আপনি আপনার দীর্ঘ জীবনের অনেকটা সময় ধরে নিয়মিতই দাঁত ব্রাশ করে আসছেন। কিন্তু আপনি কি নিশ্চিত যে আপনি সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করছেন? পরিষ্কার মুখ ও সুস্থ দাঁতের জন্য চারটি মূল উপাদান রয়েছে। সেগুলো হলো- প্রতিদিন দুবেলা ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা, দিনে একবার ফ্লস করা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা এবং নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া।
এমনটাই বলেছেন আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র ও ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ডেন্টিস্ট্রির ক্লিনিক্যাল অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. ম্যাথিউ মেসিনা। তিনি বলেন, এই চারটি কাজ ঠিকভাবে করলে আপনি ইতোমধ্যেই ভালো অবস্থানে আছেন।
দাঁতের স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক কারণে। শুধু সতেজ নিঃশ্বাস ও ঝকঝকে দাঁতের জন্য নয় বরং মাড়ির রোগ ও পেরিওডোন্টাল রোগ প্রতিরোধ করতেও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখা জরুরি। কারণ এগুলো অনেক সময় শরীরের অন্যান্য অংশের স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এমনটাই জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো স্কুল অব ডেন্টাল মেডিসিনের অধ্যাপক ও ক্লিনিক্যাল অ্যাফেয়ার্স এবং প্রফেশনাল প্র্যাকটিস বিভাগের সহযোগী ডিন ডা. মাইকেলা গিবস।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমান স্বাস্থ্য অভ্যাসে ছোট পরিবর্তন আনার মাধ্যমেও ওরাল হেলথের ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব। জেনে নিন কী করতে হবে।
পরিষ্কার দাঁতের জন্য সঠিক পদ্ধতি
মেসিনা বলেন, ব্রাশ করা, ফ্লস করা এবং মুখ ধোয়ার মূল লক্ষ্য হলো দাঁতে থাকা ব্যাকটেরিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা। তিনি আরও বলেন, “আমাদের এই ব্যাকটেরিয়াগুলোকে নাড়াচাড়া করতে হবে, তাদের সরিয়ে ফেলতে হবে এবং তারা যে খাদ্য গ্রহণ করে তা কমিয়ে আনতে হবে।”
দাঁতে থাকা ব্যাকটেরিয়া চিনি পুড়িয়ে অ্যাসিড তৈরি করে, যা দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে। দুর্বল এনামেল থেকে ক্যাভিটি তৈরি হয়। তবে দাঁতে ব্যাকটেরিয়ার চিনি পাওয়ার সময় কমিয়ে আনা এবং ফ্লুরাইডযুক্ত পণ্য ব্যবহার করলে এই ক্ষয় রোধ করা সম্ভব বলে জানালেন মেসিনা।
গিবস বলেন, “যখন আপনি কাজ সঠিক ক্রম মেনে করবেন সেটি অর্থবহ হয়ে উঠবে। তাই প্রথমে ফ্লস করা উচিত যাতে দাঁতের ফাঁকের ময়লা দূর হয়ে যায়। এরপর ব্রাশ করার সময় দাঁত তাহলে আরও ভালোভাবে পরিষ্কার করা যায়। ব্রাশ করলে দাঁতের বাকি অংশও পরিষ্কার হয় “
আরও পড়তে পারেন-
- ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা
- কিশোর অপরাধ রোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
- আদর্শ পরিবার গঠনে যে সব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরী
- ইসলামে সামাজিক সম্পর্ক এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার গুরুত্ব
- মানুষ মারা যাওয়ার পর, তাঁর আত্মার কি হয় ?
তিনি আরও বলেন, “এ নিয়ে তেমন বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি। তবে পেশাদারদের মতে এটিই সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য মানদণ্ড।”
নর্থ ক্যারোলাইনা ইউনিভার্সিটির অ্যাডামস স্কুল অব ডেন্টিস্ট্রির কারিকুলাম বিভাগের সহযোগী ডিন ড. রোসিও বি. কুইনোনেজ বলেন, “হ্যাঁ, সম্পূর্ণভাবে দাঁত পরিষ্কার রাখতে ব্রাশ এবং ফ্লস দুটোই দরকার।” তিনি বলেন, “ফ্লস করলে দাঁতের প্রায় ৪০ শতাংশ অংশ পরিষ্কার হয়, আর ব্রাশ করলে বাকি ৬০ শতাংশ পরিষ্কার হয়।
টুথপেস্ট কি ধুয়ে ফেলবেন?
