।। ডা. তানজিনা রহমান ।।
প্রত্যেক জাতির জন্য আল্লাহ তাআলা পরীক্ষা রেখেছেন। দিন শেষে সবার একটিই পরিণতি, ‘মৃত্যু’। আমাদের সবার প্রতিটা মুহূর্ত ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষায় কাটছে। আপনি দ্বীনের বুঝ পেয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আপনার বাবা, মা, ভাই, বোন, সন্তান, কাজিন, আত্মীয়, বন্ধু সবাই কি দাওয়াহ পেয়েছে? আপনার আশে পাশের মানুষ কি ঈমান, ইসলামী আক্বিদা, তাওহীদ, সুন্নাহ কী, তা জানে? আপনার তরফ থেকে যতটুকু জানানোর জানিয়েছেন কি? একটি আয়াত পড়লে তা আমলে আনতে স্ট্রাগল করছেন কি?
ইয়াং মেয়েদের মেসেজ পাই- “আমরা কিছু করতে চাই! এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে ‘ওরা’ জিতে যাবে!”
কি আশ্চর্য কথা, কে জিতে যাবে? কিসের হার জিত? এটা কি পাবলিকে ভর্তির কম্পিটিশান? যাদের নিয়ে ভয়, তারা গত ১০০ বছরেও কিছু করতে পারেনি, আগামী ১০০ বছরেও পারবে না। কারণ, আল্লাহর তাআলা যে পদ্ধতিতে এগোতে বলেছেন, তা বাইপাস করে কিছুই হবে না। তবে হ্যাঁ, কিছু মানুষকে এরা গোমরাহ করতে পারবে- যাদের আল্লাহ তাআলাই পথভ্রান্ত করে রেখেছেন।
অনেকেই এমন সব বিষয় নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত- যে বিষয় আমাদের আয়ত্ত্বের মধ্যে নেই। অথচ যা মৌলিক, সবার জানা উচিৎ, বোঝা উচিৎ, তাতে কোন আগ্রহ নেই।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, অর্থাৎ- “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে, আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেনই, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য সুদৃঢ় করবেন তাদের দ্বীনকে- যা তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তাদের ভয় ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন; তারা আমার ইবাদাত করবে, আমার সাথে কোন শরীক করবে না, অতঃপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারা তো সত্যত্যাগী”। (সূরা নূর- ৫৫)।
এখানে আল্লাহ তাআলা নিরাপত্তার, প্রতিনিধিত্বের প্রতিশ্রুতি কাদের দিচ্ছেন? যারা ঈমান এনেছে তাগুতকে অস্বীকার করেছে- তাদেরকেই তো। কিসের শর্তে দিচ্ছেন? শরীক বিহীন ইবাদাতের শর্তে! অথচ এখন অবস্থা এমন, বেশির ভাগ মানুষ জানে না তাওহীদ কি, তাগুত কি, শিরক কি, ফরয কি, সুন্নাহ কি, বিদআত কি!
