শেখ সিরাজুম রশীদ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট বা চ্যাটজিপিটির কথা আমরা সবাই জানি। ইনস্ট্রাকশন পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এটি তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ এর কাছে আপনি যা জানতে চাইবেন, সে আপনাকে তা–ই জানাবে।
ধরা যাক, আপনি ছুটির দরখাস্ত লিখবেন। সে ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটিকে কমান্ড দেবেন, যেখানে লিখবেন কত দিন ছুটি, কার বরাবর লিখতে হবে, আপনি কোন পদে কাজ করেন; এ রকম কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য। এরপর এই চ্যাটবট নিজেই আপনাকে একদম নির্ভুল পূর্ণাঙ্গ দরখাস্ত লিখে দেবে। পরবর্তী সময়ে কিছু যোগ বা বিয়োগ করতে চাইলেও তা করার সুযোগ রয়েছে।
চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে তৈরি করা যেতে পারে জীবনবৃত্তান্ত, সম্পাদনা করা যেতে পারে সংবাদ, বইয়ের সারসংক্ষেপ। এমনকি যথাযথভাবে কমান্ড দিলে আপনার জন্য কবিতাও লিখে দেবে এই বট।
তো চ্যাটজিপিটি যখন সবকিছু এত সহজ করে দিচ্ছে, তখন তার কাছ থেকে জীবনে সফল হওয়ার কৌশল জানতে অসুবিধা কোথায়? এমন নয় যে চ্যাটজিপিটি আপনার জীবনযাপন করে দেবে বা আপনার কাজগুলো করে দেবে। কিন্তু আপনাকে সে পথ তো দেখাতে পারে। সে জন্য তার কাছে যথাযথ তথ্য দিয়ে আপনাকে সাহায্য চাইতে হবে।
আপনি যে পেশারই হোন না কেন, প্রশ্ন করা মাত্র সে উত্তর দেবে। তবে হ্যাঁ, সফলতার পথে হাঁটার উপায় জানতে চাইলে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রেও আপনাকে হতে হবে কৌশলী। মানে এমনভাবে প্রশ্ন করতে হবে, যেন চ্যাটজিপিটি আপনাকে সঠিক পথটিই দেখাতে পারে।
যত সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করবেন, তত সুস্পষ্ট উত্তর পাবেন। কারণ, এভাবেই তৈরি করা হয়েছে এই অ্যাপ্লিকেশন।
আরেকটা বুদ্ধি শিখিয়ে দিই। চ্যাটজিপিটিতে স্কয়ার ব্র্যাকেট বা বর্গাকার যে বন্ধনী থাকে, সেটি ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কিছু শব্দ তার ভেতর যুক্ত করে কমান্ড দেওয়া যায়। উত্তরে ওই বন্ধনীর ভেতরের শব্দের সম্ভাব্য বিকল্প ব্যবহার করবে চ্যাটবট। অর্থাৎ, আপনি যে বিষয়টির ওপর জোর দিলেন, সেটির বিষয়ে কোনো বিকল্প থাকলে তা–ও জানা যাবে।
সাফল্যের জন্য চ্যাটজিপিটির নির্দেশনা
প্রথমেই সেই বিষয়টি খুঁজে বের করুন যা আপনাকে উদ্দীপ্ত করে। নিশ্চয়ই জীবনে এমন কোনো মুহূর্ত এসেছে, যখন আপনি কাজের জন্য উদ্দীপনা পেয়েছেন। সেটা মনে করিয়ে দিতে চ্যাটজিপিটির সাহায্য নিতে পারেন।
চ্যাট বক্স খুলুন আর লিখুন, ‘আমার ব্যবসা বা ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করো। জানতে চাও কোনো উপায়ে সেগুলো সবচেয়ে দ্রুত অর্জিত হয়েছিল। আমার পূর্ববর্তী সাফল্যের তথ্য জানতে চাও, জানতে চাও যে কী আমাকে সবচেয়ে বেশি উদ্দীপনা জোগায়।’
