অধ্যাপক সাইফুল্লাহ পাটোয়ারী
রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। আরবি চান্দ্রবর্ষের নবম মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা সাওম বা রোজা পালন করে থাকেন। সব প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে। তবে ইসলাম কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য রোজা থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়েছে।
হৃদরোগীদের কিছু প্রশ্ন
- হৃদরোগীরা রোজা রাখতে পারবেন কি না?
- রোজা রাখলে কী কী নিয়ম মেনে চলতে হবে?
- নিয়মিত খেতে হয় এমন হার্টের ওষুধগুলো কীভাবে গ্রহণ করবেন?
- রমজানে ব্যায়ামের উপযুক্ত সময় কখন?
- কোন পরিস্থিতিতে রোজা ভেঙে ফেলা উচিত?
হৃদরোগীদের রোজা রাখা সম্ভব কি না?
যদি কোনো হৃদরোগী জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও ওষুধের মাধ্যমে সুস্থ থাকেন এবং বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড়, বা অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ না থাকে, তবে তিনি কিছু নিয়ম মেনে রোজা রাখতে পারেন।
রোজা রাখতে পারেন যারা
- হার্টের সমস্যা থাকলেও বর্তমানে কোনো উপসর্গ নেই।
- হার্টের কর্মক্ষমতা (EF) ৫০ শতাংশ বা তার বেশি হলে।
যাদের জন্য রোজা না রাখাই ভালো
- সম্প্রতি (তিন মাসের মধ্যে) হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।
- বিশ্রাম নেওয়ার সময়ও বুকে ব্যথা অনুভব করেন।
- হার্ট ফেইলিউরের রোগী, যারা অল্প পরিশ্রমেও শ্বাসকষ্টে ভোগেন।
- অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, যা বুকে ব্যথা, কিডনি, মস্তিষ্ক বা চোখের সমস্যার কারণ হচ্ছে।
- তিন মাসের মধ্যে হার্টে রিং বসানো বা বাইপাস সার্জারি হয়েছে। তবে এক বছর পর কোনো সমস্যা না থাকলে রোজা রাখা নিরাপদ।
- জন্মগত হার্টের ত্রুটি থাকলে, দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে, শ্বাসকষ্ট বা হাত-পা নীল হয়ে গেলে।
হৃদরোগীদের ওষুধ সেবনের নিয়ম
রমজানে ওষুধের সময়সূচি সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। সাধারণত দুবেলা খাওয়ার ওষুধগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
ওষুধ গ্রহণের নির্দেশিকা
- দীর্ঘক্ষণ কার্যকর এমন ওষুধ নির্বাচন করুন।
- সকালের ওষুধ ইফতারে এবং রাতের ওষুধ সাহরিতে গ্রহণ করুন।
- ডাইইউরেটিক ওষুধ (Lasix, Fusid, Frulac, Spirocard, Dytor ইত্যাদি) সন্ধ্যায় গ্রহণ করুন। এগুলো সাহরিতে নিলে পানিশূন্যতা ও রক্তচাপ কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ সন্ধ্যায় খাওয়া উত্তম।
- অ্যান্টিপ্লেটলেট ওষুধ (Ecosprin, Lopirel, Clopid AS, Odrel, Asclop ইত্যাদি) সাধারণত দুপুরে দেওয়া হয়। রমজানে ইফতার বা সাহরিতে গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে ইফতারের পর নেওয়া উত্তম।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
খাদ্যাভ্যাসের নিয়ম
রোজার সময় খাবারের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
- হঠাৎ করে অতিরিক্ত শরবত বা পানি পান এড়িয়ে চলুন।
- ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার পরিহার করুন। এসব খাবারে থাকা ট্রান্সফ্যাট হার্টের জন্য ক্ষতিকর।
- উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা শরবতে অতিরিক্ত লবণ এড়িয়ে চলুন।
- ইফতারের সময় ধীরে ধীরে খান, একসঙ্গে বেশি না খেয়ে ইফতার ও তারাবির মাঝে খাওয়া বণ্টন করুন।
ব্যায়ামের উপযুক্ত সময়
হৃদরোগীদের জন্য ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ, তবে রমজানে সময় নির্বাচন করা জরুরি।
- ইফতারের পরে হালকা ব্যায়াম করা ভালো।
- সকাল বা বিকালে ব্যায়াম করলে পানিশূন্যতা ও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিশ্রম ও অতিরিক্ত ঘাম ঝরানো এড়িয়ে চলুন।
কখন রোজা ভাঙতে হবে?
অনেক হৃদরোগী অসুস্থ হলেও রোজা ভাঙতে চান না। তবে ইসলাম অসুস্থতার ক্ষেত্রে রোজা ভাঙার অনুমতি দিয়েছে।
যেসব ক্ষেত্রে রোজা ভাঙা উত্তম
- বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হলে।
- শ্বাসকষ্ট বাড়লে।
- অতিরিক্ত পালপিটেশন বা হার্টবিট অনিয়মিত হলে।
- হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিলে।
রোজা রাখার পরিকল্পনা থাকলে রমজানের আগে শাবান মাসে নফল রোজা রেখে প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। এই নির্দেশিকাগুলো অনুসরণ করলে হৃদরোগীরাও নিরাপদে রোজা রাখতে পারেন। তবে সুনির্দিষ্ট পরামর্শের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, হৃদরোগ বিভাগ, সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
উম্মাহ২৪ডটকম: আইএ