যদি আপনিও অনেকের মতো দাঁত ব্রাশ করেই কুলকুচি করে মুখের টুথপেস্ট ফেলে দেন, তাহলে এখন থেকে এটা আর না করার পরামর্শ দেন গিবস। কুইনোনেজের মতে যতটা সম্ভব থুতু ফেলে দিন এবং অবশিষ্ট টুথপেস্টটি মুখে রেখে দিন।
এ বিষয়ে গিবস বলেন, “মূল বিষয় হলো দাঁতে যতটা বেশি সম্ভব টুথপেস্টের ফ্লোরাইড ধরে রাখা। ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করার পর কুলি করা উচিত নয়। কারণ ব্রাশ করার পর অন্তত ৩০ মিনিট দাঁতে ফ্লোরাইড থাকলে এর উপকারিতা পাওয়া যায়।”
তার মতে, দাঁত ব্রাশ করার পর সঙ্গে সঙ্গে ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ধুয়ে ফেললে এর উপকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে মেসিনা বলেন, “ফ্লোরাইড যত বেশি সময় দাঁতে থাকে, এর প্রভাব তত বেশি হয়। আমি নাস্তার পর এবং ঘুমানোর আগে ব্রাশ করার পরামর্শ দেওয়ার কারণ এটি দুর্ঘটনাক্রমে নয়। এই সময়গুলোতে আমরা সাধারণত দীর্ঘ সময়ের জন্য কিছু খাই না, যা দাঁতে থাকা ফ্লোরাইডের কার্যকারিতাকে ব্যাহত করতে পারে।”
গিবস পরামর্শ দেন, “যদি আপনি পানি পান করতে চান বা ফ্লোরাইডবিহীন মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে চান, তাহলে তা ব্রাশ করার সঙ্গে সঙ্গে করবেন না। ফ্লোরাইড যেন দাঁতের উপর ভালোভাবে বসতে পারে, সে জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।”
কিন্তু মাউথওয়াশ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখা দরকার। কিনোনেজের মতে, যেসব মাউথওয়াশে অ্যালকোহল রয়েছে, সেগুলো এড়ানো ভালো। তবে যদি মাউথওয়াশে ফ্লোরাইড থাকে, তাহলে তা দৈনন্দিন পরিচর্যার শেষ ধাপে ব্যবহার করলে দাঁত আরও মজবুত হতে পারে।
নিয়মিত অভ্যাস করাটাই মূল বিষয়
তবে মেসিনা বলেন, ব্রাশ ও ফ্লস করার নির্দিষ্ট ক্রমের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়মিতভাবে তা করা। তিনি বলেন, “যেভাবে আপনি প্রতিদিন সবচেয়ে কার্যকরভাবে কাজটি করতে পারেন সেদিনই করেন। যদি কোনো ধাপ বাদ পড়ে যায়, তাহলে একবার একটি পদ্ধতি চেষ্টা করুন। একটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে পরে আরেকটি দেখুন এবং যাচাই করুন কোনটি আপনার জন্য ভালো কাজ করে।”
গিবস বলেন, সাধারণত ইলেকট্রিক টুথব্রাশ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে এটি খরচ সাপেক্ষ। তাই চাইলে ম্যানুয়াল টুথব্রাশও ব্যবহার করা যাবে। আর দুই দাঁতের মাঝের অংশ পরিষ্কারের জন্য ওয়াটার পিক্স ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু দাঁতের যত্নে ফ্লসিংয়ের মানদণ্ড হচ্ছে সোনার মতো।”
কুইনোনেজ বলেন, “ভালো ওরাল হাইজিন বজায় রাখার লড়াইয়ে একটি ভালো অস্ত্র হতে পারে পানি পান করা। তবে এটি অবশ্যই সাধারণ পানি। কোনো ফ্লেভারযুক্ত বা কার্বনেটেড পানি নয়।
গিবস এ বিষয়ে আরও বলেন, “পানি পান করা শুধু জীবাণু ধুয়ে ফেলতেই সাহায্য করে না বরং এটি মুখে স্বাভাবিক পিএইচ ব্যালেন্সও বজায় রাখতে সহায়তা করে। এমনকি স্বাস্থ্যকর খাবার, যেমন ফল ও সবজি মুখে পিএইচ কমিয়ে অ্যাসিডিক পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যা দাঁতের ক্ষয় বৃদ্ধি করতে পারে।
মেসিনা বলেন, “যদি আপনি দিনে দুইবার দাঁত মাজেন, একবার ফ্লস করেন এবং একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করেন এবং নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে যান। তাহলে আপনি অবশ্যই দাঁতের যত্নের শীর্ষ ১০ শতাংশ ব্যক্তির মধ্যে আছেন। আর এটি সম্পূর্ণ আপনার হাতেই।”
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