Home সাক্ষাৎকার ‘মসজিদ হোক ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ বিনির্মাণের বাতিঘর’: সাক্ষাৎকারে মাও. মাসউদ আহমাদ

‘মসজিদ হোক ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ বিনির্মাণের বাতিঘর’: সাক্ষাৎকারে মাও. মাসউদ আহমাদ

মাওলানা মাসউদ আহমাদ—দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন বারিধারা জামে মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারে। পাশাপাশি মুহাদ্দিস হিসেবে যুক্ত রয়েছেন ঐতিহ্যবাহী জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসায়। জনগণের সঙ্গে ইমাম ও খতিবের সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তরুণ সমাজকে মসজিদমুখী করার ক্ষেত্রে তাদের পদক্ষেপ এবং আদর্শ মানুষ, পরিবার ও সমাজ গঠনে তাদের ভূমিকা নিয়ে সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন রায়হান রাশেদ।

দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বারিধারার ডিপ্লোমেটিক এলাকার মসজিদে ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কেমন লাগছে, কীভাবে আছেন?

মাওলানা মাসউদ আহমাদ: বারিধারা ১ নম্বর রোডের এ মসজিদ স্থাপিত হয় ১৯৯৬ সালে। এর আগে বারিধারায় একটি ছোট মসজিদ ছিল। তখন এই আবাসিক এলাকায় মানুষের বসবাস কেবল শুরু হয়েছিল। ছাত্রাবস্থায় এই মসজিদে জুমা ও খতমে তারাবির নামাজ পড়িয়েছি। ১৯৯৬ সালে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে পড়াশোনা শেষ করে এলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ আমাকে জুমার নামাজ পড়ানোর দায়িত্ব দেন। জুমা পড়ানোর মাধ্যমে এখানে খেদমতের শুরু। আল্লাহর ঘরে খেদমত করতে পারাটা বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার। শুরু থেকেই এলাকার মানুষ এবং মুসল্লিদের কীভাবে মসজিদমুখী, আখেরাতমুখী ও আল্লাহমুখী করা যায়, দুনিয়াতে সুন্দর জীবন গঠন, মানবতাবোধ তৈরি এবং পারস্পরিক সম্পর্ক সুন্দর করা, প্রতিবেশীর হক আদায়—সব কিছু মিলিয়ে চেষ্টা করছি যেন মুসল্লিরা ভালো জীবনযাপন গ্রহণ করতে পারেন।

জুমার খুতবায় সব সময় সমসাময়িক বিষয়ে আলোচনা করি। দেশীয় কিংবা বৈশ্বিক বিষয়ে মুসলমানকেন্দ্রিক কোনো ঘটনা ঘটলে সেটি তুলে ধরি। কোরআন-হাদিসের আলোকে সুন্দর জীবনযাপনের পদ্ধতির কথা বলি। সব মসজিদের মুসল্লিরা চান, জুমার খুতবায় ইমাম সাহেব এমন বিষয়ের আলোচনা করুক, যেটা তার জীবনের পাথেয় হবে। আমি সে রকমই চেষ্টা করি। এভাবেই তিন যুগ সময় ধরে প্রতি জুমায় বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করছি। দেশের নেতৃত্বস্থানীয় লোক, শিল্পপতি, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ, মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত—তারা এ মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন, এ মসজিদকে প্রিয় মনে করেন। মসজিদ কমিটি নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনা ব্যবস্থা এত সুন্দর করে রেখেছেন, মুসল্লিরা খুশি।

আদর্শ সমাজ গঠনে একজন খতিবের কি কি ভূমিকা থাকতে পারে?

