।। মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী ।।
নফল ছয় রোযার ফযীলত
হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি রমযানের রোযা রাখার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখে সে যেন সারাটি বছরই রোযা রাখলো। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ-১৭৯ পৃঃ)।
ছয় রোযার আহ্কাম
* রমযানের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি নফল রোযা রাখার অনেক ফযীলত রয়েছে। এটাকে আমাদের পরিভাষায় ছয় রোযা বলা হয়। এ ছয় রোযা রাখার ব্যাপারে অনেকে এরূপ মনে করেন যে, ঈদের পরের দিন হতেই এই ছয় রোযা রাখা আরম্ভ করলে প্রতিশ্রুত সাওয়াব পাওয়া যায়, নতুবা নয়। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং পুরো শাওয়াল মাসের মধ্যে যে কোন সময় আদায় করতে পারলেই সে সাওয়াব পাওয়া যাবে। ঈদের পরের দিন থেকেই আরম্ভ করুক বা কয়েক দিন পরে আরম্ভ করুক। পরপর রাখুক অথবা ভিন্ন ভিন্ন যেভাবেই রাখুক পূর্ণ সাওয়াব পাওয়া যাবে। (যাওয়ালুচ্ছিনাহ)।
* অনেক লোক মনে করে যে, ছয় রোযা খুবই গরম। এ ধারণাও ভুল ও অর্থহীন। শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই।
* অনেকে এই ছয় রোযার মধ্যে নিজের আগের ক্বাযা রোযারও হিসেব করে। মনে করে- ছয় রোযাও আদায় হয়ে যাবে, ক্বাযাও হয়ে যাবে। এই ধারণাটিও সঠিক নয়। যদি ক্বাযার নিয়্যাত করে, তাহলে ছয় রোযার ফযীলত অর্জিত হবে না। সুতরাং এই দুই ক্ষেত্রের জন্যে পৃথক পৃথক রোযা রাখতে হবে। (যাওয়ালুচ্ছিনাহ)।
* ছয় রোযা ঈদের কয়েকদিন পরে আরম্ভ করা উত্তম। কারণ এতে নাসারাদের রোযার সাথে সাদৃশ্যতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। (শাইখ আব্দুল হক্ মুহাদ্দিসে দেহলভী [রাহ্.] রচিত ‘লুম্আত’)।
জিলহজ্বের নফল রোযার ফযীলত
হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) বলেন, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যেসব দিনগুলোতে আল্লাহর ইবাদত করা হয়, তন্মধ্যে আল্লাহ্র নিকট জিলহজ্বের প্রথম দশ দিন হতে উত্তম কোন দিন নেই। কেননা, উক্ত দিনসমহে প্রত্যেক দিনের রোযার সাওয়াব পূর্ণ এক বছর রোযা রাখার সাওয়াবের সমতুল্য এবং প্রত্যেক রাতের ইবাদতের সাওয়াব শবে-ক্বদরের ইবাদতের সমতুল্য। (তিরমিযী, ইব্নে মাজাহ, মিশকাত শরীফ-১২৮ পৃঃ)।
অপর এক রিওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- জিলহজ্বের নবম তারিখের রোযা অতীত এবং ভবিষ্যতের দুই বছরের গুনাহ্ বিদরিত করে দেয়। (মিশকাত শরীফ-১৭৯)।
আশুরার রোযার ফযীলত
হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- রমযান মাসের রোযার পরে অধিকতর ফযীলতের রোযা হল মুহাররম মাসের আশুরার রোযা। (মুসলিম, মিশকাত শরীফ-১৭৮ পৃঃ)।
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- আশুরার দিনের রোযা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ্ দর করে দেয়। (মুসলিম, মিশকাত শরীফ-১৭৯ পৃঃ)।
উল্লেখ্য, শুধুমাত্র আশুরার দিন রোযা রাখা মাকরূহ্। অতএব কেবল আশুরা অর্থাৎ ১০ মুহাররম রোযা না রেখে বরং তার সাথে ৯ অথবা ১১ তারিখের আরও একটি রোযা বাড়িয়ে দু’টি রোযা রাখা উচিত। (যাওয়ালুচ্ছিনাহ)।
আইয়্যামে বীযের রোযা
হযরত ইব্নে আব্বাস (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আইয়্যামে বীযের রোযা কখনই ছাড়তেন না। তা মুসাফিরী অবস্থায় হোক কিংবা স্বগৃহে অবস্থান রত অবস্থায় হোক। ‘আইয়্যামে বীয’ অর্থ প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ। (নাসাঈ শরীফ, মিশকাত শরীফ)।
অন্য এক রিওয়ায়াতে হযরত ইব্নে আমর (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- রমযান মাসের রোযাসহ প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখার সাওয়াব ‘সাওমে দাহর’ অর্থাৎ সারা বছর রোযা রাখার সমান। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত শরীফ)।
লেখকঃ সিনিয়র শিক্ষক- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা ঢাকা, খতীব- তিস্তা গেট জামে মসজিদ টঙ্গী, উপদেষ্টা- উম্মাহ ২৪ডটকম এবং কেন্দ্রীয় অর্থ-সম্পাদক- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।
ই-মেইল- muftijakir9822@gmail.com