Home জাতীয় কর্মসংস্থানের নামে দলীয় কর্মীদের ঋণ

কর্মসংস্থানের নামে দলীয় কর্মীদের ঋণ

দেশের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নির্বিচারে গ্রাহকের আমানতের টাকা লুট করেছে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থনপুষ্ট প্রভাবশালীরা। নামে-বেনামে নেওয়া ওই সব ঋণের টাকা এখন আর আদায় হচ্ছে না। তবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা কর্মসংস্থান ব্যাংককে সরাসরি দলীয় কর্মীদের নজিরবিহীনভাবে ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকল্প বানিয়ে জামানত ছাড়াই ২০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয় ব্যাংকটি।

‘বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ নীতিমালা’র আওতায় বেকার যুবক ও যুব নারীরা ৮ শতাংশ সরল সুদে এ ঋণ পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। পাঁচ বছরের জন্য এ ঋণ দেওয়া হয়। ঋণ পাওয়ার জন্য দলীয় সুপারিশের বাধ্যবাধকতা রাখায় অনেক অযোগ্যরাও ঋণ পেয়েছেন। ফলে ঋণগুলো এখন একে একে খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।

কর্মসংস্থানের নামে দলীয় কর্মীদের ঋণব্যাংকটির একজন শাখা ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে জানান, ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ নামের একটি প্রডাক্ট এসেছিল। কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সরকারের কাছে নিজের কাজ প্রদর্শন করতে সে সময় অতি উৎসাহী হয়ে ঋণগুলো বিতরণ করেছেন। যেসব ঋণের বেশির ভাগই পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রান্তিক পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। যদিও ঋণগুলোর আকার ও পরিমাণ অনেক কম।

তার পরও একজন পাতি নেতার কাছে পাঁচ লাখ টাকাই অনেক। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় ঋণের কিস্তি না দিয়েও নিয়মিত গ্রাহক ছিলেন তাঁরা। এখন সরকার পরিবর্তনের ফলে অনেকেই পলাতক। কিস্তি দিতে পারছেন না। তাই খেলাপি হয়ে যাচ্ছেন।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ নীতিমালার আওতায় কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ৭০০ কোটি টাকা ঋণসুবিধা দিয়েছিল। নিজস্ব তহবিল থেকে যোগ করে মোট তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিতরণ করে কর্মসংস্থান ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকায় আশঙ্কা করা হচ্ছে ভবিষ্যতে খেলাপি আরো বাড়তে পারে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে অনেক নেতাকর্মী এবং ঋণ নেওয়া উদ্যোক্তারা গায়েব হয়ে গেছেন।

এসব বিষয়ে কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অরুণ কুমার চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মুজিববর্ষে ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল দুই লাখ জনকে। আমরা তার চেয়ে বেশি মানুষকে ঋণ দিয়েছি। আমরা সব সময় প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ নিয়ে কাজ করি এবং ছোট ছোট ঋণ দিয়ে থাকি। তাই আমাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ একেবারেই কম। মাত্র আড়াই শতাংশের মতো।’

বঙ্গবন্ধু যুব ঋণখেলাপির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা (খেলাপি) খুবই নগণ্য। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ১৭ কোটি টাকা কিছুই না। আশা করছি এগুলো আদায় হয়ে যাবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত চার হাজার ১০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে কর্মসংস্থান ব্যাংক। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ১০৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুসারে রাখতে হচ্ছে প্রভিশন। ফলে সরাসরি প্রভাব পড়ছে ব্যাংকের মুনাফায়।

আরও পড়তে পারেন-

নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে পরিচালন মুনাফার ০.৫ থেকে ৫ শতাংশ সাধারণ ক্যাটাগরির ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়, নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ এবং ৫০ শতাংশ সন্দেহজনক খেলাপি ঋণের বিপরীতে রাখতে হয়। এ ছাড়া প্রতিটি ব্যাংকের জন্য মন্দ বা লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশনিং আলাদা করে রাখার বিধান রয়েছে।

শুধু ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে বঙ্গবন্ধুর যুব ঋণের খেলাপির বিপরীতে ছয় কোটি ৮২ লাখ টাকা মুনাফা হারিয়েছে কর্মসংস্থান ব্যাংক। অর্থাৎ ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হয়েছে ব্যাংকটিকে। শুধু তা-ই নয়, কভিড-১৯-এর পুনরর্থায়ন স্কিমের আওতায় নেওয়া ঋণগুলোও খেলাপি হতে শুরু করেছে। এর বিপরীতেও তিন কোটি ১৪ লাখ টাকা মুনাফা হারিয়েছে বিশেষায়িত এই ব্যাংক।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কর্মসংস্থান ব্যাংকের মোট কর্মকর্তার সংখ্যা বর্তমানে এক হাজার ৮৬৫ জন। ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১১ লাখ ১৬ হাজার ৫৬৫ জন উদ্যোক্তাকে ঋণ দিয়েছে ব্যাংকটি।

কর্মসংস্থান ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত অ-তফসিলি ব্যাংক। ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেকারদের অর্থ সহায়তা দিয়ে ক্ষুদ্রশিল্প গড়ে তুলতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে। দেশের ক্রমবর্ধমান বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ঋণ সহায়তা প্রদানের জন্য ১৯৯৮ সালে এ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতের এটি বিনিয়াগের উৎস। বর্তমান ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন এক হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৫৫৯ কোটি টাকা।

ব্যাংক খাতের বিষফোড়া খেলাপি ঋণ। যার পরিধি এখন অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে খেলাপি প্রায় তিন লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। তবে হিসাবায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন হলে প্রকৃত খেলাপি পাঁচ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কারণ অর্থঋণ আদালতে আটকে থাকা ঋণ, স্টে অর্ডারের ঋণ, অবলোপন, পুনর্গঠনের সব ঋণ খেলাপির খাতায় যুক্ত হবে।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।