শেখ পরিবারের বাইরে পূর্বাচলের প্লট যারা পেয়েছেন তাদের সবারই রয়েছে প্রশ্নহীন দলীয় আনুগত্য। অন্তত বিগত সরকারের সময় তাদের কর্মকাণ্ড থেকে এটাই প্রমাণিত হয়। আওয়ামী সরকারকে টিকিয়ে রাখতে প্লট গ্রহীতারা তাদের সর্বোচ্চটাই দিয়েছেন, বিনিময়ে বিভিন্ন আকারের প্লট পেয়েছেন। এখন সময় এসেছে লটারির বাইরে যে সাড়ে ১১শ’ প্লট যারা পেয়েছেন তারা প্লট পেতে পারেন কি না তা যাচাই করে দেখা। শেখ মুজিব পরিবারের সদস্যরা তো পেয়েছেন দেশটা তাদের সম্পত্তি মনে করার কারণে। মুজিব পরিবারের বর্তমান জীবিত সদস্যদের সবাই ১০ কাঠা করে প্লট নিয়েছেন। সম্মিলিতভাবে নিয়েছেন তারা ৬০ কাঠার প্লট।
এসব প্লটের প্রায় সবই দলীয় বিবেচনায় আওয়ামী রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টদের দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারের একজন ছাড়া বাকি ছয়জনের নামে প্লট বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, শেখ রেহানা পেয়েছেন জাতির জনক ট্রাস্টের সহসভাপতি হিসেবে, সচিব ওয়াজেদ জয় নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা হিসেবে, সায়মা ওয়াজেদ নিয়েছেন বাংলাদেশে ওটিজম বিষয়ক জাতীয় কমিটির চেয়ারপার্সন হিসেবে। এ ছাড়া রেহানা রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক নিয়েছেন জাতির জনক ট্রাস্টের সদস্য হিসেবে। দুই বোনের পরিবারের ছয়জন নিয়েছেন ১০ কাঠা করে ৬০ কাঠা। আওয়ামী রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট এমপিরা প্রায় সবাই ১০ কাঠা করে প্লট নিয়েছেন। এমপিদের মধ্যে তিন কাঠা ও ৫ কাঠা প্লটও পেয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীনদের সাথে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তারা পেয়েছেন ১০ কাঠা। অবশ্য আওয়ামী রাজনীতির বাইরে আওয়ামী বিরোধী রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ২ জন সংসদ সদস্যও ১০ কাঠা করে ২০ কাঠার প্লট পেয়েছেন। আরো হয়তো আছে কিন্তু তারা সবাই কম পরিচিত।
বিশেষ বিবেচনায় পূর্বাচলের প্লট প্রাপ্তদের মধ্যে ৯ জন বিচারপতি রয়েছেন। বিচারপতিরা ৫ থেকে ১০ কাঠার প্লট পেয়েছেন। আবার তৎকালীন আওয়ামী লীগের একান্ত অনুগত অনেক আমলা রয়েছেন তারাও ৩ থেকে ১০ কাঠার প্লট পেয়েছেন। তালিকা থেকে দেখা যায়, যারা খুব বেশি সার্ভিস দিয়েছেন শেখ হাসিনার সরকার চালাতে তাদের ১০ কাঠা করে প্লট দেয়া হয়েছে। কিছু সামরিক আমলার নামও পাওয়া গেছে যারা ৩ থেকে ৫ কাঠার প্লট পেয়েছেন।
