Home আন্তর্জাতিক ভারত ধীর গতিতে নাৎসি-স্টাইলের ফ্যাসিবাদের দিকে এগুচ্ছে

ভারত ধীর গতিতে নাৎসি-স্টাইলের ফ্যাসিবাদের দিকে এগুচ্ছে

“ভারত ফ্যাসিবাদের ধীর গতির উত্থানের সাক্ষী হচ্ছে” শিরোনামের একটি নোটে ভারতীয় লেখক এবং ইতিহাসবিদ মুকুল কেসাভান নাৎসি ফ্যাসিবাদ এবং ভারতের শাসক দলের হিন্দু জাতীয়তাবাদের মধ্যে মিলগুলো পরীক্ষা করেছেন। কেসাভান বিশ্বাস করেন যে ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী আন্দোলন বিশেষ করে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং এর মূল সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) নাৎসি ফ্যাসিবাদ থেকে মতাদর্শকে আলিঙ্গন করেছে।

নাৎসিবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত

কেসাভান উল্লেখ করেছেন যে বিজেপি এবং তার মূল সংগঠন আরএসএস বিভিন্নভাবে নাৎসি জাতীয়তাবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। আরএসএস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯২৫ সালে জার্মানিতে হিটলারের উত্থানের প্রায় একই সময়ে। সংস্থাটি যেটি ভারতকে একটি হিন্দু জাতি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে শুধুমাত্র হিন্দুদের যোগদানের অনুমতি দেয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক দশকের ফ্যাসিবাদী সামরিক সংগঠনগুলোর মতো সামরিক মহড়া, সামরিক অভিবাদন এবং চরম জাতিগত জাতীয়তাবাদের উপর জোর দেয়।

আরএসএস’র প্রধান মতাদর্শীদের একজন এমএস গোলওয়াককে উদ্ধৃত করে কেসাভান ১৯৩৯ সালে ” উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিফাইন্ড” বইতে তার লেখার উল্লেখ করেছেন। এই বইতে গোলওয়ালকার খোলাখুলিভাবে জার্মানির ইহুদিদের জাতিগত নিধনকে একটি ‘জাতীয় গর্ব’ এবং ভারতের জন্য একটি উদাহরণ হিসাবে প্রশংসা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘সেমেটিক জাতি – ইহুদিদের দেশকে ক্লিন করে জার্মানি তার সর্বোচ্চ স্তরে তার জাতীয়তাবাদ দেখিয়েছে। এটি ভারতে আমাদের জন্য একটি বড় শিক্ষা।’

সংখ্যালঘুদের দমন

কেশবন বিশ্বাস করেন যে বিজেপি এই ধারণাগুলোকে ভাল কাজে লাগিয়েছে। এই দলের নেতারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুসলমানদেরকে ‘বহিরাগত’ বলে অভিহিত করে এবং তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে একঘরে ও নির্মূল করার নিয়মিত প্রচেষ্টা চালিয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ ভারতীয় পার্লামেন্ট এবং রাজ্যসভায় বিজেপির কোনো মুসলিম প্রতিনিধি নেই।

কেসাওয়ান গত এক দশকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতা ও বৈষম্যের দিকেও ইঙ্গিত করেছেন। এই সহিংসতার মধ্যে রয়েছে গবাদি পশুর ব্যবসার সাথে জড়িত মুসলমানদের হত্যা, তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা এবং আইন পাস যা পরোক্ষভাবে মুসলিম পুরুষ এবং হিন্দু মহিলাদের মধ্যে সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। তিনি বিশ্বাস করেন যে মুসলমানদের এই নিয়মতান্ত্রিক দমন ভারতে সমান নাগরিক হিসাবে তাদের মর্যাদা অস্থিতিশীল করার একটি উদ্দেশ্যমূলক ব্যবস্থা।

আরও পড়তে পারেন-

নাৎসিবাদের সাথে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের মিল

লেখক জোর দিয়ে বলেছেন যে আধুনিক সংখ্যাগরিষ্ঠদের জন্য নাৎসিবাদের একটি মূল পাঠ হল যে সংখ্যালঘুদের ধারাবাহিক দানবীয়করণ একটি নামমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠকে একটি ক্ষিপ্ত রাজনৈতিক দানবতে পরিণত করার দ্রুততম উপায়। হিটলার যেমন ২০ বছরেরও কম সময়ে ইহুদিদের একটি ব্যয়যোগ্য নিম্ন শ্রেণীতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিল, তেমনি বিজেপি ভারতীয় মুসলমানদের কোনঠাসা করতে চায়।

আরএসএস-এর প্রধান মতাদর্শী গোলওয়ালকারও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে লিখেছেন, “অহিন্দুদের হয় সম্পূর্ণরূপে হিন্দু সংস্কৃতিতে বিলীন হতে হবে অথবা নাগরিকত্বের কোনো অধিকার ছাড়াই হিন্দু জাতির শাসনের অধীনে বসবাস করতে হবে।”

ভারতের ভবিষ্যৎ এবং ফ্যাসিবাদের ধীর উত্থান

কেসাভান যুক্তি দেন যে ভারত তার জটিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কারণে, দ্রুত ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হবে না। তিনি বিশ্বাস করেন যে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং সময়সাপেক্ষ হবে। কিন্তু মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কার মতো উদাহরণে দেখা যায়, সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী দমন-পীড়ন হঠাৎ চরম পর্যায়ে আসতে পারে, যেমনটি দেখা যায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা এবং শ্রীলঙ্কার তামিলদের দমন। লেখক উপসংহারে বলেছেন যে যখনই মূলধারার রাজনীতিবিদরা “প্রভাবশালী” এবং “পঞ্চম কলাম” এবং সংখ্যালঘুদের নিয়োগে ব্যর্থতার কথা বলেন তখনই বাতাসে ফ্যাসিবাদের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। মুকুল কেসাভান সতর্ক করে দিয়ে উপসংহারে বলেছেন যে যদিও ভারতের ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে রূপান্তর ধীর হতে পারে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠ নীতিগুলো নাৎসি মতাদর্শের সাথে একটি বিপজ্জনক মিল দেখা যায়। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে গণতন্ত্র এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য এই প্রক্রিয়ার প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।

সূত্র- দ্য গার্ডিয়ান

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।