Home ওপিনিয়ন ওভাল অফিসের ১০ মিনিট কি জেলেনস্কির ভাগ্য নির্ধারণ করে দিল!

ওভাল অফিসের ১০ মিনিট কি জেলেনস্কির ভাগ্য নির্ধারণ করে দিল!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (মাঝে) ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের (ডানে) সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির (বাঁয়ে) বৈঠক। ছবি: রয়টার্স

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। এ সময় জেলেনস্কির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অকৃতজ্ঞতা ও রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অনীহা দেখানোর অভিযোগ তোলা হয়।

পাঠকের উদ্দেশে তাদের কথোপকথন তুলে ধরা হলো:

ট্রাম্প: আমি বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে একমত এবং এই সংঘাতের সমাপ্তি চাই। আপনারা দেখেছেন, পুতিনের প্রতি কী পরিমাণ ঘৃণা তার (জেলেনস্কির)! এতটা ঘৃণা নিয়ে কোনো চুক্তি করা আমার জন্য কঠিন। তবে আমি এটাও জানি, অপর পক্ষও তার প্রতি তেমন ভালোবাসা পোষণ করে না। কাজেই এটি কেবল অবস্থান নেওয়ার বিষয় নয়। আমি ইউরোপের সঙ্গেও যুক্ত। আমি চাই এ সমস্যার সমাধান হোক। আপনি কঠোরতা দেখতে চাইলে আমি দুনিয়ার সবচেয়ে কঠোর ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারি। কিন্তু এতে কখনোই কোনো সমঝোতা সম্ভব হবে না।

ভ্যান্স: আমি এর উত্তর দিতে চাই। চার বছর ধরে আমরা এমন এক প্রেসিডেন্ট (জো বাইডেন) দেখেছি, যিনি সংবাদ সম্মেলনে দাঁড়িয়ে পুতিনকে কড়া বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু সে বার্তাকে উপেক্ষা করেই পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করে দেশটির এক বিশাল অংশ ধ্বংস করে দিয়েছেন। কূটনৈতিক আলোচনাতেই শান্তি ও সমৃদ্ধি আসতে পারে। বাইডেন প্রশাসনের নীতি ছিল কঠোর কথাবার্তা বলা। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কূটনৈতিক দক্ষতা যুক্তরাষ্ট্রকে একটি ভালো দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেটিই করছেন।

জেলেনস্কি: আমি কি একটা প্রশ্ন করতে পারি?

ভ্যান্স: অবশ্যই, বলুন।

জেলেনস্কি: ২০১৪ সালে পুতিন আমাদের পূর্ব ইউক্রেনের একটি বড় অংশ এবং ক্রিমিয়া দখল করেছেন। আমি শুধু বাইডেনের কথা বলছি না, তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ওবামা, তারপর ট্রাম্প, তারপর বাইডেন, এখন আবার ট্রাম্প। ঈশ্বরের কৃপায় এবার ট্রাম্প উনাকে থামাবেন। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে কেউই উনাকে থামাতে পারেননি। তিনি ভূখণ্ড দখল করেছেন, মানুষ হত্যা করেছেন। আপনি এই সম্পর্কে জানেন…

ট্রাম্প: ২০১৫?

জেলেনস্কি: ২০১৪।

ট্রাম্প: ২০১৪? তখন তো আমি ক্ষমতায় ছিলাম না।

জেলেনস্কি: হ্যাঁ, কিন্তু ২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত পরিস্থিতি একই ছিল—মানুষ মারা গেছে। কেউ তাকে (পুতিনকে) থামায়নি। আপনি জানেন, আমরা অনেক আলোচনা করেছি। আমি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ২০১৯ সালে পুতিনের সঙ্গে চুক্তি করেছি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর মার্কেলের উপস্থিতিতে আমরা যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই করেছি। সবাই বলেছিলেন, তিনি (পুতিন) কখনো আগ্রাসন চালাবেন না। আমরা গ্যাস সরবরাহ চুক্তিও করেছি। কিন্তু তারপরও তিনি চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। আমাদের মানুষ হত্যা করেছে, বন্দি বিনিময়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখেননি। তাহলে কীসের কূটনীতি, জেডি? আপনি কী বোঝাতে চান?

