সংক্রমণের আশঙ্কার কারণে লকডাউনের উদাহরণ হল এই যে, পুলিশ এক গ্রামের সবাইকে জেলে ঢুকিয়ে দিল। পুলিশকে প্রশ্ন করা হল- আপনারা এই কাজ করলেন কেন?
তারা উত্তরে জানালেন, আশঙ্কা আছে তারা চুরি করতে পারে। বলুন, আদালতে এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য হবে? নিশ্চয়ই বলবেন, না। বরং পুলিশের এই কাজকে অপরাধ বলেই গণ্য করা হবে। আর শাস্তি দিতে হয় অপরাধীকে, অপরাধের আশঙ্কার উপর ভিত্তি করে আগাম শাস্তি দেওয়া অপরাধ বটে।
সুতরাং, কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া কেবল আশঙ্কার উপরে কোটি কোটি সুস্থ মানুষের রুজি-রোজগার বন্ধ করার যৌক্তিকতা থাকতে পারে না।
এক সুস্থ লোক বসে নামাজ পড়ছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি কিয়াম ও রুকু ছাড়া এভাবে নামাজ পড়ছেন কেন? সে উত্তর দিল, আশঙ্কা আছে যে, কোমরে ব্যাথা হতে পারে। বলুন- তার নামাজ হবে? নিশ্চয়ই বলবেন, হবে না।
আরও পড়তে পারেন-
যুগে যুগে মহামারীর ইতিকথা
করোনা মহামারি, দুষ্কর্ম ও দুর্নীতি
মহানবী (সা.)এর মহিয়সী সহধর্মীনীগণ
গুগলের ম্যাপসের যে ব্যবহার জানা থাকা চাই
অমুসলিমদের সাথে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি
মুসলমানদের উপর পাঞ্জেগানা নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে পড়া ওয়াজিব। জামাত তরক করার ভয়াবহ পরিণামের কথা অনেক হাদীসেই বর্ণিত রয়েছে। যে জামাতে নামাজ পড়ে না, তাকে হাদীসে মুনাফিকও বলা হয়েছে। হাদীস-
আর জুমার নামাজ তো ফরজ। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যারা জুমায় আসে না আমার মনে হচ্ছে তাদের ঘর পুড়িয়ে দেই।
মুসলমানদের জন্য জামাতে নামাজ পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক মুসলমানের এক ওয়াক্ত জামাতে নামাজ পড়া সমস্ত মন্ত্রী ও সচিবদের এক বছরের অফিস করা থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীতে এমন কোন সরকার আছে, যে তার মন্ত্রী ও সচিবদের এক বছরের অফিস বন্ধ করে দিতে পারবে? তাহলে কোন সাহসে বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রনায়করা দেশে দেশে কোটি কোটি মসজিদে লকডাউন করে মুসলমানদের জামাত বন্ধ করল?
আসলে তাদের কাছে মসজিদ মাদরাসার কোন গুরুত্বই নেই। তারা মসজিদ মাদরাসাকে এক সাব রেজিস্ট্রার অফিসের মত মনে করে।
করোনার সংক্রমণের শ্লোগান আছে, কিন্তু তার কোন বাস্তবতা নেই। আর অবিশ্বাসীদের কুফরি ভাইরাসে মুসলমানরা সংক্রমিত, কিন্তু তার কোন শ্লোগান নেই। বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে যা হচ্ছে, এসব কুফরি ভাইরাসের আক্রান্তের ফসল।
পানাহার, ইস্তেঞ্জা ও ঘুম নিদ্রা যেভাবে মানুষের ব্যক্তিগত প্রয়োজন, ঠিক সেভাবে জমাতে নামাজ ও জুমাও প্রত্যেক মুসলমান পুরুষের ব্যক্তিগত প্রয়োজন। কোন উন্নত দেশে হয়তো বা হতে পারে, তবে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনও এই সিস্টেম চালু হয়নি যে, সারা মহল্লার পক্ষ থেকে দশজনে পেশাব পায়খানা সেরে নিবে, অন্য দশজন গ্রামের পক্ষ থেকে পানাহার করে নিবে, প্রয়োজনে আরো দশজন সবার পক্ষ থেকে ঘুমানোর প্রয়োজনটাও সেরে নিবে।
তবে নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। আমাদের দেশ এখন আর পূর্বের মত নেই। এখন আলহামদুলিল্লাহ, দেশ ডিজিটাল সিল-পাটের উপর উঠে পড়েছে। এখন কম পরিশ্রমে কাজ হবে অনেক। এক বছর পূর্বে পাঁচ-দশজনে পুরো এলাকার পক্ষ থেকে ভোট দিয়ে সবাইকে দায় মুক্ত করেছে। আজ এক বছরের মাথায় দেশ এতো দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে যে, এখন মাত্র পাঁচ-দশজন জামাত ও জুমা পড়ে নিলে সারা মহল্লার লোকজনকে জামাত জুমা আদায়কারী বলে গণ্য করা হয়।
যদি এই গতিতে দেশ অগ্রসর হতে থাকে, তাহলে এক দুই বছরের মধ্যে পেশাব-পায়খানা, অজু-গোসল ও ঘুম-নিদ্রা সবই পাঁচ দশ জনে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে সেরে নিতে পারবে বলে আশা করা যায়।
শুধু দুনিয়াদারীর দিক থেকে নয়, দ্বীনদারীর ক্ষেত্রেও সরকার অনেকটা সফল যে, তারা উলামাদের মধ্য থেকে বা-কামাল কিছু উলামাদেরকে সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন যে, যাদের ইলমী যোগ্যতা নিশ্চয়ই প্রশংসনীয়। সরকারী যেকোনো ফরমান জারী হওয়ার সাথে সাথে উক্ত উলামারা দলীল আদিল্লা দ্বারা সরকারী ফরমানকে ইসলামাইজড্ করার প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সবাই এই ব্যাপারে একমত যে, তারা আবুল ফজল ও ফয়েজীর মত আকাবিরের জিন্দা নমুনা।
খবর পেলাম যে, সরকারের সাথে যাওয়া আসার কারণে তাঁরা ওফাদারীর ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। বেআরামটা বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করে তাদের চক্ষু এফেক্টেড হওয়ায়, নফীকে ইছবাত ও ইছবাতকে নফী দেখছেন। ওফাদারীর ভাইরাস এখন ইছবাত নফীর রূপধারণ করেছে।
আল্লাহ তা’আলা তাঁদেরকে শিফায়ে কামেলা, আজেলাহ, দায়েমাহ দান করুক। আমিন।
— আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক, প্রখ্যাত আলেমে-দ্বীন, ভূগোল-বিশারদ, সহসভাপতি- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবং শায়খুল হাদীস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা।
উম্মাহ২৪ডটকম: আরএএম
উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com