Home অর্থনীতি আর্থিক বিনিয়োগের সঠিক পথ: ঝুঁকিহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের বিশ্লেষণ

আর্থিক বিনিয়োগের সঠিক পথ: ঝুঁকিহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের বিশ্লেষণ

।। সাইফুল হোসেন ।।

বিনিয়োগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে, কিন্তু বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সময় জটিল হয়ে পড়ে। কারণ বিনিয়োগের সঙ্গে ঝুঁকি ও সম্ভাবনার সংযোগ রয়েছে।

বিনিয়োগকে মূলত দুটো প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়: ঝুঁকিহীন বিনিয়োগ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ। প্রতিটি বিনিয়োগের ধরনই নির্দিষ্ট কিছু সুবিধা ও ঝুঁকি নিয়ে আসে। প্রত্যেক বিনিয়োগকারীকে সেই ঝুঁকির প্রভাব এবং তাদের ব্যক্তিগত লক্ষ্য বিবেচনায় রাখতে হয়।

প্রথমেই আলোচনা করা যাক ঝুঁকিহীন বিনিয়োগ সম্পর্কে। এ ধরনের বিনিয়োগ সাধারণত নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়। এতে শেয়ারবাজারের মতো দৈনিক পরিবর্তন নেই এবং অর্থ হারানোর সম্ভাবনা কম।

ঝুঁকিহীন বিনিয়োগে সাধারণত সরকারি সঞ্চয়পত্র, ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট বা সেভিংস একাউন্ট এবং সরকারি বন্ড থাকে। এ বিনিয়োগের একটি প্রধান সুবিধা হলো স্থিতিশীল রিটার্ন। অসুবিধা হলো, এ বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত রিটার্ন তুলনামূলক কম হয়।

অন্যদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে শেয়ারবাজার, জমি বা সম্পত্তি, এবং স্বর্ণের মতো বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের বিনিয়োগে বড় আকারের রিটার্ন পাওয়া সম্ভব, তবে ঝুঁকিও বেশি।

অনেক সময় বিনিয়োগের সম্পদ মূল্য অনেক বেড়ে যায়, তবে মূল্য হ্রাসের সম্ভাবনাও থাকে। উদাহরণস্বরূপ, জমি বা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা যায়, কয়েক বছরে সম্পদের মূল্য কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু একসময় সেটি কমে গিয়ে বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করা যায়। একজন তার সব অর্থ নিরাপদ বিনিয়োগে রেখেছেন, যেমন ব্যাংক বা সঞ্চয়পত্রে। এতে ১০ বছরে তার বিনিয়োগের মূল্য দ্বিগুণ হয়েছে।

অন্যজন ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে অর্থ রেখেছেন, যেমন স্বর্ণ এবং শেয়ারবাজারে। তার বিনিয়োগ মূল্য প্রায় আট থেকে দশ গুণ বেড়েছে। এখানে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের প্রভাব স্পষ্ট, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষাপটে ঘটেছে।

এবার প্রশ্ন আসতে পারে, কেন বিনিয়োগ করবেন?

প্রথমত, আর্থিক লক্ষ্য পূরণের জন্য। আমাদের জীবনে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক লক্ষ্য থাকে, যেমন বাড়ি কেনা, সন্তানদের শিক্ষার জন্য সঞ্চয় করা, অবসরকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

শুধুমাত্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে এ লক্ষ্যগুলো পূরণ করা কঠিন হতে পারে। বিনিয়োগ আমাদের সম্পদকে দ্রুত বাড়াতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘমেয়াদে বড় আর্থিক লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হয়।

আরও পড়তে পারেন-

দ্বিতীয়ত, মূল্যস্ফীতি অতিক্রম করা। বর্তমান সময়ে মূল্যস্ফীতি নিয়মিতভাবেই আমাদের সঞ্চয়ের ক্ষমতাকে হ্রাস করে।

যদি আমরা আমাদের সম্পদ শুধু সঞ্চয়ে রাখি, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ব্যাংকে ৩-৪% সুদ পাওয়া যায়, কিন্তু মূল্যস্ফীতি ১০% হয়, তাহলে কার্যত আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হব।

তাই মূল্যস্ফীতিকে অতিক্রম করতে আমাদের বিনিয়োগ প্রয়োজন।

তৃতীয়ত, প্যাসিভ ইনকাম তৈরি করা। আমরা কর্মজীবনে সক্রিয় আয় তৈরি করি, যেমন চাকরি বা ব্যবসার মাধ্যমে। কিন্তু বিনিয়োগের মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম তৈরি করা সম্ভব।

প্যাসিভ ইনকাম আমাদের ক্রমাগত আয় প্রদান করে, আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়াই। উদাহরণস্বরূপ, সঞ্চয়পত্র থেকে সুদ পাওয়া একটি প্যাসিভ ইনকাম।

চতুর্থত, সঞ্চয়ের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা সীমিত। সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকের সুদ কম হওয়ার কারণে, আপনার সম্পদ প্রকৃতপক্ষে মূল্য হারাবে। বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনি বেশি রিটার্ন পেতে পারেন এবং আপনার সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। তবে মনে রাখতে হবে, এক জায়গায় সম্পূর্ণ বিনিয়োগ না করে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা উচিত, যাতে ঝুঁকি হ্রাস করা যায়।

পঞ্চমত, অবসরকালীন নিরাপত্তা। আমাদের কাজের সময় যে আর্থিক সুবিধা আমরা পাই, তা অবসর গ্রহণের পর আর থাকবে না। এ জন্য আমাদের এখনই বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। এক পরিচিত ব্যক্তি ২০০৯ সালে রিটায়ারমেন্টের পর তার সম্পদের বেশিরভাগ অংশ মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিলেন, এবং নিজের কাছে কোনো ফান্ড রাখেননি।

পরবর্তীতে তাকে প্রতিমাসে মেয়েদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার জন্য অপেক্ষা করতে হতো। এ ধরনের অবস্থায় না পড়তে চাইলে সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে হবে এবং অবসরকালীন ফান্ড তৈরি করতে হবে।

বিনিয়োগে সফলতা পেতে হলে কী করতে হবে? বিনিয়োগ সফল করতে হলে অবশ্যই বিনিয়োগের জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং সঠিক সময়ে বিনিয়োগ করতে হবে। পারসোনাল ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্টের ধারণা অর্জন করতে হবে এবং নিজেদের আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।

আর্থিক লিটারেসি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষিত হতে হবে এবং বিনিয়োগের ঝুঁকি ও সুযোগগুলো বোঝার ক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে।

সংক্ষেপে, বিনিয়োগ আমাদের আর্থিক সুরক্ষা, লক্ষ্য পূরণ এবং সম্পদ বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিনিয়োগের পূর্বে সঠিক জ্ঞান অর্জন ও দক্ষতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।

– সাইফুল হোসেন, দি আর্ট অব পার্সোনাল ফাইনান্স ম্যানেজমেন্ট বইয়ের লেখক, কলামিস্ট, ইউটিউবার এবং ফাইনান্স ও বিজনেস স্ট্র্যাটেজিস্ট।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।