ভ্যান্স: আমি এমন কূটনীতির কথা বলছি, যা আপনার দেশের ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করবে… 

জেলেনস্কি: হ্যাঁ, কিন্তু কীভাবে?

ভ্যান্স: মাননীয় প্রেসিডেন্ট, সম্মানের সঙ্গে বলছি, আপনি ওভাল অফিসে এসে এই বিষয়টি আমেরিকান গণমাধ্যমের সামনে বিতর্কিত করছেন। এটি যথেষ্ট অসম্মানজনক। এখন আপনারা সৈন্য সংকটের কারণে জোরপূর্বক লোকজনকে যুদ্ধের জন্য নিয়োগ করছেন। আপনার (মার্কিন) প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানানো উচিত যে তিনি এই সংঘাতের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করছেন…

জেলেনস্কি: আপনি কি কখনও ইউক্রেনে গিয়েছেন যে বলতে পারেন আমাদের কী সমস্যা আছে? অন্তত একবারও?

ভ্যান্স: আমি গিয়েছি…আসলে, আমি দেখেছি এবং জানি যে আপনি মানুষদের নিয়ে যান, তাদের কাছে প্রোপাগান্ডা প্রচার করেন, মাননীয় প্রেসিডেন্ট। আপনি কি এটা অস্বীকার করেন যে আপনার সামরিক বাহিনীতে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে?

জেলেনস্কি: হ্যাঁ, আমাদের সমস্যা আছে…

ভ্যান্স: তাহলে আপনি কি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওভাল অফিসে এসে ওই প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা সম্মানজনক, যারা আপনার দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে?

জেলেনস্কি: অনেক, অনেক প্রশ্ন। আসুন, শুরু থেকে শুরু করি।

ভ্যান্স: ঠিক আছে।

জেলেনস্কি: প্রথমত, যুদ্ধের সময় সবাই সমস্যার সম্মুখীন হয়, এমনকি আপনারাও। তবে আপনাদের সামনে একটি সুন্দর সমুদ্র আছে। তাই এখন হয়তো সেটা অনুভব করছেন না, কিন্তু ভবিষ্যতে করবেন।

আরও পড়তে পারেন-

ট্রাম্প: আপনি জানেন না।

জেলেনস্কি: ঈশ্বরের আশীর্বাদ…

ট্রাম্প: আপনি আমাদের বলবেন না যে আমরা কীসের সম্মুখীন হবো। আমরা সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছি, আমাদের শেখানোর দরকার নেই।

জেলেনস্কি: আমি বলছি না, আমি তার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।

ট্রাম্প: কারণ, আপনার (বর্তমান) অবস্থান থেকে এসব বলা উচিত নয়…

জেলেনস্কি: আমি কিছু চাপিয়ে দিচ্ছি না।

ট্রাম্প: আমরা কীসের সম্মুখীন হবো তা বলার অবস্থানে আপনি নেই। আমরা অনেক ভালো এবং শক্তিশালীই থাকব।

জেলেনস্কি: কিন্তু আপনাদের ওপর প্রভাব পড়বে…

ট্রাম্প: আপনার দেশ এখন ভালো অবস্থায় নেই। আপনি নিজেই নিজেকে দুর্বল অবস্থায় নিয়ে গেছেন, আর ভ্যান্স ঠিকই বলেছেন।

জেলেনস্কি: যুদ্ধ শুরুর পর থেকে…

ট্রাম্প: আপনি ভালো অবস্থানে নেই। এই মুহূর্তে আপনার হাতে তেমন ভালো কোনো কার্ড নেই। আমাদের সঙ্গে থাকলে হয়তো কিছু সুবিধা পেতে পারেন।

জেলেনস্কি: আমরা কোনো কার্ড খেলছি না।

ট্রাম্প: আপনি আসলে কার্ডই খেলছেন। আপনি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাজি ধরেছেন। আপনি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে বাজি ধরেছেন। যা করছেন, তা এই দেশের (যুক্তরাষ্ট্র) প্রতি অসম্মানজনক। এই দেশ আপনাকে অনেক বেশি সমর্থন করেছে, যদিও অনেকেই বলেছিলেন যা করা উচিত নয়।

ভ্যান্স: আপনি কি একবারও ধন্যবাদ বলেছেন?

