Home অর্থনীতি সমবায় ব্যাংকের স্বর্ণ গায়েবে ‘যুক্ত’ সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন

সমবায় ব্যাংকের স্বর্ণ গায়েবে ‘যুক্ত’ সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন

সমবায় ব্যাংকে জামানত হিসেবে জমা রাখা ঋণগ্রহীতাদের ১৩ হাজার ভরি সোনা গায়েবের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও কর্মকর্তাদের দায়ের করা মামলার তথ্য অনুযায়ী, সমবায় ব্যাংকে নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেড ৫ হাজার ৮০৩ ভরি এবং ২ হাজার ৩১৬ জন সাধারণ গ্রাহক ৭ হাজার ৩৯৮ ভরি সোনা জমা রেখেছিলেন।

মামলার নথি এবং সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমের উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে গ্রাহকদের জামানতের এই স্বর্ণ বের করে নেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন।

মহিউদ্দিন ২০০৯ সালে সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। সোনা গায়েবের এই ঘটনা ২০২০ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ঘটে।

তবে সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় ২০২১ সালে দুদক যে মামলা করেছে, সেখানে মহিউদ্দিনের নাম নেই। তিনি প্রভাব খাটিয়ে মামলার অভিযোগপত্র থেকে নিজের নাম বাদ দিয়েছিলেন। এমনকি মামলার তদন্তও স্থগিত করে রাখেন এতদিন।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এই বিশাল জালিয়াতির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছেন।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সমবায় ব্যাংকের অবস্থা দেখতে গিয়ে জানলাম, ১২ হাজার ভরি সোনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এরইমধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সমবায় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকটিতে স্বর্ণ জামানত রেখে ঋণ নিতে পারেন গ্রাহকরা। কোনো গ্রাহক খেলাপি বা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে জামানতের স্বর্ণ নিলাম বা বিক্রি করে ঋণ সমন্বয় করা হয়।

২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় অনেক গ্রাহক খেলাপি হয়ে পড়েন। ওই সময় তৎকালীন চেয়ারম্যান স্বর্ণ নিলাম না করে ভুয়া গ্রাহক সাজিয়ে হাজার হাজার ভরি স্বর্ণ ব্যাংক থেকে বের করে নেন।

দুদকের মামলার নথিতে বলা হয়েছে, সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময় ২০২০ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর সময়ে মহিউদ্দিন মোট ৭ হাজার ৩৯৮ ভরি স্বর্ণ ২ হাজার ৩১৫ জন গ্রাহকের ঋণ পরিশোধ সাপেক্ষে ব্যাংক থেকে বের করে দেন।

আরও পড়তে পারেন-

কিন্তু এসব গ্রাহকের ঋণ পরিশোধ করে স্বর্ণ নিয়েছেন, তারা কেউই ব্যাংকটির গ্রাহক ছিলেন না। ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে তারা প্রকৃত গ্রাহকের ঋণ পরিশোধ করে জামানতের স্বর্ণ নিয়ে যান। এতে প্রকৃত গ্রাহকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

এ জালিয়াতির ঘটনা জানাজানি হলে তদন্ত শুরু করেছিল পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, যাদের অধীনে সমবায় ব্যাংক পরিচালিত হয়। কিন্তু মহিউদ্দিন প্রভাব খাটিয়ে সেই তদন্ত থামিয়ে দেন বলে জানান সমবায় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

২০২১ সালে দুদক স্বর্ণ খোয়া যাওয়ার ঘটনায় মামলা করে। মামলার এজাহারে ৯ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের মধ্যে এক নম্বরে নাম ছিল মহিউদ্দিন আহমেদের। তবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অভিযোগপত্র থেকে নিজের নাম বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি।

দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২০ সালে মতিঝিলে সমবায় ব্যাংকের সদর দপ্তরে জমা রাখা সোনা ফেরত নিতে অনেক গ্রাহক আবেদন করেন। এর মধ্যে ৪৫৫টি আবেদন যাচাই-বাছাই করে দুদক। তাতে দেখা যায়, ৩৩৫টি আবেদনপত্রে মূল নথিপত্রের সঙ্গে স্বাক্ষর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের মিল নেই। অর্থাৎ ভুয়া মালিক সাজিয়ে সোনা ফেরত নেওয়া হয়েছে।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।