রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে রমজান মাসের গুরুত্ব ছিল অসীম। তিনি কয়েক মাস আগে থেকেই এ মাসের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। যখন রজব মাস শুরু হতো, তখনই তাঁর অন্তরে রমজানের জন্য গভীর আগ্রহ জেগে উঠত। তিনি আল্লাহর দরবারে দোয়া করতেন : হে আল্লাহ! আমাদের রমজান পর্যন্ত জীবিত রেখো।
(আদ-দুআ লিত তাবরানি, পৃষ্ঠা-২৮৪, হাদিস : ৯১২)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন রজব মাস আসত, তখন রাসুল (সা.) এই দোয়া
পড়তেন : হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করো এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দাও।
(তাবরানি ফিল আওসাত, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৪০, হাদিস : ৪৭৭৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের হিসাব এত গুরুত্ব সহকারে রাখতেন যে অন্য কোনো মাসের হিসাব ততটা গুরুত্ব দিয়ে রাখতেন না। অতঃপর তিনি রমজানের চাঁদ দেখেই রোজা পালন করতেন। আর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে তিনি শাবান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করতেন। এরপর রোজা রাখতেন।
(সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৩২৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের আগমনের আনন্দ প্রকাশ করতেন আর আগে থেকেই তার প্রস্তুতি নিতেন এবং শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন। আয়েশা (রা.) আরো বলেন, রমজান মাস ছাড়া আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা রাখতে দেখিনি।
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৬৯, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৫৬)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রমজান শুরু হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক বন্দিকে মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক অভাবীকে সাধ্যমতো মুক্ত হাতে দান করতেন।
(শুআবুল ঈমান, বায়হাকি, হাদিস : ৩৬৩৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো বলতেন—যখন রমজান মাস শুরু হয়, তখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং অবাধ্য শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৯৮)
অযুত কল্যাণের উৎস এই মাহে রমজান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করে বলেন—হে কল্যাণের অন্বেষণকারী! সামনে এগিয়ে আসো, আর হে মন্দের পথিক! বিরত হও। আল্লাহর কাছে বহু মানুষ আছে, যাদের তিনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন, এবং এ প্রক্রিয়া রমজানের প্রতিটি রাতেই অব্যাহত থাকে।
(জামে আত-তিরমিজি, হাদিস : ১৩৯৫)
শাবানের শেষ রাতে প্রদত্ত নবীজি (সা.)-এর খুতবা
শাবান মাসে, বিশেষত এর শেষ রাতে এবং রমজানের প্রথম দিনগুলোতে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবিদের একত্র করতেন, রমজানের গুরুত্ব নিয়ে খুতবা দিতেন, এর অসীম ফজিলত বর্ণনা করতেন এবং এ মহিমান্বিত মাসের কদর করতে উদ্বুদ্ধ করতেন।
যাতে তারা আগেভাগেই রমজানের অপেক্ষায় থাকে এবং সম্পূর্ণ একাগ্রচিত্তে এই বরকতময় মাসের রহমত ও কল্যাণে নিমগ্ন হতে পারে।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
রাসুলুল্লাহ (সা.) খুতবায় বলেন—‘হে মানুষ! এক মহান মাস তোমাদের ওপর ছায়া বিস্তার করছে—এটি এক অত্যন্ত বরকতময় মাস। আল্লাহ এ মাসের রোজাকে তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন এবং এর রাত্রিগুলোর কিয়াম (তারাবি)-কে সুন্নত করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে, সে যেন অন্য কোনো মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করে, সে যেন অন্য সময় সত্তরটি ফরজ পালন করল। এটি ধৈর্যের মাস, আর ধৈর্যের প্রতিদান হলো জান্নাত। এটি পারস্পরিক সহানুভূতির মাস এবং এমন একটি মাস, যাতে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়।’ (শুআবুল ঈমান, বায়হাকি, হাদিস : ৩৬০৮)
রমজান মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বোঝাতে তিনি আরো বলেন, এই মাসে যে ব্যক্তি তার দাস-দাসীদের (কর্মচারী বা অধীনদের) দায়িত্ব হালকা করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দান করবেন।
(শুআবুল ঈমান, বায়হাকি, হাদিস : ৩৬০৮)
আর রমজানের প্রতি ভালোবাসার এমন এক উদাহরণ তিনি উপস্থাপন করেছেন, যা অন্য কোনো মাসে নেই। অন্যান্য মাসে চাঁদ দেখার জন্য দুই ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির সাক্ষ্য আবশ্যক, কিন্তু রমজানের জন্য এর বিশেষ মর্যাদা এই যে একজন ব্যক্তি চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিলেই তা গ্রহণযোগ্য হয় এবং পরদিন থেকেই রোজা রাখতে বলা হয়েছে।
(সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৩৪০-২৩৪১)
উম্মাহ২৪ডটকম: আইএ