জগদ্বিখ্যাত দার্শনিক হযরত জালালউদ্দিন রুমি একবার একটা বনের মাঝ দিয়ে যাওয়ার সময় একটা বড় কালো তিতির পাখি ধরে ফেলেন। রুমি যখন ভাবছেন যে, পাখিটাকে কীভাবে খাবেন; আগুনে ঝলসে; নাকি তরকারি রান্না করে!
এমন সময় পাখিটি বলে ওঠে— “ওহে রুমী! তুমি তোমার এই জীবনে এতো গোশত খেয়েছো; অথচ তোমার এই আমিষের আকুতি শেষ হয় না। আমার এই ছোট্ট দেহে তো হাড্ডি ছাড়া তেমন মাংস নেই। তুমি যদি আমাকে ছেড়ে দিয়ে মুক্ত করে দাও; আমি তোমাকে তিনটি মূল্যবান পরামর্শ দেবো; যা মেনে চললে তোমার জীবনকে সফল ও স্বার্থকরূপে সাজিয়ে তুলতে পারবে এবং অনেক উপকৃত হবে”।
মাওলানা রুমি কিছুটা বিচলিত হয়ে বললেন— “আমার হাতে বসেই প্রথম পরামর্শটা দাও; আগে আমি তোমার প্রথম উপদেশটা শুনি। যদি পছন্দ না হয়; সঙ্গে সঙ্গে তোমাকে জবাই করে ফেলব”।
পাখিটি রাজি হয়ে বললো, আমার প্রথম উপদেশ হলো- (১) “তুমি সব সময় তোমার বন্ধুদের উদ্ভট কথায় হুটহাট বিশ্বাস করে বিচলিত হয়ে পড়ো; এটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। শোন, অসম্ভব বা অবাস্তব কোনো বিষয়কে ভাবনা-চিন্তা ছাড়া কখনও বিশ্বাস করবে না। বুদ্ধির ব্যবহার তথা চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিবে। এতে তোমার জীবনে আফসোস ও হতাশার কারণ কম হবে এবং ভুল কম হবে”।
মাওলানা রুমি কিছুটা চিন্তা নিয়ে ভাবতে থাকেন; পাখিটার কথায় বোধ ও চিন্তার খোরাক আছে। পাখির পরামর্শটা অনেক মূল্যবান মনে হল তার। রুমি তখন পাখিকে দ্বিতীয় পরামর্শ দিতে বললেন।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
তিতির পাখি বলে— ‘তুমি আমায় ছেড়ে দিলে ওই গাছের ডালে বসে দ্বিতীয় উপদেশটা দেবো।’ রুমি তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পাখিটিকে ছেড়ে দেন; আর পাখি ওড়ে গিয়ে কাছেই একটি গাছের ডালে গিয়ে বসে।
পাখিটা এবার তার দ্বিতীয় উপদেশ বলতে শুরু করল— (২) “ওহে রুমী! অতীতকে কখনো পালটানো যায় না। সুতরাং অতীতের পেছনে লেগে না থেকে বর্তমান মুহূর্তটিকে উপভোগ করবে। আর ভবিষ্যতের সফলতার জন্য লক্ষ্য স্থির করে সামনে এগিয়ে যেতে সচেষ্ট থাকো”।
এরপর পাখিটি মাওলানা রুমিকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠল- যা হোক, বড় বোকামি করেছো তুমি। আমার পেটের মধ্যে তিন কেজি ওজনের হীরা আছে। তুমি এটা পেলে তোমার তিনপুরুষ বসে খেতে পারতে।’
সাংঘাতিক ঘাবড়ে গিয়ে রুমি আফসোস করতে থাকলেন এবং তিতির পাখিটি ধরতে রেগে ছুটতে থাকেন। পাখি তখন জোরে জোরে বলে ওঠে— “রুমি! তুমি দেখছি আমার কোন উপদেশই একেবারেই মন দিয়ে শুনলে না। আমার নিজেরই ওজন যেখানে দুই কেজির বেশি নয়; আমার পেটে কী করে তিন কেজি ওজনের হীরা থাকবে! তুমি দেখছি এখনো উদ্ভট আর বোধহীন কথায় প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছো! দ্বিতীয়ত আমি এরই মাঝে তোমাকে ছেড়ে গেছি; তোমার জীবনে এখন আমি অতীতের বিষয়। আমার নাগাল তুমি আর পাবে না জেনেও আমাকে ধরতে ছুটতে শুরু করেছ এবং অতীতের ভুলের উপর অফসোস করে নির্থক কষ্ট পাচ্ছ”!
পুরোপুরি স্তম্ভিত হয়ে রুমি তখন তৃতীয় পরামর্শের জন্য পাখিটিকে অনুরোধ করল।
তিতির পাখিটি তৃতীয় উপদেশ বলতে শুরু করল— (৩) “শোনো রুমি; সবাইকে উপদেশ দিতে যেও না। শুধু তাদেরকেই উপদেশ দাও, যারা সেটা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং অন্তরে ধারণ রাখে। মনে রেখো, কিছু কাপড় এতো জীর্ণ হয়ে যায়; যা আর কখনো সেলাই করা যায় না।” সুতরাং আমি চললাম— এই বলে পাখিটি অজানার উদ্দেশ্যে ওড়ে গেল।
মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর- ইফতেখার আহমদ
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম