আসমানী গজব বা আল্লাহ প্রদত্ত বালা-মুসিবত থেকে বাঁচার আসল ও একমাত্র তরিকা হচ্ছে- অতীতের ভুল-ত্রুটি থেকে ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর হুকুম পালন ও ইবাদত-বন্দেগী এবং আনুগত্যের মাধ্যমে রব্বে কারিমের সাথে সম্পর্ক কায়েম করা। কারণ, আল্লাহ্ পাকের আযাব-গজব আল্লাহর নাফরমানির কারণেই এসে থাকে। আল্লাহর গজবের মোকাবেলা করার ক্ষমতা পৃথিবীর কারো নেই।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَكَمْ قَصَمْنَا مِن قَرْيَةٍۢ كَانَتْ ظَالِمَةً وَأَنشَأْنَا بَعْدَهَا قَوْمًا ءَاخَرِينَ
অর্থাৎ- “আমি (আল্লাহ) কতো জনপদকে ধ্বংস করেছি- যার অধিবাসীরা ছিল পাপিষ্ট এবং তাদের পর সৃষ্টি করেছি অন্য জাতি”। (সুরা-আম্বিয়া, আয়াত-১১)।
وَكَم مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا فَجَاءهَا بَأْسُنَا بَيَاتًا أَوْ هُمْ قَآئِلُونَ
অর্থাৎ- “অনেক জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি। তাদের কাছে আমার আযাব রাত্রি বেলায় পৌঁছেছে অথবা দ্বিপ্রহরে বিশ্রামরত অবস্থায়”। (সুরা-আরাফ, আয়াত-৪)।
فَمَا كَانَ دَعْوَاهُمْ إِذْ جَاءهُمْ بَأْسُنَا إِلاَّ أَن قَالُوا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ
অর্থাৎ- “যখন তাদের কাছে আমার আযাব উপস্থিত হয়, তখন তারা একথাই বললো যে, নিশ্চয় আমরা অত্যাচারী ছিলাম। (সূরা- আরাফ, আয়াত-৫ )।
আল্লাহর আযাবে অনেক জনপদ, অনেক জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের উপর আযাব এমন সময় আসছে যে, তারা রাতে শুয়ে ছিল বা দিনের বেলা কায়লুলা করতে ছিল। এ আযাবের মুকাবেলা করার মতো শক্তি তাদের ছিল না। তারা কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে শুধু একথাই বলেছে যে, আমরা অত্যাচারী, গুনাহগার, সিমালঙ্ঘনকারি। এটুকু বলা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি।
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন-
অর্থাৎ- “আমি প্রত্যেককেই তাদের অপকর্মের কারণে পাকড়াও করেছি। তাদের কারো প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচন্ড বাতাস, কাউকে দিয়েছি বজ্রপাত, কাউকে আমি বিলীন করে দিয়েছি (জমিনে) ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছি নিমজ্জিত। মহান আল্লাহ পাক কারো প্রতি জুলুম করেন নাই। বরং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করেছে”। (সুরা-আনকাবুত, আয়াত-৪০)।
আল্লাহর নাফরমানি যারা করেছে, তাদেরকে তাদের গুনাহের কারণে আল্লাহ পাকড়াও করেছে এবং বিভিন্ন প্রকারের আযাব-গজব দিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অত্যচার নয়। তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচার করেছে। এটা তাদের প্রাপ্য। নিজেরা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে পাপ অন্যায়, অত্যচারে লিপ্ত হয়েছে। যার কারণে আল্লাহ তাদের উপর মুসিবত দিয়েছেন। যেমন কর্ম তেমন ফল। আল্লাহ তায়ালা কখনো কারো উপর বেইনসাফ করেন না। আল্লাহ তো রাহীম, কারীম ও ইনসাফগার।
আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন-
وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ
অর্থাৎ- “তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন। (সুরা- শুআরা, আয়াত-৩০)।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ‘উম্মত! তোমরা আমার নিকট থেকে চারটি জিনিস নিয়ে যাও। এই চার জিনিসের উপর ভিত্তি করে তোমরা তোমাদের যিন্দেগী পরিচালিত করতে পারলে, তোমরা আল্লাহর মাহবুব হতে পারবে। তোমাদেরকে কেউ কিছু করতে পারবে না।
১। “মিথ্যা বলবে না, সব সময় সত্য কথা বলবে”। আজ আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সবই চলছে মিথ্যার উপর। সর্বত্র মিথ্যার সায়লাব। সর্বনিম্ন শ্রেণী থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ শ্রেণী পর্যন্ত মিথ্যা আর মিথ্যা। পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে যে, মিথ্যা ছাড়া কোনো কাজই চলে না।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- তোমরা কাঁচা পিয়াজ খেয়ে মসজিদে যাবে না। কারণ, তাতে রহমতের ফেরেশতা কাছে আসে না। আর মিথ্যা এত জঘন্য যে, একটা মিথ্যা কথার দ্বারা ফেরেশতা তিন মাইল দূরে চলে যায়। হুজুর (সা.) আরো বলেছেন- সত্য কথা বলো, চাই তোমার জীবন চলে যাক।
২। “কেও কাউকে ধোঁকা দেবে না”। আজ আমাদের সমাজে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না ধোঁকাবাজির কারণে। সমাজ ও রাষ্টের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধোঁকা। নেতা কর্মিকে ধোঁকা দেয়, কর্মি নেতাকে ধোঁকা দেয়। ক্রে তা বিক্রেতাকে ধোঁকা দেয়, বিক্রেতা ক্রেতাকে ধোঁকা দেয়। মালিক শ্রমিককে ধোঁকা দেয়, শ্রমিক মালিককে ধোঁকা দেয়। কোন সেক্টরই ধোঁকা থেকে মুক্ত নয়।
৩। “চরিত্র ভালো করো, সুন্দর করো। আর চরিত্র ভালো ও সুন্দর হয়, হায়া-লজ্জার দ্বারা”। আজ সর্বত্র বেহায়া, বে-পর্দেগী, উলঙ্গপোনা। ৯২% মুসলমান অধ্যুষিত দেশ আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে কারা এ বেহায়াপনা ও নির্লজ্জতার দিকে ধাবিত করল? দেশের সর্বত্র বেপর্দা বেহায়াপনার সয়লাব। আমার দেশের মেয়েদের জামা-কাপড় দিন দিন খাটো হচ্ছে, অশালীন হচ্ছে। তাদের চলা ফেরা অশ্লীল। আজ যুবক-যুবতিদের চরিত্রকে ধ্বংস করার সকল হাতিয়ার সাধারণ হয়ে গেছে। মুসলিম মেয়ে ছেলেদের এ বেহায়াপনা ও নির্লজ্জতার কারণে আল্লাহর রহমত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
৪। “হালাল খাও, হালাল কামাও। হারাম কামাই আর হারাম খাওয়ার কারণে রক্ত-মাংশ হারাম হয়ে যায়। ইবাদত কবুল হয় না, দোয়া কবুল হয় না”। [চলবে]
– আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীব, প্রিন্সিপাল- জামিয়া কাসিমিয়া আশরাফুল উলুম ঢাকা, যুগ্নমহাসচিব- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, সহ-সভাপতি- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।
উম্মাহ২৪ডটকম:এমএমএ
উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com