।। নূরুল হক ।।
‘পাখির মতো বৃষ্টিরা উড়ে যায়’। এমন এক সম্মোহিত উচ্চারণ, যা কেবল কবিদের দ্বারাই সম্ভব।
বৃষ্টিরা উড়ে যায়। আসলেও তাই। একজন কবি তার গভীর অন্তর্দৃষ্টিতে যা অবলোকন করেন, সাধারণ মানুষদের পক্ষে তা অনুধাবন খুবই দুষ্কর। সুন্দর সৌন্দর্য অনুভব অনুভূতি কাব্যিক পরিমণ্ডলে এক প্রকার মিথে পরিণত হয়ে গেছে।
বর্তমানে আমরা হরহামেশাই কবিতা লিখি অথচ কবিতার অন্তর্নিহিত ভাবে শৃংখলা নেই, ছন্দ নেই, পরিমিতিবোধ নেই কিংবা অনুভব অনুভূতির অভাবে কবিতার জমিন জুড়ে দেখা যায় প্রখর খরা আর জরা। তর্ক অথবা যুক্তির মাধ্যমে যেমন সুন্দরকে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না, ঠিক তেমনিভাবে মনগড়া কিছু অসামঞ্জস্য শব্দের সমভিব্যাহারে সুন্দর কিছু সৃষ্টিও করা যায় না।
মানব জীবনে মানুষ প্রতিনিয়ত জগৎ ও প্রকৃতির প্রতিটি শিরায় উপশিরায় সুন্দরকে খোঁজার এবং তাকে প্রতিষ্ঠিত করবার নিরন্তর সাধনায় লিপ্ত থাকে। সেই অধরা সুন্দরকে পাওয়ার এবং তাকে উপস্থাপন করার প্রচেষ্টা আদিম গুহাবাসী থেকেই শুরু হয়েছে শিল্পের মাধ্যমে। আর এই শিল্প চিরায়ত চিরন্তন ও চিরপ্রবহমান। কাব্য কলা নাটক নৃত্য’সহ সবকিছুকে ঘিরেই তার আবর্তন বিবর্তন।
আরও পড়তে পারেন-
- ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে ঠাট্টা-তাচ্ছিল্য জঘন্য গুনাহ
- উগ্র হিন্দুত্ববাদ এবং মুসলিমবিদ্বেষ ভারত ও বাংলাদেশের জন্য হুমকি
- ‘ইবাদুর রাহমান’ বা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বিশেষ ১২টি গুণ
- মৃত্যুর স্মরণ জীবনের গতিপথ বদলে দেয়
- যে কারণে হিন্দুত্ববাদের নতুন নিশানা ‘দারুল উলূম দেওবন্দ’
একথা আজ সর্বজনগ্রাহ্য ও স্বীকৃত যে শিল্পের সবচেয়ে শক্তিশালী শাখাই হচ্ছে কবিতা। সেই কবিতার ফেরিওয়ালা কবিতাকর্মি মালেকা ফেরদৌস নিরন্তর খুঁজে চলেছেন সুন্দরকে, তার সৃষ্টির ভেতর রূপায়ন করার প্রত্যয়ে। বহুবর্ণখচিত আর বহুরৈখিক তার কবিতার ভাষা এবং সম্ভাষণ বহুমাত্রিক, গভীরতা গম্ভীর অগতানুগতিক।
মালেকা বৃষ্টিকে যেমন স্বমহিমায় নিজের হৃদয়ে প্রোথিত করেন, তেমনিভাবে নদী, প্রকৃতি আর বহমান বাংলার রূপে মুগ্ধ হয়ে খোদাই করে রাখেন সেই প্রত্নতাত্ত্বিক স্মৃতি তার মনের গহীনে একান্তভাবেই নিজের মত করে। আমি তার স্বদেশ প্রকৃতি ও প্রেমের কবিতা গ্রন্থের সম্পাদনা করতে গিয়ে তার রচিত প্রায় কবিতাই পড়ার বিরল সোভাগ্য অর্জন করি। মালেকার কবিতায় যেমনটি আছে প্রবহমানতা তেমনই তার নিজস্ব তৈরি চিত্রকল্প অনেকখানিই স্বমহিমায় উদ্ভাসিত।
তোমাকে দেখার জন্য স্রোতবেগহীন
নদীরা জেগেছে স্বচ্ছতোয়া।
প্রাচীন ভারতবর্ষ থেকে মেঘেরা এসেছে,
তোমার জন্য, বৃষ্টি নেমেছে বহুদিন পর,
বিস্তৃত মাঠ ভরে গেছে তৃণ-গুল্মে, সতেজ ঝোঁপ-ঝাড়
হারিয়ে যাওয়া পাখিরা ফিরেছে নীড়ে
বহুকাল পর, তোমার জন্য চোখের একবিন্দু জল আলোর বৃত্তের মত
জ্বলে উঠল আজ….
আমার বিশ্বাস, কবি মালেকার ‘পাখির মতো বৃষ্টিরা উড়ে যায়’ কাব্যগ্রন্থটি পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।
– নূরুল হক, মতিঝিল, ঢাকা।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ
উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com