চৌধুরী আতিকুর রহমান: ভারতের লক্ষ্ণৌয়ের ঝুলেলাল ময়দানে গত ১০ মার্চ জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের উত্তর প্রদেশ রাজ্য সম্মেলনে আল্লামা মাহমুদ মাদানী বলেন, তরবারি দিয়ে নয়, ভারতে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে আল্লাহর ওলি-আওলিয়াদের দাওয়াত ও তাবলীগের দ্বারা’। তিনি দেশের প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে ঐক্য প্রদর্শনের জন্য তাদের দাবিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে ক্রমাগত বাড়তে থাকা সাম্প্রদায়িকতা ও আদর্শগত যুদ্ধের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওযা হয়েছে যে, (১) দেশের দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রদর্শনের জন্যে তাদের উৎসবে একত্রে খাদ্যগ্রহণ করা হবে। (২) ১৪-ই এপ্রিল আম্বেদকরের জন্মদিনে সমস্ত দেশ জুড়ে দলিত সম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্মতা প্রদর্শন করা হবে। (৩) দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একত্রে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ও আদর্শগত লড়াই চালানো হবে। (৪) সরকার বা বিচারব্যবস্থার যে কোন ব্যক্তিগত আইনে নাক গলানো সহ্য করা হবে না এবং এর বিরুদ্ধে জমিয়ত শেষ নিঃশ্বাস ফেলা পর্যন্ত লড়ে যাবে।
ঝুলে লাল ময়দানে বুদ্ধ গয়ার বৌদ্ধ মোহন্তসহ বিভিন্ন ধর্মের অতিথি এবং প্রায় ১ লাখ দর্শক-শ্রোতার সামনে জমিয়ত উলেমা ই হিন্দের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আল্লামা মাহমুদ মাদানী বলেন, মুসলিমদের কারও থেকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তারা সমনাগরিক এবং অন্যান্য ধর্মীয় বিশ্বাসীদের মতই তাদেরও সমানভাবে ধর্মপালনের অধিকার আছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শরীরে এই দেশের ডিএনএ বাহিত হচ্ছে এবং আমরাই দেশের আদি ও প্রকৃত বাসিন্দা। তিনি আরও বলেন, আমরা দুর্ঘটনাবশতঃ নয়, এই দেশে থাকাটা স্বইচ্ছায় পছন্দ করেছি, ইসলামের নামে তৈরী পাকিস্তানে চলে যাইনি। আমরা থেকে গিয়েছি। কারণ, আমরা পারস্পরিক মূল্যবোধ ভাগ করে নিতে চেয়েছি এবং সহাবস্থানের জাতীয়তাবোধ মেনে নিয়েছি। এখন কেউ যদি এই সহাবস্তানের জাতীয়তাকে আঘাত করতে চায়, তার বিরুদ্ধে আমরাই প্রথম ব্যক্তি প্রাণপণে লড়াই করব।
আমরা দেশভাগের সময় আমাদের ধর্মের অভ্যন্তরে গজিয়ে ওঠা সাম্প্রদায়িক ভাবনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। তার জন্যে তৎকালে আমাদের বড়দের গালাগালি শুনতে হয়েছিল। একইভাবে যারা আমাদের জাতপাত ও বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে ভাগ করতে চাইবে, সেই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধেও লড়ব।
আল্লামা মাহমূদ মাদানী মুসলিমদের কাছে আবেদন রেখেছেন, “আপনারা আবেগপ্রবণ হবেন না, বরং ধৈর্য ধরুন। কারণ, আল্লাহ বলেছেন- তিনি ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন”। তিনি বলেন, ভারতবর্ষে ইসলাম ছড়িয়েছে ওলি-আওলিয়াদের ভালোবাসা, ভালো ব্যবহার, সহনশীলতার মাধ্যমে, মুসলিম শাসকদের জোর-জবরদস্তির জন্যে নয়।
তিনি আরও বলেন প্রকৃত ইসলাম সহনশীলতা ও সহমর্মিতার উপর নির্ভর করে, সহিংসতার উপর নয়। ইসলাম ও সহিংসতা এক জায়গায় থাকে না।
আল্লামা মাদানী ছাড়াও এই সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, উত্তরপ্রদেশ জমিয়তের প্রেসিডেন্ট মাওলানা মতিনুল হক কাশেমি, দারুল উলুম নাদওযাতুল উলামা, লক্ষ্মৌয়ের রেক্টর শহিদুর রহমান আজমি, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ গবেষণা সংস্থার ভদ্র শান্তি মিত্র জি, দলিত নেতা প্রকাশ আম্বেদকর, স্বামি অগ্নিবেশ, আজমত হুসেন খান গয়া, শিখ নেতা বাগ্গা জি, লক্ষ্মৌর মহন্ত দেবগিরি, মাওলানা নিয়াজ আহমেদ ফারুকি, মাওলানা আব্দুল বাতেন বারানসি, মাওলানা মুফতি সালমান মনসুরপুরী এবং আরও অনেকে। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিত্ব করেন জমিযত উলেমা ই হিন্দের রাজ্য সভাপতি মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।