আল্লাহর রাসূল (সা.) কিন্তু এও বলেছেন- ইসলাম আরম্ভ হয়েছিল অল্প সংখ্যক লোকের দ্বারা, শেষ যুগে কমতে কমতে ইসলাম আবার অল্প সংখ্যক লোকের মধ্যে রয়ে যাবে। (সংক্ষিপ্ত নববী)। অর্থাৎ- কিছু অপরিচিত মানুষ মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় এসেছিলেন তাদের দ্বারাই ইসলাম শুরু হয়েছিল। ইসলাম শেষ যুগে ঐ অবস্থায় ফিরে যাবে। অর্থাৎ- সারা বিশ্বে কাফির ও বেঈমানদের রাজ্য কায়িম হবে।
শেষ যুগের আলামত হিসেবে বলেন, শেষ যুগে ফিতনা এতোটা প্রকট আকার ধারণ করবে যে, মানুষ তার বন্ধু-বান্ধব কিংবা আপন মানুষের কাছেও নিরাপদ থাকবে না।
সে সময় উম্মতের করণীয় কী হবে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (সা.)। ইবনে মাসউদ (রাযি.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, ওই ফিতনায় নিহত সব লোকই জাহান্নামি হবে। সেই যুগ যদি কেউ পেয়ে বসে, তবে তিনি আদেশ করেন জিহ্বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, হাত গুটিয়ে রাখতে, আর ঘরের বাইরে বের না হতে। (আবু দাউদ)।
অন্য একটি হাদিসে এসেছে- “অচিরেই বিভিন্ন রকম ফিতনার আবির্ভাব ঘটবে। ফিতনার সময় বসে থাকা ব্যক্তি ফিতনার দিকে পায়ে হেঁটে অগ্রসরমান ব্যক্তির চেয়ে এবং পায়ে হেঁটে চলমান ব্যক্তি আরোহী ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক নিরাপদ ও উত্তম হবে”।
ফিতনা শুরু হয়ে গেলে যার উট থাকবে সে যেন উটের রাখালি নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং যার ছাগল থাকবে, সে যেন ছাগলের রাখালি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর যার চাষাবাদের যমীন আছে, সে যেন চাষাবাদের কাজে ব্যস্ত থাকে।
এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো- হে আল্লাহর নবী (সা.)! যার কোন কিছুই নেই, সে কী করবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন- পাথর দিয়ে তার তলোয়ারকে ভোঁতা করে নিরস্ত্র হয়ে যাবে এবং ফিতনা থেকে বাঁচতে চেষ্টা করবে।
অতঃপর তিনি বলেন- হে আল্লাহ! আমি কি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি কি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি কি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছি?
অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো- হে আল্লাহর রাসূল! কেউ যদি আমাকে জোর করে কোন দলে নিয়ে যায় এবং সেখানে গিয়ে কারো তলোয়ার বা তীরের আঘাতে আমি নিহত হই, তাহলে আমার অবস্থা কী হবে? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- ‘‘সে তার পাপ এবং তোমার পাপের বোঝা নিয়ে জাহান্নামের অধিবাসী হবে’’। (সহিহ মুসলিম)।
আমরা এমন এক সময়ে অবস্থান করছি, যখন বৃষ্টির মত ঘরের ভেতর ফিতনা এসে পড়ছে, সন্দেহ নেই। আমাদের সবার ছাগল, উটও নেই যে, তা নিয়ে ব্যস্ত থাকব। তাহলে আমরা কী করব? ফিতনায় জড়িয়ে যাব?
না, আমরা যদি তালিবে ইলম হই- তাই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাব। ঘরের ভেতরে থেকেই নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যাব। যে বিষয়ে আমরা কিছু করতে পারব না, তা নিয়ে সারাদিন মাথা কুটলেও ফায়দা নাই। ভবিষ্যতে কি ঘটবে আল্লাহর রাসূল সে ইঙ্গিত দিয়েই গেছেন।
কাজেই যা আমাদের আয়ত্ত্বে নাই সে আলাপে না মজে যা আমাদের এখতিয়ারে আছে তা করাই বুদ্ধিমানের।
আসুন, নিজের পাশাপাশি পরিবারের ঈমানকে তাজা করি। আক্বিদাকে সহীহ করি। মুখে যা বলি আমলেও তা আনি। মিথ্যা বলা বর্জন করি। যত নির্দোষ মিথ্যাই হোক, মিথ্যা মিথ্যাই। সৎ কাজের উপদেশ দিই, অসৎ কাজে বাঁধা দিই। তাওহীদ, আসমা ওয়াস সিফাত এবং সুন্নাহ সম্বন্ধে জানি ও বিশ্বাস স্থাপন করি।
আমাদের অনেক সমস্যার একটি হল, কি যে বুঝতে হবে- আমরা মনে হয় সেটাই বুঝি না!
[ দুই ]
ফেমিনিস্টদের আশে পাশে থাকলে একটি কমন মেসেজ পাওয়া যায়, সেটি হল- ‘ইমোশান দিয়ে দুনিয়া চলে না!’
কি বলে এগ্লা?
ফ্যান্টাসির সাথে আবেগকে গুলিয়ে ফেলেছেন নাকি!