জেলেনস্কি: অনেকবার।

ভ্যান্স: না, এই বৈঠকের পুরো সময়ে কি একবারও ধন্যবাদ বলেছেন? অথচ অক্টোবর মাসে আপনি পেনসিলভানিয়ায় গিয়ে বিরোধী দলের প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ও প্রেসিডেন্টকে কিছু কৃতজ্ঞতার কথা বলুন, যিনি আপনার দেশকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।

জেলেনস্কি: আপনি কি মনে করেন, যুদ্ধ নিয়ে জোরে কথা বললেই…

ট্রাম্প: তিনি জোরে কথা বলছেন না। তিনি কেবল বলছেন, আপনার দেশ গভীর সমস্যায় আছে।

জেলেনস্কি: আমি কি উত্তর দিতে পারি?

ট্রাম্প: না, না। আপনি যথেষ্ট বলেছেন। আপনার দেশ বড় সমস্যায় আছে।

জেলেনস্কি: আমি জানি।

ট্রাম্প: আপনি জয়ী হচ্ছেন না। আপনি এই যুদ্ধ জিতছেন না।

জেলেনস্কি: আমি…

ট্রাম্প: আপনি কেবল আমাদের কারণেই কোনোভাবে টিকে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন।

জেলেনস্কি: মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আমরা আমাদের দেশেই আছি, দৃঢ়ভাবে লড়াই করছি। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আমরা একা ছিলাম। তবে আমরা কৃতজ্ঞ, আমি ধন্যবাদ জানিয়েছি…

ট্রাম্প: আপনি একা ছিলেন না। আমরা আপনাকে সাহায্য করেছি। এই নির্বোধ প্রেসিডেন্ট (বাইডেন) আপনাকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছেন। আমরা আপনাকে সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছি। আপনার সৈন্যরা সাহসী, তবে তাদের সেই সরঞ্জাম ব্যবহার করতেই হয়েছে। যদি আমাদের অস্ত্র না থাকত, এই যুদ্ধ মাত্র দুই সপ্তাহেই শেষ হয়ে যেত…

জেলেনস্কি: তিন দিনে! পুতিনও তো বলেছিলেন তিন দিনের মধ্যে সব শেষ হবে!

ট্রাম্প: হয়তো তারও কম সময়ে।

জেলেনস্কি: দুই সপ্তাহ? অবশ্যই, হ্যাঁ।

ট্রাম্প: এই পরিস্থিতিতে কাজ করা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

ভ্যান্স: আপনি শুধু একটা ধন্যবাদ দিতে পারেন না?

জেলেনস্কি: আমি অনেকবার আমেরিকান জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছি…

ভ্যান্স: মেনে নিন যে আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। মার্কিন গণমাধ্যমের সামনে বিতর্ক না করে আসুন, আমরা সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করি। যেহেতু আমরা জানি যে আপনি ভুল।

ট্রাম্প: কিন্তু দেখুন, আমি মনে করি আমেরিকান জনগণের জন্য এটি দেখা গুরুত্বপূর্ণ যে কী ঘটছে। এ কারণেই আমি এই আলোচনা দীর্ঘায়িত করেছি। আপনাকে কৃতজ্ঞ হতে হবে, কারণ আপনার হাতে কোনো কার্ড নেই।

জেলেনস্কি: আমি কৃতজ্ঞ।

ট্রাম্প: আপনি সেখানেই আটকে আছেন। মানুষ মরছে। আপনার সেনাদের সংখ্যা কমে আসছে। শুনুন, আপনার সৈন্যসংখ্যা কমছে। এটা ভয়ঙ্কর খবর…