মাওলানা মাসউদ আহমাদ: এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমাজ যদি সঠিক পথ পেয়ে যায়, সমাজের মানুষ যদি সঠিক পথে চলে, তা হলে সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার দূর হবে। সমাজে যারা বসবাস করে—পুরুষ-নারী—সবাইকে আদর্শিক ও সভ্য সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে, সে মুসলিম বা অমুসলিম হোক। কারও ক্ষতি করা যাবে না। অন্যায়ে জড়ানো যাবে না।

আরও পড়তে পারেন-

খতিব হিসেবে এ বিষয়গুলো সমাজের অভিভাবক ও মানুষকে বোঝাতে হবে। একটি কল্যাণকামী ও আদর্শ সমাজ গঠনে কোরআন-হাদিসের দিক-নির্দেশনা বোঝাতে হবে। সর্বোপরি আমি বলতে চাই, মসজিদ হোক ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ বিনির্মাণের প্রধান বাতিঘর।

খতিবের পেশা বেছে নিলেন কেন?

মাওলানা মাসউদ আহমাদ: পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে কাজ করতে হয়, পেশায় জড়াতে হয়, উপার্জনের ব্যবস্থা করতে হয়। তবে আমি খুতবা বা নামাজ পড়ানোর ব্যাপারটিকে খেদমত হিসেবে নিয়েছি; পেশা হিসেবে নয়। আল্লাহ যাকে যে কাজ বা পেশার জন্য নির্বাচন করবেন, তাকে সেভাবেই কাজ করতে হবে। আমি মনে করি, ইমাম ও খতিবের কাজটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষভাবে নির্বাচিত না হলে করা সম্ভব নয়। আল্লাহ আমাকে নির্বাচন করেছেন বলেই আমি খতিবের দায়িত্ব পালন করছি। আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় নেয়ামত হলো ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা।

মুসল্লি বা জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার ক্ষেত্রে ইমাম ও খতিবের কী কী গুণ থাকা দরকার বলে মনে করেন?

মাওলানা মাসউদ আহমাদ: একজন খতিব যদি নিজের অবস্থানে থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন, মুসল্লিদের নিয়ে চিন্তা করেন, তাদেরকে আল্লাহমুখী করার চেষ্টা করেন, সুন্দর জীবনব্যবস্থা গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখেন, ইসলামি চিন্তা-চেতনায় তাদের গড়ে তোলেন, তা হলে একজন খতিব বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে সমাজে ভালো অবস্থান নিতে পারবেন। যদি কমিটি বা ব্যক্তি খুশি করার টার্গেট থাকে, তা হলে স্থায়িত্ব হওয়া যায় না। কোরআন-হাদিসের আলোকে মুসল্লিদের সামনে বিষয়ভিত্তিক কথা বললে মুসল্লি বা কমিটির লোকেরা খতিবের বয়ানের বিরোধিতা করে না বা প্রতিবাদ করে না। এভাবে কাজ করলে একজন খতিব সবার আস্থা অর্জন করতে পারবেন। সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে পারবেন।

তরুণ সমাজকে মসজিদমুখী করার ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?

মাওলানা মাসউদ আহমাদ: তরুণদের যদি কোরআন-হাদিস বোঝানো যায়, সঠিকভাবে গড়ে তোলা যায়, তা হলে তারা বিশুদ্ধ সমাজ গঠনে বড় অবদান রাখবে। তাদের মাধ্যমে সমাজ থেকে অন্যায়, অবিচার ও খারাপ কাজ দূর হবে। সমাজ ও দেশ আলোয় আলোয় ভরে উঠবে। পৃথিবীর ইতিহাসও এমন।

একজন খতিব যদি জুমার বয়ানে তরুণ ও যুবকদের বিষয়ে কোরআন-হাদিসের কথাগুলো বলেন, নবি (সা.)-এর তারুণ্যের কথা বলেন, আদর্শের কথা বলেন, আখেরাতের পুরস্কারের কথা বলেন, তা হলে তারা সঠিক পথের দিশা পাবে। ইসলামের ইতিহাসে যুবা ও তরুণদের কী অবদান ছিল, এগুলো বলতে হবে। তাদের নিয়ে প্রয়োজনে আলাদা সেমিনার করে ইসলামের কথা বোঝাতে হবে, তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। তা হলে আশা করা যায়, তারা মসজিদমুখী হবে। ইসলামমুখী হবে।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।