আমি তো দেখি- আবেগ দিয়ে খালি দুনিয়া না, আখিরাতও চলে!
এই যে জাহান্নামের আযাবের কথা মনে করে সাহাবারা ভয়ে কাঁদতে শুরু করতেন, আল্লাহর রাসূলের ওফাতের পর হযরত বিলাল (রাযি.) যখন দীর্ঘ সময় পর মদিনায় এসে আযান দিলেন- ‘আশহাদুআন্না মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ’ বলার সাথে সাথে কান্নার হু হু শব্দে মদিনার বাতাস ভারী হয়ে উঠল, এগুলো কি ছিল?
আল্লাহর প্রতি, ইসলামের প্রতি, না দেখেও আল্লাহর রাসূলের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা কি এক ধরনের আবেগ নয়?
এই যে ফিলিস্তিনের বাচ্চাদের দেখে কারো অন্তর কাঁদে, তাদের চেনে না, জানে না, তাও চোখ কাঁদে কেন? রাস্তার বেড়াল কুকুরের গায়ে আঘাত করতে দেখলে কারও চোখ জ্বলে ওঠে কেন? কেউ তার বৃদ্ধ পিতা মাতাকে ফেলে দিলে সম্পর্কহীন আরেকজন তাকে পরম যত্নে তুলে আনে কেন?
মেটিরিয়ালিস্টিক মানুষদের চাইতে জঘন্য মনে হয় আর কিছু হয় না। তাদের অন্তর শক্ত। তাদের চোখে পানি আসে না! সব কিছু তারা মাপে টাকার দাড়িপাল্লা দিয়ে। স্বার্থ দিয়ে।
সম্পর্ক গুলোকে তারা দেখে পুরোনো জুতোর মত করে। ছিঁড়ে যাচ্ছে? জোড়া দেবে কেন? বদলে ফেলো, নতুন কেনো।
হিজাবী ফেমিনিস্টদের জীবন হল কুতর্ক আর কু লজিকের ভান্ড। অথচ যুক্তি দিয়ে ইসলাম চলে না। শুধু যুক্তি দিয়ে আল্লাহ তাআলার সব আদেশ নিষেধ মানতে পারবেন? রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবা আযমাইনদের ভালবাসতে পারবেন? দেশপ্রেমটাই বা কি? আবেগই তো, না?
ভালবাসা ইটিসেল্ফ একটা আবেগ। যার নাই তার কারও জন্যই নাই।
আবেগহীন রোবটের মত মানুষরা খুব ভাল ইসলাম প্র্যাক্টিসও করতে পারে না। কা’বাকে দেখে তাদের চোখে পানি আসে না! প্রিয় নববী ছেড়ে যাওয়ার সময় তাদের চোখ ভেজে না। মাদিনা ছাড়ার মুহূর্তে তাদের অন্তর ছিঁড়ে যায় না। মিনা, আরাফাহ, মুজদালিফায় কাটানো সময়গুলোর স্মৃতিচারণে তাদের চোখ চক চক করে ওঠে না। খলিফাদের অপমানে তাদের অন্তর জ্বলে না!
তারা বলতে ভালবাসে তাদের মেধার গল্প, হাই পেইড স্যালারির গল্প, দুনিয়াবী সফলতার ধাপগুলো একে একে পেরিয়ে কি করে টাকার কুমির হয়ে গেল সেই গল্প।
পুঁজিবাদী ভোগবাদী সমাজ ভোগ করতে শেখায়। খাও দাও ফূর্তি কর। এই ফূর্তির পথে কোন বাঁধা মানা যাবে না। মায়া মানেই পিছুটান। নিজে না খেয়েও যে পছন্দের মুরগীর রান অন্যের পাতে তুলে দেয়া যায় শুধু ভালবেসে, এটা তাদের জন্য কল্পনাতীত বিষয়!
