলাইনে, তাহলে সে ক্ষেত্রে এ আইন অনুযায়ী সর্ব্বোচ্চ দুই থেকে সাত বছরের জেল এবং সর্ব্বোচ্চ ১২ লক্ষ টাকা অর্থ দন্ডের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও সাধারণভাবে অশ্লীলতার আইন ছাড়া আরো বিভিন্ন ধারা আমাদের সংবিধানে রয়েছে।

একদিকে মুসলিম সমাজ বিরোধী এসব ওয়েব সিরিজ আমাদের যুব সমাজকে শেষ করবে, আমাদেরকে ধ্বংস করবে- সে জায়গা থেকে আমাদের প্রতিবাদ করা উচিত। অপরদিক থেকে আমাদের প্রচলিত সংবিধানেরও এটি লংঙ্ঘন। সব মিলিয়ে এই অনাচারের বিরুদ্ধে প্রত্যেকে যার যার জায়গা থেকে প্রতিবাদ করা জরুরী।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের জোরালো আবেদন থাকবে, এই অনাচার বন্ধ হোক এই অশ্লীলতা বন্ধ হোক, এই বেহায়াপনা এবং নির্লজ্জতার চর্চা বন্ধ হোক। তাতে আমরা সবাই সুরক্ষিত থাকব এবং গোটা সমাজ সুরক্ষিত থাকবে। আল্লাহ সুবনাল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সকলকে সব ধরনের অনাচার থেকে হেফাজতে রাখুন, নিরাপদে রাখুন। আমীন।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।