ক্যারিয়ারে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সবসময় যে একদমে বড় পদক্ষেপ নিতে হবে, এমনটা নয়। বরং ক্রমাগত ছোট ছোট প্রয়াসের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য লাভ সম্ভব। এর মধ্যে রয়েছে সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নিজের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার মতো বিষয়।
এ সম্পর্কে অভিমত প্রকাশ করেছেন টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট এক্সপার্ট হিসেবে কর্মরত ওমর আল ডোরি। তিনি বলেন, ‘সাফল্য পেতে আপনাকে চাকা পুনরায় উদ্ভাবন করার মতো বড় কিছু করতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। বরং ইতিমধ্যে যা বিদ্যমান, সেটি আঁকড়ে ধরে থাকুন। নিজের ভেতরের ছোট ছোট অদক্ষতাগুলো কাটিয়ে উঠুন। যার প্রভাব আপনি সময়ের সঙ্গে উপলব্ধি করতে পারবেন।’
ছোট ছোট পরিবর্তনে বড় ফলাফল
ক্রমাগত ছোট পরিবর্তন এনে বড় ফলাফল লাভের বিষয়টি শুধু তত্ত্বীয় নয়। বরং বিশ্বজুড়ে বহু সফল ব্যক্তিরাই এ কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। এক্ষেত্রে ভালো উদাহরণ হতে পারে ওমর। তিনি টেলিকম ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে বৈশ্বিকভাবে কাজ করে এমন কয়েকটি টিমের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।
এ কাজে ডেভেলপারদের কর্মকাণ্ড বড় সিস্টেমে ঠিক কী ধরনের পরিবর্তন আনে, সেটি তুলে ধরতে কোডিংয়ের ওপর ভিত্তি করে ওমর একটি ট্র্যাকিং সিস্টেম তৈরি করেছেন। সেক্ষেত্রে তাদের একটি ছোট পরিবর্তনও যে বাগ ঠিক করে, প্রসেসে গতি এনে বহু সময় সাশ্রয় করে, সেটি দেখা যায়।
অর্থাৎ, একটি কাজ সুষ্ঠুভাবে করার ক্ষেত্রে ছোট পরিবর্তনও ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। একক ব্যক্তির ক্ষেত্রে, বলতে গেলে, যার উদাহরণ হতে পারে নিয়মিত ই-মেইল দেখা, ‘টু-ডু লিস্ট’ মেনে চলা কিংবা একই কাজ বারবার করার ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু করা। এগুলোর তত বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও, সময় ও মানসিক শক্তি সাশ্রয়ে তা সহায়ক।
বিখ্যাত ফেসিয়াল প্লাস্টিক সার্জন ডাক্তার সের্গেই কালসো একই মনোভাব বিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘সার্জারির ক্ষেত্রে কৌশলে ছোট পরিবর্তন ফলাফলে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। মনোযোগ সহকারে সমস্যা শুনতে যথাযথ সময় নেওয়া এবং রোগীর প্রত্যাশার বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারা এ কাজে সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব রাখে।’ অর্থাৎ, এক্ষেত্রে কার্যকরী যোগাযোগের বিষয়টিকে তিনি বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন।
ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু, বড় ভাবনা
ক্যারিয়ারে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে আগে নিজের দুর্বলতাগুলোকে শনাক্ত করতে হবে। যদি আপনি অতিরিক্ত কাজের চাপে থাকেন, তবে সেগুলোকে ছোট ছোট ধাপে ভাগ করে নিতে হবে। সেখানে যোগাযোগ একটি বড় ফ্যাক্টর হলে, প্রতিদিন অল্প সময় হলেও আলাদা করে টিমের সঙ্গে বসে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করতে হবে।
ভারতে একটি টেকনিক্যাল টিমে নেতৃত্ব প্রদানের সময় ওমর কৌশলটির প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন। নিজেদের মধ্যে বিষয়গুলো পরিষ্কার হওয়ার জন্য আলাদাভাবে আলোচনা করেছিলেন। এক্ষেত্রে নতুন কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণের সময় কমিয়ে, বরং তিনি সর্বোপরি টিমের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হয়েছিলেন।
আরও পড়তে পারেন-
- উলামায়ে কেরামের প্রতি মুফতি শফী (রাহ.)এর দরদমাখা নসিহত
- কম্পিউটার চিপ শিল্প: জলবায়ুর উপর ফেলছে ভয়ঙ্কর প্রভাব
- ইরানি বিজ্ঞানীকে যেভাবে হত্যা করে ইসরায়েল
- ব্যতিক্রমী এক ইসলামী আইন গবেষক
- ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে ঠাট্টা-তাচ্ছিল্য জঘন্য গুনাহ
ওমর বলেন, ‘কোনো একটি বিষয়কে সহজ ও বোধগম্য করতে হবে। কাঠামোতে ছোট ধরনের বিনিয়োগও বহু সময় সাশ্রয় করে এবং ভবিষ্যতে বেশ কার্যকরী হতে পারে।’
নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে শেখা
প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টে ডেডলাইনের জন্য বেশ কম সময় থাকে। ফলে চাপও থাকে বেশি। সেক্ষেত্রে ছোট ছোট অভ্যাস ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক উভয় পরিবর্তনই আনতে পারে। ওমর জানান, ঠিক এ মাইন্ডসেটই তার টিমকে সফলভাবে মোবাইলের নতুন একটি অ্যাপ বাজারে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা একদম শূন্য থেকে অ্যাপটি তৈরি করার চেষ্টা করিনি। বরং প্রতিদিন ব্যবহারকারীরা যে-সব ফিচার ব্যবহার করে, সেগুলোর দিকে মনোযোগী হয়েছি। যার ফলে ব্যবহারকারীরা বেশ সন্তুষ্ট হয়েছে।’
ব্যক্তির ক্যারিয়ারের বিষয়টিও অনেকটা একইরকম। যেক্ষেত্রে, যেকোনো একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। এটা হতে পারে উপস্থাপনে দক্ষতা অর্জন, নতুন একটি টুল শেখা কিংবা যোগাযোগে নিজেকে দক্ষ করে তোলা।
ক্রমাগত উন্নতির সংস্কৃতি তৈরি
ক্যারিয়ারে উন্নতির জন্য ক্রমাগত শিখতে থাকা ও চর্চা চালু রাখার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এমন অভ্যাস আপনাকে প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে সুযোগ হিসেবে দেখার মনোভাব তৈরি করে। ওমর নিজেও এমন কৌশলের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘একজন লিডার হিসেবে আমি দেখতে পেয়েছি যে, ধারাবাহিক উন্নতি নিজের মনোবল ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে।’ এক্ষেত্রে, প্রতিদিন শেষে সেটিকে পর্যালোচনা করা, নতুন নতুন স্কিল শেখা কিংবা ফিডব্যাক চাওয়া অন্যতম।
প্রভাব পরিমাপ করা
নিজের মধ্যে ছোট ছোট পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তা কতটুকু কার্যকরী হচ্ছে, সেটি পরিমাপ জরুরি। ওমর নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন, তিনি তার টেলিকম কোম্পানিতে ডকুমেন্ট স্ক্যানিং প্রসেসে অটোমেশন এনে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন। এটি যে শুধু প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, এমন নয়; বরং এতে করে রেজাল্ট ট্র্যাকিংয়ে এবং পরবর্তী সময়ে ঐ ডেটা ব্যবহারে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে।
একইভাবে, ব্যক্তির ক্যারিয়ারেও পরিবর্তনের ফলে কতটুকু প্রভাব পড়ছে, সেটি পর্যালোচনা করা যায়। এক্ষেত্রে দেখতে হবে, কী পরিমাণ সময় সাশ্রয় হয়েছে, কয়টি কাজ শেষ হয়েছে কিংবা ইতিবাচক ফিডব্যাক আসছে কি-না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ইতিবাচক বিষয়গুলো আপনার মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করবে এবং আরও কোথায় কোথায় উন্নতি করতে হবে, সেটি বুঝতে সহায়ক হবে।
পরিবর্তনের ধাপসমূহ
জীবনে ছোট ছোট পরিবর্তন আনতে সুস্পষ্টভাবে ধাপে ধাপে কাজ করতে হবে। প্রথমে যে অভ্যাসগুলোর কারণে আপনি পিছিয়ে পড়ছেন, সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে। এরপর তা থেকে সরে আসতে ছোট পদক্ষেপগুলো কী, সেটি বুঝতে হবে। এরপর সে পদক্ষেপগুলো বাস্তবে অনুশীলন শুরু করতে হবে এবং তা অব্যাহত রাখতে হবে।
ক্যারিয়ারে ইতিবাচক পরিবর্তন একটি ধীর ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আমরা প্রতিদিন যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছি, সেটিই ঠিক করবে ভবিষ্যতে আমরা কী অর্জন করব কিংবা কীভাবে নিজেদের গড়ে তুলব। একটিমাত্র পরিবর্তন দিয়েও তা সর্বপ্রথম শুরু করা যেতে পারে; যা ধীরে ধীরে আরও বিকশিত হবে। এভাবে, নিজেদের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ছোট ছোট পরিবর্তন আসবে; যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