Home শীর্ষ সংবাদ নতুন দলের নেতৃত্বে নাহিদ-আকতার

নতুন দলের নেতৃত্বে নাহিদ-আকতার

অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আকতার হোসেনের নেতৃত্বেই আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল। এ ছাড়া দলটিতে মুখপাত্র ও মুখ্য সংগঠকের পদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমই চূড়ান্ত। তবে নতুন সৃজন করা জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদে পরিবর্তন আসছে বলে জানা গেছে।

নতুন দলের নেতৃত্বে নাহিদ-আকতারএই দুটি পদে শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদ এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর নাম আলোচনায় ছিল।

সমাঝোতার ভিত্তিতে এই দুটি পদ প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে নতুন রাজনৈতিক দলে থাকছেন না বলে জানিয়েছেন আলী আহসান জোনায়েদ। তাঁর সঙ্গে শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব রাফে সালমান রিফাতও দলটিতে থাকছেন না বলে জানিয়েছেন।

আলী আহসান জোনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাত বর্তমানে চীন সফরে রয়েছেন দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে। তাঁদের

চীন সফর নিয়েও আপত্তি ওঠে নাগরিক কমিটিতে। গত সোমবার এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেয় সংগঠনটি।

আলী আহসান জোনায়েদের সঙ্গে নাগরিক কমিটির নেতাদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে নতুন রাজনৈতিক দলের সদস্যসচিব পদ নিয়ে। তাঁর অনুসারীরা তাঁকে এই পদে দাবি করলেও আরেকটি অংশ নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে চান। এ নিয়ে টানাপড়েন চলে নাগরিক কমিটিতে।

আলী আহসান জোনায়েদ তাঁর ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি তরুণদের নেতৃত্বে যে নতুন রাজনৈতিক দলটি আসছে, সেখানে আমি থাকছি না। সে কথা আমি আরো সপ্তাহখানেক আগেই জানিয়েছি দলের নেতাদের। বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে ও জাতির নজর নতুন দলের ওপর নিবদ্ধ রাখতে নীরবতা বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু চারপাশের গুঞ্জন থামছে না। তাই স্পষ্ট করে রাখছি।

জোনায়েদ লিখেছেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দল দেশের স্বার্থেই প্রয়োজন। নতুন এই রাজনৈতিক দলের প্রতি আমার দোয়া ও শুভ কামনা রইল। জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সততা ও ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত না হোক এই দল। দুর্নীতির সব সুযোগ বন্ধ করে নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হোক এই দলে।’ তিনি বলেন, ‘বারবার বলার পরও যদিও হয়নি, তবু চাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার যথাযথ অনুসরণ ও ইনক্লুসিভনেস এই দলের বৈশিষ্ট্য হোক। দুঃখজনক বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার পরও ট্যাগিং ও ট্যাবুর রাজনীতি থেকে মুক্ত হয়ে নতুন ধারার রাজনীতি এই দলের মাধ্যমে শুরু হোক—এই প্রত্যাশাই করি। আশা করি, অভ্যুত্থানের সময়ে আমাদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা ও সহযোগিতার সম্পর্ক ছিল, নতুন রাজনৈতিক পথচলায়ও আমাদের পারস্পরিক এই সম্পর্ক ও শ্রদ্ধাবোধ অপরিবর্তিত থাকবে। নতুন দল, নাহিদ ইসলাম ও নবনেতৃত্বের জন্য শুভ কামনা রইল।’

এদিকে জোনায়েদের ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করে রাফে সালমান রিফাত লিখেছেন, ‘২৮ তারিখে ঘোষিত হতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলে আমিও থাকছি না। তবে আমার রাজনৈতিক পথচলা থেমে থাকবে না। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার যে জোয়ার তৈরি হয়েছিল তাতে শর্ট টার্মে খুব ভালো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা রাখি না আপাতত। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও মনে রাখি, রাজনীতি একটা লম্বা রেস। ধৈর্য নিয়ে লম্বা সময়ের জন্যই আমাদের এই রেসে টিকে থাকতে হবে। আমরা নতুন সেই বাংলাদেশের প্রত্যাশী, যেটা হবে সত্যিকার অর্থেই ডেমোক্রেটিক, ইনক্লুসিভ, বৈষম্যহীন ও আধিপত্যমুক্ত। ঐক্যবদ্ধতা ও মধ্যম পন্থাই হবে আমাদের শক্তি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের জিহাদ চলবে। আঞ্চলিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও আমাদের লড়াই চলবে। বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য আমরা জান দিয়ে লড়ব। নতুন দলের জন্য দোয়া এবং শুভ কামনা রইল।’