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
হিজাবী ফেমিনিস্ট মহিলাদের প্রথম পাঠ হল, ‘মায়া, পিছুটানকে ধ্বংস করে ফেল! সন্তান কাঁদছে কাঁদুক, সামনে এগোনোর পথে, জীবনকে উপভোগ করার পথে এগুলো হল বাঁধা, বাঁধা ভেঙে এগিয়ে যাও…’।
ফ্যান্টাসিময় জীবনের স্বপ্ন যদি বিপদ ডেকে আনে, যে নারী জীবনে বেগ আনতে আবেগকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে, সেও বিপদেই আছে।
নিজের গুনাহের স্মরণে যার চোখে পানি আসে না, এমনকি গুনাহকে যে গুনাহই মনে করে না- সে তো গাফেল। তার চাইতে হতভাগা এই দুনিয়ায় আর কে হতে পারে? এ তো বিপদ নয়, বরং মহাবিপদে আছে!
আমার তো মনে হয় যার আবেগ নাই তার বিবেকও নাই! আর বিবেকহীন মানুষ পশুরও অধম!
[ তিন ]
মাতৃত্ব কোন চয়েসের বিষয় না! মাতৃত্ব একটা দায়িত্ব! এ দায়িত্ব সামলানোর কেইপবিলিটি না থাকলে তার মা হবারও যোগ্যতা নাই। চয়েস করে মা হয়েছি, এখন বাচ্চার দায়িত্বটা আর চয়েস হচ্ছে না- এটা বললে তো হবে না ইয়াং লেইডি!
ডাক্তার বা পিএইচডি হোল্ডার হবার পথে ফেমিনিজমের বিষ ঢুকে বিগড়ে যেতে পারে, এমন ভালনারেবল পার্সোনালিটির মেয়ে বাচ্চাদের সে পথে হাঁটতে না দেয়াই ভাল। প্যারেন্ট হিসেবে আমার এটাই মনে হয়।
দুনিয়া সাজানোর চাইতে আখিরাত বাঁচানো বুদ্ধিমানের!
এটা সত্য ডাক্তার সবাই হতে পারে না। যে হতে চাচ্ছে সে তার আখিরাত বাঁচিয়ে চলতে পারলে হোক। তার চয়েস। কিন্তু নিয়্যাত হওয়া উচিৎ উম্মাহর খেদমতের জন্যই এই লাইনে এসেছি। এর মানেই এই নয়- ডাক্তার হবার কারণে সন্তানের তারবিয়াতের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। ওটা প্রাইমারি ডিউটিই থাকবে।
অর্থাৎ- নিজের উপর দায়িত্ব নিজেই বহুগুণে চাপিয়ে নেয়া। যে পারবে না তার আফসোস থাকা উচিৎ। উলটো এত দম্ভ আসে কোত্থেকে?
এটা কোন ধরনের মাইন্ড সেট- মাতৃত্ব একটা চয়েস! ক্যারিয়ার, একটা সন্তান! আবোল তাবোল এসব ফালতু কথাবার্তা কোন ফাজিলের দল মাথায় ঢোকায়?
[ চার ]
মহিলারা অধিক হারে জাহান্নামী হবে এর কারণ হিসেবে যারা ভাবেন, “মহিলারা দুনিয়াতেও সংখ্যায় বেশী, তাই বা তারা গীবতে লিপ্ত থাকে” এই ধারণা সঠিক নয়। গীবত অবশ্যই মৃত ভাই এর মাংস খাওয়ার মত গুনাহ। কিন্তু সেটা পুরুষরাও যে একেবারে করে না- তা তো না।
হাতড়ে বেড়ানোর আসলে কোন প্রয়োজন দেখি না। রিগার্ডিং মহিলা স্পেসিফিক রিজন আল্লাহর রাসূল বলেই দিয়েছেন। সুস্পষ্ট হাদিস থাকলে সে বিষয়ে মনগড়া ধারণা থেকে বিরত থাকাই উত্তম প্র্যাক্টিস।
“হে নারীগণ! তোমরা দান-সদকা করো। বেশি বেশি করে আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। কেননা আমি জাহান্নামে তোমাদের অধিক হারে দেখেছি।
