Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন অনৈক্য গ্রাস করলে ধ্বংসের জন্য বাইরের দুশমনের প্রয়োজন হবে না: আল্লামা মুফতি...

অনৈক্য গ্রাস করলে ধ্বংসের জন্য বাইরের দুশমনের প্রয়োজন হবে না: আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী

বয়ান করছেন দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী। ছবি- ইবরাহীম খলীল।

মুনির আহমদ: দেশের অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উম্মুল মাদারিস জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী বলেছেন, জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে সঠিক তরবিয়ত অর্জন করা জরুরি। আর সেটা একমাত্র কওমি মাদরাসায় শিক্ষা দেওয়া হয়।সঠিক তরবিয়ত না থাকলে জ্ঞান অর্জনের দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়না বরং ক্ষতির শিকার হয়। যার কারনে আজ আমাদের সমাজে চরম অশান্তির বিরাজ করছে। আর এর একমাত্র কারন হচ্ছে সঠিক তরবিয়ত না থাকা।

গতকাল (১২ অক্টোবর) শনিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে মাদ্রাসাতুস শরফ আল ইসলামিয়ার ২ দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক ইসলাম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বিশেষ অতিথির বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন।

আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী আরো বলেন, তারবিয়াত তথা অনুশীলনের কারণে কওমি মাদ্রাসা পড়ুয়া আলেমদের মধ্যে আলাদা বিশেষত্ব তৈরি হয়। তাঁদের চলাফেরা, কথাবার্তা, আচরণ, লেনদেন এবং নীতি-আদর্শের জায়গায় এক একজন ইসলামের আদর্শবান মডেল হিসেবে সমাজে উপস্থাপিত হন। তাঁরা যে সৎ, নীতিবান, শান্তিপ্রিয় ও আদর্শবান মুসলমান, তাদেরকে দেখলেই সকলে সহজে বুঝতে ও উপলব্ধিতে নিতে পারেন। ইউরোপ, আমেরিকার যেখানেই তারা থাকুক না কেন, তাঁদেরকে সকলে চিনে ফেলেন যে তারা মুসলমান এবং তাঁরা সৎ, নীতিবান ও শান্তিপ্রিয় মানুষ।

তিনি বলেন, অপরদিকে জেনারেল প্রতিষ্ঠানে ইসলাম পড়ুয়ারা শুধু একাডিম জ্ঞান অর্জন করেন, কিন্তু এর পাশাপাশি তারবিয়াতি শিক্ষা অর্জন করতে পারেন না। যে কারণে তারা অনেক বিখ্যাত ইসলামী স্কলার হতে পারলেও তাদেরকে বাহ্যিকভাবে দেখে সেটা বুঝার উপায় নেই। তারা ইসলামের একাডিম জ্ঞান অর্জন করলেও বাস্তব জীবনে এর প্রশিক্ষণ নিতে পারেন না। যে কারণে তাদের চলাফেরা ও আচরণে ইসলাম পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় না। তারা ইসলামের আদর্শিক মডেল হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন না। তাদেরকে দেখলে কেউ বুঝবে না যে- তারা মুসলমান, না অন্য কোন ধর্মের অনুসারী।

আরও পড়তে পারেন-

সম্মেলনে মাদ্রাসাতুস শরফ আল ইসলামিয়ার দস্তারে ফযীলত গ্রহণকারী তরুণ আলেমদের উদ্দেশ্যে হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম বলেন, আপনারা আজ দস্তারে ফযীলত পেয়ে সম্মানিত হয়েছেন। কিন্তু মনে রাখবেন, এই দস্তার গ্রহণ সাধারণ প্রাপ্তি নয়। বরং এর মধ্য দিয়ে আপনাদের স্কন্ধে আপনাদের উস্তাদগণ ও প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে দ্বীনি বিষয়ে বিশাল দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। আপনাদেরকে যোগ্যতার সনদ দিয়েছেন। সুতরাং শিক্ষাজীবনে যে ইলম ও তরবিয়ত প্রাপ্ত হয়েছেন, তার উপর পরিপূর্ণ রূপে আমল করতে সবসময় সচেষ্ট থাকবেন। সুন্নাহ অনুযায়ী ও তাকওয়ার উপর চলবেন। ইলমি খেদমতে লেগে থাকবেন এবং সাধ্যমতো দ্বীনের ও উম্মাহর খিদমতে লেগে থাকবেন। উলামা, তুলাবা ও মুসলমানদের পারস্পরিক ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রখার উপর কাজ করবেন। আমরা সকলে যদি ঐক্য বজায় রাখতে পারি, দুশমনরা আমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি আমাদেরকে অনৈক্য ও বিভেদ গ্রাস করে, তাহলে আমাদের ধ্বংসের জন্য বাইরের দুশমনের প্রয়োজন পড়বে না।

তরুণ আলেমদের উদ্দেশ্যে আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী আরো বলেন, ইসলামের বাইরের সকল শক্তি ইসলামী শিক্ষাকে ভয় পায় না, বরং ইসলামের আদর্শকে ভয় পায়। কারণ, ইসলামের এই আদর্শ যদি জগতের সামনে ফুটে ওঠে, তাহলে পুঁজিবাদ, সম্রাজ্যবাদ ও কমিউনিজমের সকল ধোঁকা, প্রতারণা ও মানবাধিকারের বুলি সকলের চোখের সামনে ভেসে উঠবে এবং ইসলাম অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে গিয়ে বিজয়ী হবে। এতে তাদের লুণ্ঠনের সকল কলাকৌশল ও পলিসি ধুলিস্মাৎ হয়ে ভেসে যাবে।

মাওলানা ওবাইদুল কাদের নদভী কাসেমীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে আরো বয়ান করেন- ভারতের মুফতি নিয়াজ আহমদ নদভী, পাকিস্তানের আল্লামা হানীফ জালান্ধরী, সাইয়্যেদ আবদুল আলী নদভী, আল্লামা আবু তাহের নদভী, আল্লামা আবদুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, মাওলানা আবদুর রাজ্জাক নদভী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি আলী হাসান উসামা প্রমুখ।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।