শোনা যাচ্ছে, আলী আহসান জোনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাতের নতুন রাজনৈতিক দলে না থাকার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর জাতীয় নাগরিক কমিটিতে থাকা শিবিরের সাবেক অনেক সদস্যই নতুন রাজনৈতিক দলে থাকবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে কতজন সদস্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি।

এদিকে আলী আহসান জোনায়েদ না থাকার খবর জানানোর পর নতুন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়কের পদটি শূন্য হয়। এই পদের দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে, তা নিয়ে গতকাল বুধবার বিকেল ৩টা থেকে আলোচনায় বসেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা।

জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক সূত্র বলছে, এই পদে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে নিয়েই আলোচনা করছেন শীর্ষ নেতারা, যাঁকে নতুন দলে সমঝোতার ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদে রাখা হয়েছিল। আর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিনকে নিয়ে আলোচনা চলছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, দলটির শীর্ষ পদে নারী নেতৃত্ব থাকছে না বলে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। সেই সমালোচনার জন্য এই পদে সামান্তা শারমিনকেই রাখার চিন্তা-ভাবনা চলছে। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদ ছাড়াও নতুন আরো তিনটি পদ সৃষ্টি করে গুরুত্বপূর্ণ সাবেক ছাত্রনেতাদের জায়গা করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও জানা যায়। এই পদগুলো হলো মুখ্য সমন্বয়ক, কোষাধ্যক্ষ ও দপ্তর সম্পাদক। এসব পদ এবং এর বাইরের গুরুত্বপূর্ণ পদে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, তাসনিম জারা, আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম সদস্যসচিব অনিক রায়, মাহবুব আলম ও অলিক মৃকে দেখা যেতে পারে। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল, মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এবং মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদকেও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা যেতে পারে।

এদিকে গতকাল বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদারকে আহ্বায়ক এবং জাহিদ আহসানকে সদস্যসচিব করে নতুন ছাত্রসংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। সূত্র বলছে, নতুন এই ছাত্রসংগঠন নতুন রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন হিসেবেই কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন এই ছাত্রসংগঠনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ’।

আরও পড়তে পারেন-

তবে নতুন দলের নাম কী ঠিক করা হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। নাগরিক কমিটির একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই ছাত্রসংগঠনের নামের আদলেই নতুন দলের নাম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে দলটির নাম হতে পারে ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক নাগরিক সংসদ’। তবে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ ও ‘বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি’ নাম দুটি আলোচনায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

নতুন এই রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশের আগে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এই সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম উপস্থিত থাকতে পারেন। সংবাদ সম্মেলনে দলের নাম, নেতৃত্ব ও কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। আর আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে আত্মপ্রকাশ করবে নতুন এই দল।

ডিএমপিকে অবহিতকরণ : আগামীকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন দলের আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। জাতীয় নাগরিক কমিটির সহকারী দপ্তর সেল সম্পাদক আবু সাঈদ লিয়নের সই করা চিঠিতে বলা হয়, ‘আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি মানিক মিয়া এভিনিউয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অবহিত করা হলো।’ এদিকে নতুন দলের আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানে গণতান্ত্রিক সমমনা সব রাজনৈতিক দলকে দাওয়াত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমাদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। আমরা আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানে গণতান্ত্রিক সমমনা সব রাজনৈতিক দলকে দাওয়াত দেব। এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি কমিটি কাজ করছে। আর আমাদের কমিটি যাতে একপাক্ষীয় না হয় তা নিয়ে শীর্ষ নেতারা কাজ করছেন। শীর্ষ পদগুলোতে নারী নেতৃত্বসহ যোগ্যতাসম্পূর্ণ সব ছাত্রনেতা থাকবে বলে আমরা আশা করছি।’

চার পদ রেখে সব সেল বিলুপ্ত ঘোষণা: নতুন দল গঠনকে কেন্দ্র করে চার পদ রেখে সব সেল বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। গতকাল সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ১১তম সাধারণ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক ছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির অবশিষ্ট অর্গানোগ্রাম, নির্বাহী কমিটি, সেল ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আসন্ন রাজনৈতিক দলে যোগদানকারী সব কেন্দ্রীয় সদস্যের পদ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি দল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত বহাল থাকবে। রাজনৈতিক দলে অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সদস্যের জানাক সদস্যপদ বাতিল হিসেবে গণ্য হবে।

দলে যোগ দিচ্ছেন না এমন সদস্যদের সদস্য পদ বহাল থাকবে। তবে আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী ১৫ দিন অনানুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।