জেলেনস্কি: অনুগ্রহ করে, মাননীয় প্রেসিডেন্ট…

ট্রাম্প: কিন্তু এরপরও আপনি আমাদের বলছেন, ‘আমি যুদ্ধবিরতি চাই না, আমি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাই।’ দেখুন, যদি এখনই আপনি যুদ্ধবিরতি পেতে পারেন, আমি বলছি, সেটা গ্রহণ করুন, যাতে গুলি বন্ধ হয় এবং আপনার মানুষ আর মারা না যায়।

জেলেনস্কি: অবশ্যই, আমরা যুদ্ধ থামাতে চাই…

ট্রাম্প: কিন্তু আপনি তো বলছেন যে আপনি যুদ্ধবিরতি চান না। আমি যুদ্ধবিরতি চাই।

জেলেনস্কি: কিন্তু আমি বলেছি, ‘এর গ্যারান্টি কোথায়?’

ট্রাম্প: কারণ, একটি চুক্তির চেয়ে যুদ্ধবিরতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়।

জেলেনস্কি: আমাদের জনগণের কাছে জিজ্ঞাসা করুন যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাদের মত কী। তাদের মতামত কি আপনার কাছে কোনো গুরুত্ব রাখে না?

ট্রাম্প: সেটি আমার সঙ্গে হয়নি। সেটি হয়েছে বাইডেনের সঙ্গে, যিনি খুব একটা বুদ্ধিমান নন। সেটি ওবামার সঙ্গে হয়েছিল। শুনুন, সেটি ওবামার সঙ্গে হয়েছিল, যিনি আপনাকে শুধু কম্বল দিয়েছিলেন, আর আমি আপনাকে জ্যাভেলিন (অ্যান্টি-ট্যাংক মিসাইল) দিয়েছিলাম। হ্যাঁ, আমি আপনাকে ট্যাংক ধ্বংস করার জন্য জ্যাভেলিন দিয়েছিলাম। ওবামা আপনাকে কম্বল দিয়েছেন, আর আমি দিয়েছি জ্যাভেলিন। তাই আপনাকে আরও কৃতজ্ঞ হতে হবে। কারণ সত্যি বলতে, আপনার হাতে কোনো কার্ডই নেই। আমাদের সাহায্য ছাড়া আপনি পুরোপুরি দুর্বল অবস্থায় থাকতেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে থাকলে আপনি কিছুটা শক্তিশালী অবস্থানে যেতে পারবেন।

সাংবাদিক: যদি রাশিয়া যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে, তাহলে কী হবে?

ট্রাম্প: তাহলে কী হবে? যদি এখনই তোমার মাথার ওপর একটা বোমা পড়ে? ঠিক আছে? যদি তারা লঙ্ঘন করে, তাহলে কী হবে? আমি জানি না। তারা বাইডেনের সঙ্গে এটি লঙ্ঘন করেছিল, কারণ তারা তাকে সম্মান করত না। তারা ওবামাকেও সম্মান করত না। কিন্তু তারা আমাকে সম্মান করে।

শুনুন, পুতিন সে সময় ভীষণ চাপের মধ্যে ছিল। তাকে একদম ভুয়া একটা ষড়যন্ত্রের শিকার বানানো হয়েছিল, যেখানে তাকে আর রাশিয়াকে ব্যবহার করা হয়েছিল। ‘রাশিয়া, রাশিয়া, রাশিয়া’—এই গল্পটা শুনেছেন? এটা ছিল ভুয়া একটা ষড়যন্ত্র—হান্টার বাইডেন, জো বাইডেনের কেলেঙ্কারি, হিলারি ক্লিনটন, অ্যাডাম শিফ (একজন ডেমোক্র্যাট), এদের ষড়যন্ত্র। পুতিনকে এর ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছিল। এবং সে সত্যিই গেছে। কিন্তু আমরা যুদ্ধে জড়াইনি।

