ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননা ও উস্কানিমূলক পোস্ট-এর জের ধরে গত ১০ই নভেম্বর শুক্রবার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় স্থানীয় মানুষজনের বিক্ষোভ, কয়েকটি গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন ও পুলিশি হামলায় হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, প্রতিবাদ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর ও ঢাকা মহানগর সভাপতি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।
তিনি আরো বলেছেন, “বাংলাদেশ রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক দিক দিয়ে এক স্পর্শকাতর সময় অতিক্রম করছে। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে আমাদের সকলকে যে কোন সাম্প্রদায়িক ও শান্তি-শৃঙ্খলার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যত উস্কানি আসুক না কেন, কোনো অবস্থাতেই কাউকে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। যে কোন অন্যায়, এদেশের আলেম-ওলামা ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ঘৃণার চর্চা, ইসলাম ও নবী-রাসূলের প্রতি অবমাননা ও কুৎসার বিচারের ক্ষেত্রে আমরা আইন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করার পক্ষপাতি। এতোদুদ্দেশ্যেই আমরা বার বার সরকারের প্রতি ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে কঠোর আইন পাশের দাবী জানিয়ে আসছি।
গত (১৩নভেম্বর) সোমবার সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী আরো বলেন, কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, ফেসবুকে কথিত ইসলাম অবমাননাকর পোষ্টটির পর প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী, অনলাইন ক্রাইম প্রিভেনশন ইউনিটসহ সকলেই কী উদ্দেশ্যে এতদিন নিশ্চুপ ছিলেন? অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে, উল্টো স্থানীয় জনগণের ক্ষোভ ও প্রতিবাদে বাধা দেওয়ার নামে সহিংস আক্রমণের মাধ্যমে হতাহতের ঘটনা ঘটিয়ে পুরো এলাকায় অগ্নিগর্ভের মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, এই ধরনের ঘটনা, প্রশাসনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনুমোদন ছাড়া কখনো ঘটতে পারে না। এর আগের বেশ কিছু ঘটনার ক্ষেত্রেও একই আচরণ স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং এর পেছনে জড়িতদের বিচারের দাবি জানাই।
বিবৃতিতে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী আরও বলেন, প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব হচ্ছে নিরাপরাধ প্রত্যেকটি মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অন্যায়ভাবে কেউ আক্রমণের শিকার হলে তাকে রক্ষার চেষ্টা করা।
বিবৃতিতে তিনি সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন, এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে অপরাপর গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মানুষের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতা করা, তাদের যে কোন প্রয়োজনে সহযোগিতা নিয়ে পাশে দাঁড়ানো। পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরও দায়িত্ব হচ্ছে, তাদের কোন আচরণে যাতে মুসলমানদের প্রতি উস্কানী না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা।
তিনি বলেন, ইসলাম ও মুসলমানদেরকে বাদ দিয়ে মন্দির ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকার মাপকাঠি; এমন একচোখা মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। ‘ইসলাম অবমাননায় সবাই চুপচাপ থাকো- না হয় সাম্প্রদায়িকতা নষ্ট হবে। আর মন্দিরে আঁচড় কাটলে সেটাকে দ্রুত প্রচার করো এবং আন্তর্জাতিকিকরণ করো’, এটা তো রীতিমতো অন্যায়। এমন মানসিকতা শান্তির ও দেশের পক্ষের নয়।
বিবৃতিতে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী সাধারণ মুসলমানদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন, সংখ্যালঘুদের উপর যে কোন সহিংসতা ও হামলা চালিয়ে তার দায় ও কালিমা আলেম-উলামা ও মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেয়ার হীন রাজনৈতিক ও আধিপত্যবাদি কৌশল যাতে কেউ বাস্তবায়ন করতে না পারে, সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক ভাবে আমাদের সকলকে সজাগ থাকতে হবে, সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। #