বিরোধী দলের লোকদের শারীরিক নির্যাতনকারী, বিরোধী দলের নেতার ফোন কল ফাঁসকারী এবং বিরোধীদের মানসিক নির্যাতনে সবচেয়ে বেশি পারঙ্গম সেনাবাহিনীর বরখাস্ত মেজর জেনারেল, এনটিএমসি’র সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানও পেয়েছেন ১০ কাঠার প্লট। সচিবদের মধ্যে নজিবুর রহমান ১০ কাঠা, শেখ শামীম ইকবাল ১০ কাঠা, এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী সাড়ে ৭ কাঠা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও সাবেক সচিব ফজলে কবির পেয়েছেন সাড়ে ৭ কাঠা, সাবেক নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ সাড়ে ৭ কাঠার প্লট পেয়েছেন। এমনকি তখনকার সময়ে সিএমএম রেজাউল করিম চৌধুরীও পেয়েছেন ১০ কাঠার প্লট।
তবে এমন অনেক সচিব আছেন তাদের কাজের ধরন অনুযায়ী ৩ কাঠার প্লট দেয়া হয়েছে। কিন্তু একজন মেট্রো পলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পেয়েছেন ১০ কাঠার প্লট, এমন প্লট বরাদ্দে অনেকেই বিস্মিত। এর বাইরে পিডিবির চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদ সাড়ে ৭ কাঠা, মিল্কভিটার চেয়ারম্যান নাদির হোসেন পেয়েছেন সাড়ে ৭ কাঠার প্লট। চিকিৎসকদের মধ্যে অধ্যাপক ডাক্তার কনক কান্তি বড়ুয়া ৫ কাঠা, ডা: পার্থ প্রতীম দাস ও ডা: অনিন্দিতা দত্ত মিলে পেয়েছেন ৫ কাঠার প্লট। ডা: কনক কান্তি বড়ুয়া ৫ কাঠার প্লট পেলেও মন্ত্রী হিসেবে কনক কান্তির ভাই দিলীপ বড়ুয়া পেয়েছেন ১০ কাঠার প্লট।
পূর্বাচল প্রকল্পে ৪২ জন সাংবাদিকের নামও পাওয়া গেছে যারা ৩ থেকে ৫ কাঠার প্লট পেয়েছেন। পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দের তালিকায় নামের পাশে পরিচয় সাংবাদিক লেখা এমন কেউ সাড়ে ৭ কাঠা অথবা ১০ কাঠার প্লট পাননি বলে রাজউকের সূত্র জানিয়েছেন। তবে আমলা, রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক যাদের বিশেষ নাম আছে তাদের প্লটের আকার বেশ বড়। কৌশলগত কারণে এই বিশেষ নামের ব্যক্তিদের উল্লেখ করা হলো না। এসবের বাইরে কিছু অভিনেতা ও অভিনেত্রীও রয়েছেন যারা ৩ থেকে ১০ কাঠার প্লট পেয়েছেন। এর মধ্যে মাহবুবুল আলফিন শুভ ১০ কাঠা, জয়া আহসান ১০ কাঠা, শমি কায়সার পেয়েছেন সাড়ে ৭ কাঠার প্লট। অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনও বিশেষ বিবেচনায় ৫ কাঠার প্লট পেয়েছেন। মাহফুজ আহমেদ পেয়েছেন ৫ কাঠার। এমনকি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ক্যামেরাম্যান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহায়কও পূর্বাচলের প্লট পেয়েছেন।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
আমলাদের মধ্যে আরো যারা বিগত আওয়ামী সরকারের সময় নির্বাহী আদেশে প্লট পেয়েছেন তারা হলেন- ড. শামসুল আলম ৫ কাঠা, শেখ ইউসুফ হারুন ৫ কাঠা, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক-৩ ড. মো: জুলফিকার আলী ৫ কাঠা, সচিব আব্দুল হান্নান ৩ কাঠা, রাষ্ট্রদূত গিয়াস উদ্দিনের নাম আছে কিন্তু তাকে কয় কাঠা দেয়া হয়েছে সেটা উল্লেখ নেই, কাজী এনামুল হাসান ৩ কাঠা, দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক নাসিম আনোয়ার ৩ কাঠা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আমিন আহমেদ ৫ কাঠা, এমনকি একজন মন্ত্রীর এপিএস মনমত রঞ্জন বাড়ৈকেও ৩ কাঠার প্লট দেয়া হয়েছে।