এ কথা শোনার পর উপস্থিত মহিলাদের মধ্য থেকে একজন (যার নাম ছিল জাযলা) প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কেন এ অবস্থা? কেন জাহান্নামে আমরা বেশি সংখ্যায় যাবো?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- “তোমরা স্বামীর প্রতি বেশি অকৃতজ্ঞ ও অভিশাপ দাও বেশি”। (সহিহ মুসলিম)।
অভিশাপ না দিলেও স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ আমরা হয়েই থাকি। হাজারটা কমপ্লেইন আমাদের এই প্রজাতির বিরুদ্ধে। যত বড় দ্বীনিই হই, এই কাজগুলো আমরা কম বেশী করি। সাথে নিজের লজিকের পক্ষে আরও হাজারটা লজিক দাঁড় করিয়ে তর্কে জেতার চেষ্টাও করি। এতে কোন ভুল নাই।
হোমোরা চায় সবাই হোমো হোক। ট্রান্সরা চায় সবাই ট্রান্স হোক। তসলিমা নাসরিন কখনো আস্তিকতার উপর লেকচার দেবে? এরা চায় আশেপাশের সবাইকে এদের মতই বানিয়ে ফেলতে।
তারা বলে- এটা তোমার জীবন, কেন অন্যরা তাদের মতামত তোমার উপর চাপাবে? তারা মনে সন্দেহ ঢোকায়, সৃষ্টিকর্তা এক্সিস্ট করে কি সাইন্টিফিক এভিডেন্স আছে? অথচ ঈমান মানেই আগে বিশ্বাস, তারপর অন্য কথা!
মডারেট আপারাও যেমন চায়, সবাই তাদের মত মডারেট ইসলাম পালন করুক। মূল কথা হল, সবাই সবাইকে নিজের দলে টানতে চায়।
রাসূলের ইসলাম পালনকারীরাও তেমনি চায়, সবাই ধার্মিক হোক, অন্য কারও মতবাদ না, রাসূলের ইসলাম শিখুক, পালন করুক। কিছুই না থাকলেও অন্তত ঈমানটা থাকুক। সমস্যা আছে?
আজকাল অনেকেই বলেন- ইসলামিক স্কুলে বাচ্চা দিয়ে কি লাভ, ওই তো ও/এ লেভেলে বাইরেই আসতে হবে।
এখন পুরা দুনিয়ার অবস্থাই খারাপ। জেনারেল স্কুলে দেবেন? ম্যাথ, সাইন্স টিচার নাস্তিক হলে সে ক্লাস রুমেই বাচ্চার ভেতর সেই বীজ ঢোকাবে। বাচ্চা আপনার কাছে একদিন এসে গডের এক্সিস্ট্যান্সের এভিড্যান্স চাইবে। ততোদিনে তার ঈমান কিন্তু হারিয়ে গেছে। আপনি কুরআন থেকে আয়াত তুলে সাইন্টিফিক ফ্যাক্টস বললেও তারা বিশ্বাস করবে না; লাভ নাই। সবাই হোম স্কুলিং করানোর মত যথেষ্ট স্কিলড না।
ইসলামিক স্কুলে টিচারদের কিছু এথিক্স মেনে চলতে হয়, এটলিস্ট স্কুল প্রিমিসেস এ। ব্যক্তিগত জীবনে সে নাস্তিক হলেও এখানে সে ক্লাসরুমে তার সংশয়বাদি মতামত দিতে এলাউড না। ইচ্ছা হলেই যে যা খুশি তাই বললে চাকরি চলে যাবে। তবুও কোন বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী কারো স্কুলে বাচ্চাদের দিতে নিষেধই করি। তারা তাদের মডারেট ইসলাম শেখাবে, রাসূলের ইসলাম না।
ইসলামিক স্কুলে দিয়েও এমন আহামরী কিছু হয় না- ঘরে, বিশেষ করে মা-বাবার প্র্যাক্টিস না থাকলে। যার চাক্ষুস প্রমাণ দেখছি। যারা চায় তাদের আল্লাহ তাআলাই হেল্প করেন বিইযনিল্লাহ। যারা চায় না তারা বেরিয়ে যাবেই, এমনকি মাদ্রাসায় পড়লেও।
ঈমান ধরে রাখাটাই যেন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে দিন দিন!
লেখক: কনসালট্যান্ট, সনোলজিস্ট।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