শেখ হাসিনা ওয়াজিদের বৈরী শাসনের অবসানের পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান (এক সময়কার পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান) আবারও একে অপরকে ভাই হিসেবে গ্রহণ করছে। বেশ কয়েক বছর ধরে হাসিনা ওয়াজেদ বাংলাদেশি জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, পাকিস্তান তাদের শত্রু। অনেক পাকিস্তানপন্থী মানুষকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। এমনকি হত্যাও করা হয়েছে।
কিন্তু একটি গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে তার অসম্মানজনক পতন ঘটেছে। উভয় দেশ দ্রুতই পূর্ববর্তী সরকারের সেই প্রোপাগাণ্ডা পরিহার করেছে।
শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ এই সপ্তাহে পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বিধিমালা শিথিল করেছে এবং আমলাতান্ত্রিক বাধা দূর করেছে।
এই পদক্ষেপ দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততা বাড়াবে এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য কার্যক্রমকে উৎসাহিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ইকবাল হুসাইন খান পাকিস্তানি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে এক ভাষণে এই ঘোষণা দেন।
আরও পড়তে পারেন-
- উলামায়ে কেরামের প্রতি মুফতি শফী (রাহ.)এর দরদমাখা নসিহত
- কম্পিউটার চিপ শিল্প: জলবায়ুর উপর ফেলছে ভয়ঙ্কর প্রভাব
- ইরানি বিজ্ঞানীকে যেভাবে হত্যা করে ইসরায়েল
- ব্যতিক্রমী এক ইসলামী আইন গবেষক
- ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে ঠাট্টা-তাচ্ছিল্য জঘন্য গুনাহ
তিনি পাকিস্তানি কূটনৈতিক মিশনের জন্য ঢাকা থেকে ছাড়পত্রের প্রয়োজনীয়তা বাদ দেওয়া সহ ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণের বিষয়টি তুলে ধরেন। হাইকমিশনার স্বীকার করেন, গত দশকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সন্তোষজনক ছিল না। তবে তিনি সম্পর্ক জোরদার করার জন্য বাংলাদেশের নতুন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
ইকবাল হুসাইন আঞ্চলিক সহযোগিতার পক্ষে সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসাও করেন।তিনি আঞ্চলিক বাণিজ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাকে (সার্ক) পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান জানান।
একই সাথে, পাকিস্তান এক দশকেরও বেশি সময় পর প্রথম বাংলাদেশে উচ্চ-পর্যায়ের সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ডিসেম্বরে কায়রোতে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার আগামী মাসে ঢাকা সফরের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।
গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতন সহ বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ইসহাক দার বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ‘হারানো ভাই’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের গুরুত্বের উপর জোর দেন। তিনি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য পাকিস্তানের প্রস্তুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত দেয়।
আসন্ন সফরটি ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময়কার ঘটনাবলীর জন্য পাকিস্তানের কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের দাবি সহ দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলি সমাধানের সুযোগও করে দিবে। যদিও পাকিস্তান বলে যে, ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি এই বিষয়গুলির সমাধান করেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয় দেশকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অমীমাংসিত বিষয়গুলি পুনর্বিবেচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
উষ্ণতার মধ্যে উভয় দেশ পারস্পরিক অর্থনৈতিক সুবিধা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর নজর দিয়ে অংশীদারিত্ব পুনরুজ্জীবিত করতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে।
সূত্র: পাকিস্তানি গণমাধ্যম ‘দ্য ন্যাশন’।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