নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ পরিচালিত ২০২৪ইং শিক্ষাবর্ষের কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। দেশব্যাপী ৩ হাজার ৫৭টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় বোর্ডের আওতাভুক্ত ১০,১৯৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭ লাখ ২৬ হাজার ৩৭ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। গড় পাশের হার ৯৭.৮৮%। পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৫,৪৬৩ জন। সর্বোচ্চ মেধা তালিকা ‘টপ-২০’ এ স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে ২ হাজার ৩৪৭ জন।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় হাটহাজারিস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান ও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী এবং মহাসচিব ও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করেন।
ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ডের কার্যক্রম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ লিখিত বক্তব্য দেন বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন। নীচে তাঁর বক্তব্যটি উপস্থাপন করা হলো-
نحمده ونصل علي رسوله الكريم ـ امابعد
“আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ্।
ফলাফল ঘোষণার পূর্বে মহান রবের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, যিনি আমাদেরকে তালীমে কুরআনের শিক্ষার উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রয়াস নিয়ে আজকের এই মহতি আয়োজনের তাওফিক দিয়েছেন। সাথে সাথে তাঁদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, যারা আজকের এই মহতি সভায় উপস্থিত হয়ে আমাদেরকে ধন্য করেছেন। আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে কবুল করুন। আমীন।
সম্মানিত উপস্থিতি, ও অভিভাবকবৃন্দ!
আপনারা জানেন যে, ১৯৯৫ সালে নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ নামে শিশুদের মাঝে দ্বীনি ও জাগতিক শিক্ষার সমন্বিত এক শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমি কৃতজ্ঞতার সাথে স্বরণ করছি- অত্র বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান উপমহাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে-দ্বীন, শাইখুল ইসলাম, সাবেক প্রতিষ্ঠাতা আমীরে হেফাজত, সাবেক চেয়ারম্যান আল হাইয়্যাতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল ক্বওমিয়্যাহ বাংলাদেশ, হাটহাজারী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মহাপরিচালক ও পীরে কামেল আল্লামা শাহ্ আহমদ শাফী (রহ.) ও শাইখুল হাদীস, সাবেক আমীরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.) ও সাবেক কার্যকরী সভাপতি, হাটহাজারী উলামা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেখল হামিউস্সুন্নাহ মাদ্রাসার মহাপরিচালক হযরত মাওলানা নোমান ফয়জী (রহ.)কে। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীনের দরবারে তাঁদের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁদের কবরকে জান্নাতুল ফেরদৌসের বাগানে পরিণত করার প্রত্যাশা করছি, আমিন।
আরও পড়তে পারেন-
- ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা
- কিশোর অপরাধ রোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
- আদর্শ পরিবার গঠনে যে সব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরী
- ইসলামে সামাজিক সম্পর্ক এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার গুরুত্ব
- মানুষ মারা যাওয়ার পর, তাঁর আত্মার কি হয় ?
একই সাথে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি বর্তমান বোর্ডের সুযোগ্য চেয়ারম্যান হাটহাজারী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিচালক উস্তাজুল আসাতিজা আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া ছাহেব (দা.বা.)। এবং বোর্ডের সুযোগ্য পরিচালনা পরিষদের দায়িত্বশীল মুরব্বীয়ানে ক্বেরামগণ, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং ত্যাগ তিথিক্ষার ফলশ্রুতিতে এই বোর্ড উন্নতির শিখরে আল্লাহপাক পৌছিয়েছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বর্তমান পরিচালনা পরিষদকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। তাঁদের কবুল করুন এবং ভবিষ্যতে আরো উন্নত ও ইখলাসের সাথে তা’লীমে কুরআনের খেদমত আঞ্জাম দেওয়ার তাওফিক দান করুন, আমীন।
সম্মানিত উপস্থিতি, ও অভিভাবকবৃন্দ!
নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ- দেশের সর্ববৃহৎ দ্বীনি ও জাগতিক শিক্ষার সমন্বিত বোর্ড। এ বোর্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বাংলাভাষা-ভাষী মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য শিক্ষা ব্যবস্থা নূরানী পদ্ধতির সিলেবাসভুক্ত মাদরাসাগুলোর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মানোন্নয়নে তদারকী ও পরিচালনা করে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের শহর, উপশহর, জেলা-উপজেলা সদরসহ গ্রামগঞ্জে নূরানী পদ্ধতির সিলাবাস অনুসরণ করে প্রায় ২৫ হাজারের অধিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। যার সিংহভাগ নূরানী তা’লামুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ এর অধীনে নিবন্ধিত ও পরিচালিত। বর্তমানে শুধুমাত্র আমাদের অধীনে পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫-১০ বছর বয়সী শিশু শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ লক্ষের অধিক। এ বিশাল জনগোষ্ঠিকে দ্বীনি ও জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে এ বোর্ড অসমান্য অবদান রেখে চলেছে। আজকের এইদিন পর্যন্ত নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশের সিলেবাস অনুসরণে দেশব্যাপী নিবন্ধিত মাদরাসা প্রায় ১৫ সহস্রাধিক। আমাদের সিলেবাস অনুসরণ করা অনিবন্ধিত রয়েছে আরো অনেক নূরানী মাদরাসা।
সম্মানিত উপস্থিতি, প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ ও অভিভাবকবৃন্দ!
নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মানোন্নয়ন, মেধার বিকাশ ও মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে পড়ালেখায় প্রতিযোগি করতে বোর্ড নিবন্ধিত মাদরাসা সমুহে সারাদেশে একই তারিখে তথা ১ ডিসেম্বর ২০২৪ইং থেকে ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ইং তারিখে এক ও অভিন্ন প্রশ্নপত্রের আলোকে ২০২৪ইং শিক্ষাবর্ষের ৩য় শ্রেণির “কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষায়’’ সারাদেশ হতে ৩০৫৭টি কেন্দ্রে ১০,১৯৭টি প্রতিষ্ঠানের সর্বমোট ৭,২৭,৭১৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
সম্মানিত উপস্থিতি!
নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষার ফলাফল পূর্বঘোষিত তারিখ অনুযায়ী অদ্য ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ইংরেজি, বুধবার সকাল ৮টায় প্রকাশ করতে যাচ্ছে, ইনশাআল্লাহ।
অত্যন্ত আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে, চলতি ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত সারাদেশে অভিন্ন প্রশ্নপত্রের আলোকে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষায় এবার বোর্ডের আওতাধীন ১০,১৯৭টি মাদরাসার মোট ৭,২৭,৭১৪ জন শিক্ষার্থী ৩,০৫৭টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। গড় পাশের হার ৯৭.৮৮%। পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৫,৪৬৩ জন। সর্বোচ্চ মেধা তালিকা ‘টপ-২০’ এ স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে ২ হাজার ৩৪৭ জন।
সম্মানিত উপস্থিতি, প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ ও অভিভাবকবৃন্দ!
বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশের চেয়ে আমাদের দেশের পটভূমি একটু ভিন্ন। মুসলমানদের কচি-কাচা সন্তানদেরকে দ্বীনি শিক্ষা তথা বিশুদ্ধ কুরআন তেলাওয়াত, প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল, জরুরী সূরা ক্বেরাত, হালাল-হারাম, পবিত্রতাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দু‘আ সমূহ শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি গতানুগতিক বাংলা, গণিত, ইংরেজি, পরিবেশ পরিচিতি সমাজ-বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়গুলো সঠিকভাবে পাঠদানের মাধ্যমে সুন্দর চরিত্র বা উত্তম আখলাক গঠনের জন্য অত্র বোর্ডের কার্যনির্বাহী কমিটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
লেখা-পড়ার মান উন্নয়নের জন্য পরিদর্শকদের দ্বারা লেখা-পড়া যাচাই করা, তিন মাস অন্তর অন্তর বিভিন্ন মাদ্রাসায় দায়িত্বরত শিক্ষকদের নূরানী সিলেবাসের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরবী (সকল বিষয়), বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করে যোগ্য শিক্ষক তৈরির কাজটিও অত্র বোর্ড সুশৃঙ্খলভাবে আঞ্জাম দিয়ে আসছেন। যার বদৌলতে দেশব্যাপী অসংখ্য হাফেজে কুরআন, আলেম, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রশাসনিক বিভাগে নিয়োজিত প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ তৈরি হচ্ছেন।
পাশাপাশি নূরানী শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় আজ হাজার হাজার স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা ইসলামী জ্ঞান শিক্ষাসহ তাঁদের একটি কর্মসংস্থান খুঁজে পেয়েছে। আমরা আশাবাদী যে, এই নূরানী শিক্ষার কার্যক্রমকে যদি আরো গতিশীল এবং ধারাবাহিকভাবে চালু রাখা যায়, তাহলে আমাদের দেশের মুসলমানের সন্তানেরা ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি জাগতিক শিক্ষা, নৈতিকতা-নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং দেশের সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে গঠন করতে সক্ষম হবে- ইনশা-আল্লাহ। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন ওলামায়ে কেরাম এবং ধর্মানুরাগী লোকদের শতভাগ ত্যাগ স্বীকার করা। অত্র বোর্ডের পক্ষ থেকে এই অগ্রযাত্রা চালু রাখার জন্য সর্বাত্বক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে- ইনশা-আল্লাহ।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলের বিশেষ করে বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয়সহ বোর্ডের সকল পরিচালনা পরিষদের দায়িত্বশীল মুরব্বিয়ানে কেরামগণ, প্রশিক্ষক-পরিদর্শক মহোদয়গণদের সকল কার্যক্রম ও প্রচেষ্টাকে কবুল করুন-আমীন।
পরিশেষে, আজকের এই অনুষ্ঠানে আপনাদের উপস্থিতির জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠান সমাপ্তি ঘোষণা করছি। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লাবিল্লাহ।
দোয়া কামনায়-
মুফতি জসিম উদ্দীন
মহাসচিব-
নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ।”
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