এরপর চ্যাটবট যে পাল্টা প্রশ্ন করবে, সেগুলোর সঠিক উত্তর দিন।
এবার আসুন দেখি, কীভাবে আপনি নতুন তথ্যকে নিজের মধ্যে ধারণ করবেন বা জীবনে প্রয়োগ করবেন।
আরও পড়তে পারেন-
- ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে ঠাট্টা-তাচ্ছিল্য জঘন্য গুনাহ
- উগ্র হিন্দুত্ববাদ এবং মুসলিমবিদ্বেষ ভারত ও বাংলাদেশের জন্য হুমকি
- ‘ইবাদুর রাহমান’ বা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বিশেষ ১২টি গুণ
- মৃত্যুর স্মরণ জীবনের গতিপথ বদলে দেয়
- যে কারণে হিন্দুত্ববাদের নতুন নিশানা ‘দারুল উলূম দেওবন্দ’
এবারও চ্যাটজিপিটিকে লিখুন, ‘আমি জটিল ধারণাগুলো কীভাবে সহজে এবং কত সময়ের মধ্যে বুঝতে পারি তা জানতে চাও। কোন পদ্ধতিতে আমি সহজে কোনো কিছু শিখে ফেলি তা–ও জানতে চাও।’
একইভাবে চ্যাটজিপিটির কাছে জানতে চান যে পেশাজীবনের কোন মুহূর্তগুলোয় নিজেকে গর্বিত বোধ করেছেন, কোন বিষয়টি অন্যদের চেয়ে আপনাকে আলাদা করেছে কিংবা আপনার ভেতরে সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে কোন বিষয়টিকে মনে করেন।
এসব কমান্ডের বিপরীতে চ্যাটবট আপনাকে পাল্টা প্রশ্ন করবে। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিন। মনে রাখবেন, আপনি চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে সাফল্যের পথ খোঁজার চেষ্টা করছেন। তাই সঠিক ও সত্য তথ্য দেওয়া জরুরি।
চ্যাটজিপিটিকে বলুন, ‘আমার সবচেয়ে বড় অর্জন সম্পর্কে জানতে চাও। জানতে চাও যে কীভাবে আমি নিজের পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তব রূপ দিই। কোন পদ্ধতিতে আমি কাজ করি, তা–ও জানতে চাও।’
সফলতার পথে হাঁটার আগে নিজের কতটুকু অর্জনকে সফল বলে মনে করবেন, তা–ও বের করা জরুরি।
সে জন্য প্রশ্ন করুন, ‘আমার কাছে জানতে চাও যে কী আমাকে পরিপূর্ণ করে? কীভাবে আমি পরিমাপ করি সাফল্য বা ব্যর্থতা।’
সব তথ্য যখন দেওয়া শেষ হবে, তখন চ্যাটজিপিটিকে বলুন, ‘ওপরের আলোচনার ভিত্তিতে আমার জীবনের জন্য একটি মন্ত্র ঠিক করে দাও। আমি কিসে উদ্দীপ্ত হই, কীভাবে কাজ করি, কী আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়, কোন উপায়ে কাজ করলে দ্রুত সফল হতে পারব, এসব জানাও। সঙ্গে তিনটি বিকল্পও দেবে। যেন এর থেকে একটি আমি বেছে নিতে পারি।’
ব্যস, শেষ কথোপকথনে চ্যাটজিপিটি আপনাকে একটি ধারণা দেবে। কীভাবে আপনি জীবনে সফল হতে পারেন, আর কতটুকু কাজ করতে হবে বা কীভাবে কাজ করবেন তার ওপর পরামর্শ দেবে।
এরপর সেভাবে কাজ করবেন কি না, সেই পদ্ধতিতে আপনি এগোতে চান কি না, তার ওপর নির্ভর করছে আপনার সাফল্য–ব্যর্থতা।
সূত্র- ফোর্বস অবলম্বনে
উম্মাহ২৪ডটকম: আইএ