সাংবাদিকদের মধ্যে প্লট দেয়া হয় প্রায় অর্ধ শতাধিককে। এই পেশাজীবীদের মধ্যে এমন অনেকের নাম আছে যাদের ঢাকার মূল ধারা সাংবাদিকরা চিনেন না বললেই চলে। আবার অনেকেই বেশ পরিচিত সাংবাদিক। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ৭.৫ কাঠার প্লটটি দেয়া হয়েছে স্বদেশ রায়কে। এ ছাড়া সাংবাদিক তালিকায় নাম আছে মো: নাজমুল হাসান ৩ কাঠা, আবু সুফিয়ান ৫ কাঠা, মাহবুব হোসেন খান ৫ কাঠা, মুসলিম আহমেদ পিপুল ৫ কাঠা, অশোখ চৌধুরী ৫ কাঠা, মো: ফারুক হোসেন ৩ কাঠা, এস এম গোর্কী ৫ কাঠা, সাইফুল ইসলাম কল্লোল ৩ কাঠা, রফিকুল ইসলাম সবুজ ৩ কাঠা, শামিম আরা তানিয়া, শাহান আরা ও রাজীব হাসানকে একত্রে ৩ কাঠা দেয়া হয়েছে, শাহরিয়ার রশীদ ৩ কাঠা, নুরুল আমিন ৩ কাঠা, রতন কান্তি দেবাশীষ ও শওকত জামিল খানকে কয় কাঠা দেয়া হয়েছে লিস্টে বলা নেই। ফেরদৌসী বেগম প্রিয়ভাষিণী ৩ কাঠা, জিল্লুর রহমান ৫ কাঠা, মো: মোতাহার হোসেন, আলিমুর রহমান পিয়ারা ও মো: ফজলুল হককে দেয়া হয়েছে একত্রে ৩ কাঠা, দুলাল কৃষ্ণ আচার্য ৩ কাঠা, দীপ আজাদ ৫ কাঠা, এজেডএম সাজ্জাদ হোসেন ৩ কাঠা, সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম ৩ কাঠা, কাজী কামরুল ইসলাম ৩ কাঠা, আমিনুর রহমান ৩ কাঠা, মধুসুদন মন্ডল ৩ কাঠা, কামরুল হাসান ৩ কাঠা, দিবাকর ঘোষ ৩ কাঠা, আরেফিন ফয়সাল ৩ কাঠা, মামুন আবেদীন ৩ কাঠা, ফারাহ জাবীন শাম্মি ৩ কাঠা, মো: মজিবুর রহমান ৩ কাঠা, রাহুল রাহা ৫ কাঠা, মো: শিহাবুদ্দিন খান ৫ কাঠা, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ক্যামেরাম্যান ইউসুফ হোসেন ৩ কাঠা, কার্তিক চ্যাটার্জি ৫ কাঠা, বিএম জাহাঙ্গীর ৩ কাঠা, আশরাফুল হক ৫ কাঠা, বিটিভির দিদারুল আলম ৫ কাঠা, প্রধানমন্ত্রীর উপ- প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন ৩ কাঠা, ড. রমনী মোহন দেবনাথ ৩ কাঠা।
মাইজভান্ডার দরবার শরীফকেও ৩ কাঠার প্লট দেয়া হয়েছে। মাইজভান্ডারিদের মধ্যে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে কল্পিত অভিযোগে মামলা করেছিলেন। এর পুরস্কারস্বরূপ মাইজভান্ডার দরবার শরীফকে ওই জমি উপহার দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এর বাইরে সাবেক ছাত্রলীগ সেক্রেটারি সিদ্দিকী নাজমুল আলমসহ ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদেরও বিভিন্ন আকারের প্লট দেয়া হয়েছে। পূর্বাচলের প্লট গ্রহীতাদের নামের সাথে দেয়া পরিচয় থেকে এখানে প্লট গ্রহীতাদের পরিচয় তুলে দেয়া হয়েছে।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