Home ইসলাম শহীদদের রক্তের মূল্যায়ন করা না হলে আল্লাহর গজব আসতে পারে: জুমার বয়ানে...

শহীদদের রক্তের মূল্যায়ন করা না হলে আল্লাহর গজব আসতে পারে: জুমার বয়ানে খতিব মুফতি আব্দুল মালেক

বিগত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হক প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে শহীদ হয়েছেন। বাস্তব অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারা আন্দোলন করেছেন। তাদের ওপর জুলুম করে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। তারা শহীদ। তাদের রক্তের সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে গিয়ে যারা মারা যান তারও প্রকৃত শহীদ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদদের রক্তের হক আদায় করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদদের রক্তের সাথে ইনসাফ-ভিত্তিক আচরণ করতে হবে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শহীদদের রক্তের সঠিক মূল্যায়ন করা না হলে আবার আল্লাহর গজব আসতে পারে।

গতকাল (১৫ নভেম্বর) শুক্রবার জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক এসব কথা বলেন। খতিব বলেন, কোনো পুরুষ নিজেকে মনে মনে ভাবে আমি নারী আর কোনো নারী যদি মনে করে আমি পুরুষ এটা হারাম কাজ। এসব সমকামিতার এজেন্ডা বাস্তবায়নে ঢাকায় জাতিসংঘের অফিস খোলার পাঁয়তারা চলছে। সমকামিতাকে প্রমোট করতে ঢাকায় জাতিসংঘের অফিস খোলা হলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী করা হবে। কোনো ভাবেই ঢাকায় জাতিসংঘের অফিস খুলতে দেয়া যাবে না।

খতিব বলেন, নবী (সা,) জুমার খুৎবায় এবং ঈদের খুৎবায় তাকওয়ার ওপর বেশি বেশি বয়ান দিতেন। নবী করীম (সা.) মুত্তাকীদের উদ্দেশ্যে বলতেন আল্লাহর জান্নাত লাভের জন্য তোমরা দৌঁড়াইতে থাকো। তোমরা তোমাদের রবের মাগফিরাত লাভের জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকো। মুত্তাকীদের জন্য আল্লাহ বড় বড় জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন। খতিব বলেন, মুত্তাকীদের কয়েকটি গুন। মুত্তাকীরা সর্বাবস্থায় অথাৎ অভাবে থাকাকালেও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য দান করেন। তারা রাগকে নিয়ন্ত্রণ করেন। রাগ উঠলে তা’দ্রত নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনে অযু করে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।

আল্লাহর নাফর মানি যাতে না হয়ে যায় তাই মু’মিনের প্রথম কাজ রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা। নবী (সা.) রাগ দমানোর জন্য দোয়া শিখিয়েছেন তা’হচ্ছে ’আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তনির রাজিম’। কাউকে ক্ষমা করে দেয়ার গুন থাকতে হবে। ইচ্ছা করে কাউকে কষ্ট দিয়ে স’রি বলা যাবে না। কোনো মুত্তাক্বির গুনা হয়ে গেলে পরক্ষণেই তাওবাহ করে ফেলতে হবে। নেক আমল করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

খতিব বলেন, আমাদের বলতে হবে হে আমার রব আমাকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ আপনার প্রতি ঈমান এনেছি, আমাদের ক্ষমা করে দিন। আল্লাহর মাগফিরাত লাভের জন্য আমাদের বেশি বেশি তাওবাহ ইস্তিগফার পড়তে হবে। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমিন।

গাজীপুরের টঙ্গীস্থ পূর্ব আরিচপুর সরকার বাড়ী ঈদগাহ মসজিদুল আকসা এর খতিব মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মল্লিক আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন : দাওয়াত ও তাবলীগ দ্বীনের এক বহুত বড় কাজ। এই কাজ যেন সুচারুরূপে শরীয়ত তরিকায় সম্পন্ন হতে পারে, তজ্জন্য কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা গ্রহণ জরুরি। কাজের সাথে জড়িতদের মানসিকতা গঠনও একান্ত প্রয়োজন। এ সম্পর্কে আজকের বয়ানে কিঞ্চিৎ আলোক পাত করছি। উমুমি ময়দানে শরীয়তের মূল তাকাজা তিনটি-

আরও পড়তে পারেন-

দাওয়াত-তাবলীগ, তালীম-তাযকিয়া, জিহাদ-সিয়াসত। তিনটিই আল্লাহর রাস্তা। হাদীসে এসেছে, যে ইলম অর্জনে বের হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৪৭। যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীন বুলন্দ করার জন্য লড়াই করে, সে আল্লাহর রাস্তায়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৩)।

পুরো দ্বীনই বরং সাবীলুল্লাহ, আল্লাহর রাস্তা। আর দাওয়াত ও তাবলীগ হল আল্লাহর রাস্তারই একটি ধাপ। ইরশাদ হয়েছে, আপনি স্বীয় রবের পথে দাওয়াত দিন হেকমত-কৌশল ও সুন্দর নসীহতের মাধ্যমে। ওদের সাথে অধিকতর উত্তম পন্থায় যুক্তিতর্ক করুন। (সূরা নাহল- ১২৫)।

