– নাজনীন আক্তার (আমাতুল্লাহ)
দ্বীনি ফ্যামিলি কি আর সাধারণ ফ্যামিলি কি, বেশিরভাগ পরিবারগুলোতেই বাচ্চারা স্মার্টফোনে বুঁদ হয়ে থাকে। মোবাইল ছাড়া খাওয়া হয় না, ঘুম হয় না, কিছুই হয় না। কান্না থামাতে মোবাইল, দুষ্টুমি থামাতে মোবাইল, কথা শোনাতে মোবাইল! একদম শিশু থেকে শুরু করে যে কিনা কথাও শেখেনি সেও মোবাইল পেলে সব ঠান্ডা। একটা শিশু কালেমা ঠিকমতো বলতে না পারলেও ইউটিউবে কি কি কার্টুন/ভিডিও দেখতে হবে সেসবের নাম ঠোঁটের আগায় থাকে।
কি দেখে মোবাইলে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কার্টুন /গান/ভিডিও এসব। যারা একটু দ্বীন মেনে চলেন তারা আবার নাশীদ/গজল, ইসলামিক ভিডিও, এসবকিছু।সাধারণ পরিবারের কথা আগে বলি, যারা শরীয়তের হুকুম আহকামের সাথে জীবনযাপন সেভাবে করে ওঠেন না। আপনার বাচ্চা হিন্দি গানের সাথে তাল মিলিয়ে কোমর ঢুলিয়ে নাচে, সেটা দেখতে আপনার খুব ভাল লাগে। অনেক ট্যালেন্ট মনে হয়।
ঐ যে গানগুলো দেখছে, সেখানে নিশ্চয় নামাজ পড়ার ভিডিও দেখানো হয় না। নারী পুরুষের একে অপরের আলিঙ্গন, যৌন উত্তেজনামূলক সিন। এসব দেখে আস্তে আস্তে আপনার শিশুর মাথায় কি ঢুকছে। একটু বড় হতে হতেই তার ঐগুলি মাথায় আরও বসে যাবে ঐসব কেমন তা বাস্তবে জানতে ইচ্ছে করবে।এবং তা কোন কোন পর্যায়ে যেতে পারে তার হিসাব নেই।
শিশু যখন মোবাইল নিয়ে অনেক সময় থাকে, এতে করে আপনার পক্ষে তার সাথে সাথে মোবাইলের স্ক্রীনে চোখ টাঙ্গিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তার দেখার পরিধিও আপনি নির্ণয় করতে পারবেন না। সাজেশনে নানারকম ভিডিও চলে আসবে। আপনার শিশু কি শিখছে, মনে মনে কি লালন করছে – তা আপনার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে একটা সময়। আপনি চাইলেও একটা সময়ে তাকে শাসনের বেড়ি দিয়ে আর সামলাতে পারবেন না।
আজকের শিশুটার স্মার্টফোন হাতে পাওয়ার জন্য রাগ জীদ খুব কিউট মনে হলেও একটা সময় সেটাই তাকে করবে একরোখা, বদমেজাজি, বেয়াদব। সে যা চাচ্ছে তাকে তাই দিয়ে দিচ্ছেন সাথে সাথে। সে চাওয়ামাত্র সব পাচ্ছে। শিশুরা কাঁদার মতো। যেভাবে তৈরি করবেন সেভাবে তৈরি হবে। বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে এমন ভাবনা নিতান্তই বোকামি বা অবহেলা। শিশু ছোট থেকে যা শিখবে, যেভাবে বড় হবে সেটাই তার মাথায় আজীবন সেট করা থাকে। বড় হয়ে কিছুটা এদিক সেদিক হলেও। মূল জিনিসটা একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় না।
এবার আসি, যারা মাশাআল্লাহ শরীয়তের হুকুম আহকাম মেনে চলার ক্ষেত্রে বেশ সতর্ক থাকেন। শিশুকে কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন, সালাম শেখাচ্ছেন, ইসলামি শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছেন অথচ এই স্মার্টফোন এর ভেতরে তাকে ছেড়ে দিয়ে আছেন। ইউটিউবে ভিডিওর মোহে পড়ে থাকে। মাঝে মাঝে শিক্ষামূলক ভিডিওতে হালকা পাতলা মিউজিক বাজে সেটাকে গুরুত্বই দিলেন না। অথচ মিউজিক সম্পূর্ণ হারাম। ইউটিউব দেখতে দেখতে হঠাৎ অশ্লীল পোষাকের ছেলেমেয়ে হাজির! যেটা নির্দিষ্ট সময়ের আগে স্কীপ করা যায় না।
পর্দা করা শেখাচ্ছেন ছোট থেকে, অথচ হাতে এমন জিনিস যা দিয়ে অর্ধ-উলঙ্গ মেয়েছেলে দেখতে পারছে। গান শোনান না। হারাম বলে, নাশীদে মিউজিক, কার্টুনের মিউজিক হালাল হয়ে যায়? অন্তরের নূর থাকবে? মাদ্রাসা থেকে এসে মোবাইল, যাওয়ার আগে মোবাইল, ইসলামি শিক্ষার আগেপরে এসব। ঐ নূর কি আসবে? এর জন্য আপনিই কিন্তু দায়ী। আপনার ভুল জায়গায় ভালবাসা দেখানো দায়ী। ভুল জায়গায় আহলাদ দেওয়া দায়ী।
আল্লাহওয়ালা নিজে হওয়া এবং বাচ্চাদের বানাতে গেলে খুব সতর্কতা লাগে। বিশেষ করে বাচ্চাদের। বাচ্চাদের এসব ক্ষতিকারক আহলাদ দেওয়ার ফল কখনো ভাল হতে পারেনা। কয়দিন পর তো কানা হওয়ার দশা হবে এটুকু বয়স থেকে স্মার্টফোন এর দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য। বড়দের জন্যই কত ক্ষতি। তাদের ভবিষ্যত জীবনের জন্য হলেও এই ভয়ংকর ভালবাসা দেখাবেন না, স্মার্টফোন হাতে দিয়ে।
সন্তানকে অবশ্যই ভালবাসবেন। কলিজার টুকরা সে! সেই কলিজার টুকরার সাময়িক খুশির জন্য এমন অস্ত্র হাতে তুলে দিবেন না যা তার জীবনে ভাল কিছু বয়ে আনবে না। আপনার কলিজার টুকরাটারই বেশি সমস্যা হবে। আপনিও ভুক্তভোগী হবেন।শিশুদের সুন্দর আদর্শে নবী রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী ও আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী লালন পালন করুন। ইনশাআল্লাহ এই শিশুটাই হতে পারে আপনার জান্নাতের উসিলা। তাকে সেভাবেই বড় করার দায়িত্ব আপনার। সে যেন অনেক মানুষের হেদায়েতের উসিলা হয়। দ্বীনের কাজ করতে করতে মরতে পারে, তাহলেই সফলকাম আপনি এবং আপনার শিশু ইনশাআল্লাহ! আল্লাহ সবার জন্য সহজ করেন। আমীন।।