।। শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক ।।
বর্তমানে করোনা থেকে পরিত্রাণের ব্যাপারে মুসলমানদের আচার-আচরণে মনে হয় যে, আমরা ‘আল্লাহর হুকুমে সব কিছু হয়’ এটা যেন বিশ্বাস করছি না। অমুসলিমরা যা করছে আমরাও সেটাই করে যাচ্ছি।
একটুও ভাবলাম না যে, তারা অমুসলিম, তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না এবং তারা উন্মুক্ত, তাই তারা যে কোন কিছু করতে পারে, ভাবতে পারে। কিন্তু আমি তো মুসলমান, আমাদের তো উন্মুক্ত চলাচলের ও কর্মপন্থা নির্ধারণের কোন এখতিয়ার নেই। ইসলামের দেয়া নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা মেনেই তো আমাদেরকে চলতে হবে। ইসলামের সীমা অতিক্রম করে উন্মুক্ত চলার আমাদের কোন অধিকার বা সুযোগ নেই।
আল্লাহর দেওয়া গজব থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর দিকেই তো
প্রত্যাবর্তনের কথা ছিল একজন মুসলমানের। কিন্তু তা না করে কাফেরদের মত আল্লাহর
নাফরমানির মতো কাজে আমরাও উপনীত হলাম। এটাও আল্লাহর পক্ষ থেকে এক পরীক্ষা যে,
কে মহামারীর সময় আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন
করে এবং কে নাফরমানিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
প্রথম গ্রুপের জন্য মহামারী রহমত স্বরূপ, আর
দ্বিতীয় গ্রুপের জন্য তা আল্লাহর পক্ষ থেকে লা’নত ও গজব।
মহামারিকে কেন্দ্র করে মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববী’সহ সব মসজিদকে বন্ধ করা, মুসল্লী ও ইমাম সাহেবদেরকে মারপিট করা, মুসলমানদের পাঞ্জেগানা নামাজ, জুমা ও তারাবিহ বন্ধ করা কোন কাফের শাসনাধীন দেশের কার্যক্রম হতে পারে, কিন্তু মুসলমানদের জন্য তো এমন হওয়ার কথা নয়। বর্তমানে আমরা যেন ফতেহ মক্কার পূর্বের মক্কা মুকাররমায় বাস করছি।
আরও পড়তে পারেন-
কখন জমিনে মহামারি ছড়িয়ে পড়ে এবং মু’মিনদের করণীয়
আদর্শ পরিবার ও সমাজ গঠনে পিতা-মাতার ভূমিকা
ভারতের মতো শ্রীলঙ্কাও মুসলমানদেরকে কলঙ্কিত করতে করোনভাইরাসকে হাতিয়ার করছে
ঘৃণা-বিদ্বেষ নয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট থাকুক
আল্লাহকে ভয় কর এবং কাজে অনড় থাকো, নিন্দুকের নিন্দা শুনিও না: মাওলানা আহমদ লাট
এক অবাস্তব ও কাল্পনিক কথার উপর সারা পৃথিবী ঐক্যমত হয়ে গেল যে, সুস্থ মানুষের সমাগমে করোনা সংক্রমিত হয়। আমরা এ ধরণের অবাস্তব কথা বিশ্বাস করতে অক্ষম। কারণ-
১. করোনা আসার অনেক পর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। কিন্তু লক্ষ লক্ষ প্রতিষ্ঠানে কোন করোনা জন্ম নেয়নি।
২. করোনা আসার পর হাজার হাজার মিল-কারখানায় লোক সমাগম বিদ্যমান ছিল, কিন্তু কোন করোনা জন্ম নেয়নি।
৩. খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে বাসায় আসতে গণ গেদারিং হয়েছে, তাতেও কোন করোনা জন্ম নেয়নি।
৪. ওবায়দুল কাদেরকে হাসপাতালে দেখতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী’সহ গণসমাগম হয়েছে, কিন্তু সেখানেও করোনার সাথে কারো দেখা সাক্ষাৎ হয়নি।
৫. দেশের হাজার হাজার বাজারে করোনার জন্ম নগ্ন থেকে অদ্যাবধি জন সমাগম ও ভিড় অব্যাহত রয়েছে, তাতেও করোনার সাথে কারো সাক্ষাৎ হয়নি।
বরং এই লকডাউনের সময় বহু স্থানে কোন সমাগম ছাড়াই মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই প্রশ্ন হলো, সংক্রমণের কার্যকারিতা কোথায়? তবে কেন এই মিথ্যা গুজবের উপর ভিত্তি করে, দেশের ১৭ কোটি সুস্থ মানুষের কর্মজীবনে অচল অবস্থা সৃষ্টি করা হল?
সুতরাং, যে লোক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আসমানী প্লানে আছে, সে নিরাপদ স্থানে থাকলেও আক্রান্ত হবে নিশ্চয়ই। আর যে ব্যক্তি আসমানী প্লানে নেই, সে সারা দিন সমাগমে থাকলেও আক্রান্ত হবে না কখনোই।
অর্থাৎ- “আমাদের কাছে কোন বিপদ আসবে না, কিন্তু যা আল্লাহ আমাদের ভোগ্যে লিখে রেখেছেন। তিনি আমাদের কার্যনির্বাহক। আর আল্লাহর উপরই মুমিনদের সকল কাজের ভরসা করা উচিত”।
করো জেলে যেতে আকাঙ্খা হয় যাক, তাতে দেশবাসীর কোন আপত্তি নেই। কিন্তু অন্যজনকে জেলে পাঠাতে হলে, অকাট্য প্রমাণ প্রয়োজন। তাই ১৭কোটি সুস্থ মানুষকে আশঙ্কা নয়, বরং কাল্পনিক আশঙ্কার উপর কষ্ট দেয়া বিবেক বহির্ভুতও বটে।
তিন-চার শত লোক করোনায় আক্রান্তের সময় দেশে লকডাউন হল, তাতে আক্রান্তের পরিমান কম হওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু তা না হয়ে অদ্য ২৬ মে তার পরিমাণ ৩৫,৫৮৫ জনে উন্নীত হল কেন? তাহলে বলুন, লকডাউনের ফলাফল আসলে কি? তারপরও কি বুঝে আসে না? যে সংক্রমণ এক ভূয়া শ্লোগান! তাই ১৭ কোটি মানুষকে কোন কারণ ছাড়া কর্মহীন করে দিয়ে তাদের নিজেদের এবং সর্বোপরি জাতীয় অর্থনীতিকে হুমকির মুখোমুখি করার কোন অর্থ হতে পারে না। এটা কি ইসলাম, এটা কি মানবতা, এটা কি বিবেক, এটা কি জনসেবা, এটা কি সভ্যতা। ভাবুন। [চলবে]
— আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক, প্রখ্যাত আলেমে-দ্বীন, ভূগোল-বিশারদ, সহসভাপতি- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবং শায়খুল হাদীস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা।
উম্মাহ২৪ডটকম: আরএএম
উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com