Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন পরোপকারে মেলে আত্মিক প্রশান্তি

পরোপকারে মেলে আত্মিক প্রশান্তি

।। মোখতারুল ইসলাম মিলন ।।

ইসলামের একটি অন্যতম মৌলিক শিক্ষা হলো মানবকল্যাণ ও পরোপকার। ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী, একজন মুসলিমের জীবনের লক্ষ্য শুধু নিজের কল্যাণে সীমাবদ্ধ নয়, বরং অন্যদের উপকার করাও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পরোপকার শুধু সমাজে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসে না, বরং তা ব্যক্তির সুখ এবং আত্মিক প্রশান্তির উৎসও বটে।

পরোপকারের গুরুত্ব : ইসলামে পরোপকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নীতি হিসেবে বিবেচিত। কোরআন-হাদিসে বারবার এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা নেকি ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সাহায্য করো। কিন্তু গুনাহ ও বিদ্রোহের কাজে সহায়তা করো না।’ (সুরা মায়েদা ২)

এখানে পরোপকারকে নেক কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। যারা অন্যের উপকার করে তারা আল্লাহর কাছে প্রিয় এবং আখেরাতে পুরস্কৃত হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তার বান্দার সাহায্যে ততক্ষণ পর্যন্ত থাকেন যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।’ (সহিহ মুসলিম) এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, যারা অন্যের জন্য কাজ করে, আল্লাহ তাদের বিশেষভাবে সাহায্য করেন। এটি কেবল আখেরাতের কথা নয়, বরং দুনিয়াতেও তাদের জন্য বরকত আসে।

সুখের উৎস : মানুষের মনের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য হলো, সে অন্যের জন্য কিছু করলে নিজের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ এবং তৃপ্তির অনুভূতি পায়। এটি শুধু ইসলামি আদর্শ নয়, আধুনিক মনোবিজ্ঞানও এটি সমর্থন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত পরোপকারমূলক কাজ করে, তাদের মধ্যে মানসিক চাপ কম এবং তাদের আত্মবিশ^াস ও সুখের স্তর বেশি। ইসলামে এটি বহু আগে থেকেই বলা হয়েছে যে, যারা মানুষের জন্য কাজ করে, তারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের আত্মিক সুখ লাভ করে।

আরও পড়তে পারেন-

আত্মিক উন্নতি ও প্রতিদান : ইসলামে বিশ্বাস করা হয় যে, পরোপকার শুধু দুনিয়ার নয়, আখেরাতেও শান্তি এবং কল্যাণের কারণ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি একবিন্দু পরিমাণ ভালো কাজ করে, সে তার প্রতিফল পাবে।’ (সুরা জিলজাল ৭) পরোপকারের কাজ যত ছোটই হোক না কেন, আখেরাতে সেটার জন্য বিশাল প্রতিদান অপেক্ষা করে। এটি মানুষের আত্মিক শান্তি এবং সুখের কারণ হয়। আখেরাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশা মানুষকে পরোপকারে আরও উৎসাহী করে তোলে এবং দুনিয়াতে তার সুখের পথ সুগম করে।

সমাজে পরোপকারের ভূমিকা : পরোপকার কেবল ব্যক্তিগত সুখের উৎস নয়, বরং এটি সমাজের উন্নয়নের প্রধান ভিত্তি। একজন পরোপকারী ব্যক্তি অন্যের জন্য কাজ করার মাধ্যমে একটি সহানুভূতিশীল ও সহযোগিতামূলক সমাজ গড়ে তোলে। ইসলাম এই নীতিকে উৎসাহিত করে, কারণ ইসলামের মূল লক্ষ্য মানবতার উন্নতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহর কাছে প্রিয় সেই ব্যক্তি, যে অন্যের কল্যাণে কাজ করে এবং সমাজে শান্তি নিয়ে আসে।

ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়, পরোপকার কেবল একটি দায়িত্ব নয়, বরং এটি নিজের সুখ এবং আত্মিক উন্নতির মাধ্যমও। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি লাভ করে। ইসলামে পরোপকারের গুরুত্ব এতটাই বেশি যে, এটি সমাজের উন্নয়ন এবং ব্যক্তির সুখের প্রধান মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিনের জীবনে পরোপকারমূলক কাজের মাধ্যমে নিজেকে এবং সমাজকে উন্নত করার চেষ্টা করা।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।