হে আমাদের রব! তাদের মাঝে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি তাদের সামনে আপনার কালাম তিলাওয়াত করে শোনাবেন, কিতাব ও হিকমতের তালীম প্রদান করবেন এবং তাদের তাযকিয়া করবেন। (সূরা বাকারা- ১২৯)।

নবীজী নিজেই ইরশাদ করেন-কাউকে কষ্টে নিক্ষেপকারী বা কারো পদস্খলনকামী হিসাবে আল্লাহ আমাকে পাঠাননি। আমাকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন সহজকারী ও শিক্ষক-রূপে। -সহীহ মুসলিম হাদীস ১১০৪। এই তিন কাজকে নবী-ওয়ালা কাজ বলে। আরেক ভাষায় বলে, নবুওতের কাজ, ফরায়েজে মানসাবে নবুওত, মানসাবে রেসালাতের দায়িত্ব। মানুষের ময়দানে দ্বীনী কাজের সূচনা হয়েছে দাওয়াত-তাবলীগ দ্বারা। দাওয়াত যারা কবুল করেছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে গড়ে তুলেছেন দ্বীনের তালীম-তাযকিয়ার মাধ্যমে। আর জিহাদ ও সিয়াসতের মধ্য দিয়ে নবীজী শরীয়তের বুলন্দি, নেফায (রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োগ) ও হেফাজত নিশ্চিত করেছেন। নবুওতের সূচনালগ্নে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, হে চাদরওয়ালা! উঠুন, মানুষকে সতর্ক করুন। (সূরা মুদ্দাছছির- ১-২)।

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-হে রাসূল! আপনি পৌঁছে দিন, যা আপনার কাছে আপনার রবের তরফ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। যদি তা না করেন, তবে তো আপনি আল্লাহর রেসালা-পয়গাম পৌঁছালেন না। (সূরা মায়েদা- ৬৭)।

আয়াতে উল্লেখিত ‘রাসূলের দায়িত্ব’ শব্দ-বন্ধ থেকেই প্রতীয়মান হয়, দাওয়াত ও তাবলীগ হল নবুওত ও রেসালতের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। আর তালীম ও তরবিয়তকে নবুওতের ফরায়েজে (মানসাবি) নবুওতের পদগত দায়িত্ব হিসাবে ঘোষণা, প্রত্যেক প্রজন্মের নির্ভরযোগ্য নেককার উত্তরসূরীরা পূর্বসূরীদের কাছ থেকে এই দ্বীনী ইলম ধারণ করবে। আর তারা গুলুকারীদের বাড়াবাড়ির বিকৃতি, ইসলাম বিরোধী বাতিল-পন্থীদের মিথ্যাচার এবং মূর্খ-জাহেলদের অপব্যাখ্যা বিদূরিত করবে। এইজন্য আলেমগণ একইসঙ্গে দাওয়াতসহ সকল দ্বীনী কাজের সঠিক দিকগুলোর প্রথম সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক, ভুল দিকগুলোর প্রথম সমালোচক ও সতর্ককারক।

মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বায়তুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ছাত্র জনতা দেশকে মুক্ত করেছে। অজস্রর রক্ত আর বহু শাহাদাতের বিনিময়ে দেশ এখন স্বাধীন। রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বৈষম্যহীন এই নতুন বাংলাদেশে জালিমের দোসর কাউকে যেমন কেউ সরকারে বরদাশত করতে চাইবে না তদ্রুপ ৯০% মুসলমানের এই সোনার বাংলায় কোন নাস্তিক মুরতাদ ও সমকামী বিচ্যুত চরিত্রের কাউকে সরকারের কোনো উচ্চ্য পদেও মেনে নিবে না। কারণ বিচ্যুত চরিত্রের কাউকে সরকারে যুক্ত করা ইসলাম মুসলমান ও দেশের জন্য চরম হুমকি। বিচ্যুত চরিত্রের অধিকারীরা সীমাতিক্রমকারী আল্লাহর দুশমন। তারা সবসময়ই ইসলাম মুসলমান ও দেশের মধ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে রাখতে চায়। যাতে সমাজের মধ্যে শান্তি বিঘিনত হয়।

শয়তান তাদের উস্কানি দিয়ে আল্লাহর দেয়া বিধান পালনে মানুষকে বিমুখ রাখতে চায়। অশান্তির দাবানল জ্বালানোই সমকামী বিচ্যুত চরিত্রের মানুষের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাদের উপরে চরম রাগান্বিত। তারা অভিশপ্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই উত্তম চরিত্রের অধিকারী হিসাবে প্রেরণ করা হয়েছে আর রাসূলের আদর্শের মাঝেই রয়েছে

মানুষের ইহ ও পরলৌকিক শান্তি ও কল্যাণ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তোমাদের জন্য রাসূলের জীবনেই রয়েছে উত্তম আদর্শ। (আল কোরআন)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণ পরিপূরক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। ( আল হাদিস)। আল্লাহ সবাইকে কবুল করেন। আমিন।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।