তাকে এমন সব অভিযোগের মুখে পড়তে হয়েছিল, যার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই ছিল না। এগুলো বাইডেনের বাথরুম থেকে বের করা হয়েছিল, তার শোবার ঘর থেকে বের করা হয়েছিল। এটা ভয়ঙ্কর ছিল। ৫১ জন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মিলে পুরো ব্যাপারটাকে একটা প্রতারণা হিসেবে চালিয়ে দিয়েছিলেন। আর পুতিনকে এইসব সহ্য করতে হয়েছিল।

আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি—তিনি হয়তো ওবামা আর বুশের সঙ্গে করা চুক্তি ভেঙেছিলেন, হয়তো বাইডেনের সঙ্গেও করেছেন। হতে পারে, আবার না-ও হতে পারে। আমি জানি না আসলে কী ঘটেছিল। কিন্তু আমার সঙ্গে সে চুক্তি ভাঙেননি। তিনি (পুতিন) একটি চুক্তি করতে চান। আমি জানিনা আপনি চুক্তি করতে পারেন কি-না। 

জেলেনস্কিকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্পের বক্তব্য: সমস্যা হলো, আমি আপনাকে কঠোর হতে সাহায্য করেছি। কিন্তু আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া আপনি এরকম কঠোর হতে পারতে না। আপনার জনগণ খুবই সাহসী। কিন্তু আপনাকে হয় একটা চুক্তি করতে হবে, নয়তো আমরা সরে যাবো। আর যদি আমরা সরে যাই, তাহলে আপনাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। আমি মনে করি, সেটা ভাল কিছু হবে না। কিন্তু আপনাদের লড়তেই হবে।

তবে আপনার হাতে শক্ত কিছু নেই। কিন্তু একবার চুক্তি স্বাক্ষর হলে, আপনারা অনেক ভালো অবস্থানে চলে যাবেন। তবে আপনি একেবারেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না। এটা মোটেও ভালো ব্যাপার নয়। আমি স্পষ্ট করেই বলছি, এটা মোটেও ভালো আচরণ নয়।

ঠিক আছে। আমি মনে করি, আমরা যথেষ্ট দেখেছি। আপনি কী মনে করেন? টেলিভিশনে এটা দুর্দান্তভাবে প্রচারিত হবে, এটা আমি বলতে পারি!

‘ইউক্রেনের নেতা থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন জেলেনস্কি’

এদিকে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির এই উত্তপ্ত বৈঠকের পর সাংবাদিক ও সাবেক সিআইএ (মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা) বিশ্লেষক জন কিরিয়াকো বলেছেন, জেলেনস্কি ইউক্রেনের নেতা হিসেবে তার যোগ্যতা হারিয়েছেন এবং তাকে সরিয়ে দেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, ‘সব পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্যর জন্যই জেলেনস্কির ইউক্রেনের নেতা থাকার সময় ফুরিয়ে গেছে। তিন মাসের মধ্যে যদি তিনি (জেলেনস্কি) লন্ডন বা এমন কোনো জায়গায় বসবাস করতে শুরু করেন, তবে আমি অবাক হবো না।’

মার্শাল ল’ ব্যবহার করে জেলেনস্কির ক্ষমতায় থাকার কথা উল্লেখ করে জন আরও বলেন, তিনি এর আগে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাকে অপসারণ করা প্রয়োজন। কারণ তিনি শান্তির পথে বাধা সৃষ্টি করছেন।

জনের ভাষ্য- জেলেনস্কিকে সরিয়ে এমন একজনকে নির্বাচিত করা উচিত যিনি রাশিয়া সরকারের সাথে আন্তরিকভাবে আলোচনা করতে পারেন।

জন উল্লেখ করেন, ওয়াশিংটনের সহায়তা না থাকলে ইউক্রেন যুদ্ধ ‘শেষ’ বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে। 

তিনি বলেন, ‌'[জেলেনস্কি] ন্যাটোতে ভরসা করতে পারবেন না…যদি যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে সরিয়ে নেয়। আর এটি এখন খুবই স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সংঘর্ষ শেষ হয়ে গেছে। এটি শেষ। এটি আজকের বাস্তবতা।’


অনুবাদ: পনিচুজ্জামান সাচ্চু

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।