।। এইচ.এম.আবূ সালেহ ।।
২০১৯ এর ডিসেম্বর থেকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে কোভিড-১৯ নামের ভাইরাস। এটি একটি ক্ষুদ্র অনুজীব। যা বিশেষ ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র ছাড়া মানব দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না। অথচ এই অনুজীবের অদৃশ্য আক্রমণ ও সংক্রমণে বিশ্ব আজ জর্জরিত ও বিধ্বস্ত। ধনী-গরীব, রাজা-রানী, ছোট-বড় কাউকেই সে ছাড় দিচ্ছে না। আমাদের ক্ষুদ্র আয়তনের বাংলাদেশের উপরেও তার থাবা বিস্তারিত হচ্ছে দিনে দিনে। মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। মূলত: এই নোভেল করোনা বা কোভিড-১৯ এর নিজস্ব কোন শক্তি নেই। সে নিজে নিজে সৃষ্ট নয়। সে নিজ শক্তিতে একজন থেকে অন্যজনে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে সংক্রমিত হতে পারে না। তার স্থানান্তর বা ছড়িয়ে পড়ার জন্য কোন যানবাহন লাগছে না।
বস্তুত: এই অভিনব এবং অভূতপূর্ব ভাইরাসটি সর্ব্বোচ্চ ক্ষমতাধর, একচ্ছত্র প্রতাপ ও প্রতিপত্তির অধিকারী, একমাত্র স্রষ্টা, আশ্রয়দাতা ও রক্ষাকারী মহান আল্লাহ তা’য়ালার সৃষ্টি করা ক্ষুদ্র কণা। যার দ্বারা তিনি সমগ্র বিশ্বকে অল্প সময় ধরাশায়ী করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে- বল তো, সমগ্র সৃষ্টিকে প্রথমবার কে সৃষ্টি করেছেন? অতঃপর পুর্নবার কে সৃষ্টি করবেন? কে তোমাদেরকে জমীন এবং আসমান থেকে রিজিক (জীবন উপকরণ) দান করেন? এসবে তার সাথে অন্য কোন মাবুদ (অংশিদার) আছে কি? (নেই) হে রাসূল! আপনি বলে দিন অবিশ্বাসীদেরকে, তোমরা যদি তোমাদের কথায় সত্যবাদী হও তাহলে তোমাদের দলীল উপস্থাপন করো। (সূরা-নামল- ৬৪)।
আরও পড়তে পারেন-
ইসলাম গ্রহণ করায় সিলভিয়া ইতালিয়ান চরমপন্থীদের বিদ্বেষের শিকার হন
ফিলিস্তিনের কোরআনে হাফেজা চার যমজ বোনের প্রশংসায় মুসলিম বিশ্ব
ভারতের মতো শ্রীলঙ্কাও মুসলমানদেরকে কলঙ্কিত করতে করোনভাইরাসকে হাতিয়ার করছে
ঘৃণা-বিদ্বেষ নয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট থাকুক
উলামায়ে কেরাম পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘বিবর্তনবাদ’ শিক্ষা বাতিলের দাবি কেন তুলেছেন?
আরো ইরশাদ হয়েছে, কাফের মুশরিকরা যখন কোন কল্যাণ প্রাপ্ত হয় তখন বলে, এতো আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে! আর যদি তারা কোন ক্ষতির সম্মুখীন হয়; বলে- এটা তোমার (মুহাম্মদ সা: এর) পক্ষ থেকে! আপনি বলুন, ভালো এবং মন্দ সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। (সূরা নিসা- ৭৮)।
এখন প্রশ্ন হলো, কেন এই ক্ষতি মন্দ বা বিপদ স্রষ্টার পক্ষ থেকে আসে? কেন তিনি বিশ্বময় করোনাভাইরাস বিস্তিীর্ণ করেছেন? পৃথিবীময় কেন এই মহাবিপদ এবং বিপর্যয় পর্যূদস্ত করছে দূর্বল, কবল সকলকে?
এই প্রশ্নের উত্তরও তিনি দিয়েছেন কুরআনে কারীমে, যা এক চিরন্তন আসমানী কিতাব, যাতে রয়েছে সব প্রশ্নের-জবাব। বিপদ থেকে উত্তরণের সহজ সুন্দর পথের নির্দেশনা।
ইরশাদ হয়েছে- ‘পৃথিবীর স্থ’লভাগে এবং জলভাগে ছড়িয়ে পড়েছে মহাবিপর্যয় (মহা দূর্যোগ) মানুষের কৃতকর্মের কারণে। যাতে করে মহান স্রষ্টা তাদের (অসৎ কর্মে নিমজ্জিত হওয়া ব্যাক্তিদের) কিছু অসৎ কর্মের স্বাদ অস্বাদ করাতে পারেন। আর তারা অসৎ ও স্রষ্টার অসন্তুষ্টির পথ থেকে ফিরে আসে। (সূরা রুম- ৪১)।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- তোমরা তোমাদের অপরাধের জন্য তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। অত:পর তাঁর দিকেই ধাবিত হয়। (সূরা হুদ)।
তিনি আরো ইরশাদ করেছেন- আর আমি নাফরমানদের বড় শাস্তি প্রদানের আগে, ছোট শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাই, যাতে তারা অপরাধ কর্ম থেকে (স্রষ্টার অবাধ্যতা থেকে) ফিরে আসে। (সূরা সিজদা- ২১)।
উল্লিখিত আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট যে, পৃথিবীবাসীর তথা আমাদের কৃতকর্মের ফসল হিসেবে আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের প্রতি এই ভয়াবহ মহামারি চাপিয়ে দিয়েছেন। এর থেকে মুক্তির একমাত্র পথ সব ধরনের অন্যায়-অপরাধ, তথা স্রষ্ট্রার নির্দেশ বিরোধী কর্মকান্ড মদ, জুয়া, মিথ্যা, প্রতারণা, ত্রাণের মালপত্র লুটপাট, ব্যভিচার, ধর্ষণ, জুলুম, অত্যাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার, ইত্যাদির মতো অপরাধ থেকে এক্ষুণি বিরত হওয়া। সেই সাথে পূর্বে কৃত অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তাঁর কাছে একান্ত মনে ক্ষমা চাওয়া এবং পাওনাদারদের হক্ব তাকে ফিরিয়ে দেওয়া।
– মাওলানা আবু সালেহ, সিনিয়র শিক্ষক- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা।
উম্মাহ২৪ডটকম:এমএমএ
উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com