সারাদেশে জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ে একটি প্রকল্প নেয়া হয় ২০১৮ সালে। প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে ৬০১টি স্ক্রিনিং কেন্দ্র স্থাপন করে ৫০ লাখের বেশি নারীর স্ক্রিনিং করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালনা ৬৯ জন চিকিৎসক কর্মচারী আছে। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। কিন্তু সোমবার কর্মস্থলে গিয়ে কর্মীরা দেখেন তারা চাকরি হারিয়েছেন। এমনকি বায়োমেট্রিক যন্ত্রটিও বন্ধ। এদিকে প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ডা. আশরাফুন্নেসা এদিন সকালেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের বিপুল টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়েছেন পরিচালক। তার দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে সবাইকে চাকরিচ্যুত করেছে প্রশাসন।
গত ১০ নভেম্বর প্রকল্প অফিসের সামনে নোটিশ লাগানো হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, ৩০ জুন থেকে কল্পোকপিস্টি, সহকারী সার্জন, গবেষণা সহকারী, বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার, ভাইরোলজিস্ট, সহকারী প্রোগ্রামার, ডিভিশনাল কোর্ডিনেটর, জেলা কোর্ডিনেটর, সার্ন, প্যারামেডিকসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ৩০ জুন থেকে বাতিল করা হলো।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘ইলেক্ট্রনিক ডাটা ট্রাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয় কর্মসূচী’ শীর্ষক প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১৮ সালের জুনে। এর মেয়াদ ছিল ২০২১ সাল পর্যন্ত। পরবর্তীতে ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ মেয়াদের দু’বার সংশোধন ও মেয়াদ বাড়ানো হয়। বর্তমানে ২০২৪-২৫ মেয়াদের নো-কস্ট এক্সটেনশনের মাধ্যমে পুনরায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
জনবল নিয়োগকালে প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ডা. আশরাফুন্নেসা সবাইকে জানায়, প্রকল্পের জনবলের জন্য সরকার থেকে বেতন ছাড়া অন্য কোনো ভাতা বা সম্মানী দেয়া হয় না। তবে প্রকল্প সমাপ্তিতে একটি ইনস্টিটিউট স্থাপন করে সব জনবলকে আত্মীকরণ করা হবে। কিন্তু গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর প্রকল্প পরিচালক হঠাৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জানায়, বর্তমান প্রশাসন তার অনুকূলে না থাকায় তিনি স্থায়ীকরণের ব্যাপারে কিছু করতে পারবেন না। তখন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিএসএমএমইউ’র প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে এবং প্রকল্পের বিভিন্ন কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখতে পায় প্রকল্পের শুরু থেকেই মূল বেতন ছাড়াও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য ক্যাম্পে সম্মানী বাবদ প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর জন্য বরাদ্দ রয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরো তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা শুরু করে এবং প্রকল্পের সীমিত কিছু নথি থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় প্রায় ৭ কোটি টাকার অধিক টাকা প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে সরকার থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গত ৭ অক্টোবর লিখিতভাবে প্রকল্প পরিচালককে জানিয়ে সব কর্মীর ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক প্রাপ্য প্রদানে অস্বীকার করেন। প্রকল্প পরিচালক সবাইকে জানান, প্রকল্প পরিচালনায় নানাবিধ হিসাব বহির্ভূত ব্যয় যেমন- মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ডেস্ক ‘ম্যানেজ করা’, অডিট সামলানো, গাড়ি ভাড়া ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই টাকা ব্যয় হয়েছে। এমনকি তাদেরকে চাকরিচ্যুতির হুমকি দেন।
আরও পড়তে পারেন-
- ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে ঠাট্টা-তাচ্ছিল্য জঘন্য গুনাহ
- উগ্র হিন্দুত্ববাদ এবং মুসলিমবিদ্বেষ ভারত ও বাংলাদেশের জন্য হুমকি
- ‘ইবাদুর রাহমান’ বা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বিশেষ ১২টি গুণ
- মৃত্যুর স্মরণ জীবনের গতিপথ বদলে দেয়
- যে কারণে হিন্দুত্ববাদের নতুন নিশানা ‘দারুল উলূম দেওবন্দ’
এ প্রসঙ্গ কল্পোকপিস্ট সাদিয়া মাহবুব বলেন, এ বিষয়ে বিএসএমএমই’র ভিসি’র চিঠি দিয়ে ও দেখা করে প্রাপ্য টাকা বুঝিয়ে দিতে অনুরোধ করা হয়। তিনি একটি তদন্ত কমিটি গঠনে এবং সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। তবে সেগুলোর কিছুই হয়নি।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা দেখা করলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে এই প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জুন, ২০২৪ থেকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেখানো হবে। আমরা বুঝতে পারছি, প্রকল্প পরিচালকের অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িতদের রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। ডা. সাদিয়া বলেন, আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে যখনই জানিয়েছি আমাদের কাছে সব প্রমাণ আছে। কিন্তু তারা সময়ক্ষেপণ করে ডা. আশরাফুন্নেসাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন।
প্রফেসর ডা. আশরাফুন্নেসার সঙ্গে অনিয়মের বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার মোবাইলে চেষ্টা করলে তিনি মোবাইল কল কেটে দেন। এ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউ’র রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার সব কর্মীরা চাকরি হারিয়েছেন। তাছাড়া এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রকল্প নয়, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় এর সঙ্গে যুক্ত নয়। তিনি বলেন, এ প্রকল্প বন্ধ করে দিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
উম্মাহ২৪ডটকম: আইএ