Home জাতীয় এস আলম মুক্ত হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক

এস আলম মুক্ত হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক

বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘ প্রায় সাত বছর পর সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলমের দখল থেকে মুক্ত হতে যাচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া হতে পারে। স্বল্প সময়ের জন্য স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়ে পাঁচ/সাত সদস্যের একটি নতুন পর্ষদ গঠন হতে পারে। তবে ইসলামী ব্যাংকে এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন শেয়ারগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হবে। ইসলামী ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেয়া প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা ফেরত দিতে না পারলে তার শেয়ার বিক্রি করে সমন্বয় করা হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ২ শতাংশ শেয়ারের মালিক হয়ে পুরনো পরিচালকরা পর্ষদে আসতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
এ দিকে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, যারা ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত দেননি, তাদের ছাড় দেয়া হবে না। টাকা উদ্ধারে আইনগত যত পন্থা আছে, সবই অনুসরণ করা হবে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া হবে। ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক দুই দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। অন্য ব্যাংকগুলো নিয়েও একই সিদ্ধান্ত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংক থেকে টাকা লুট করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অর্থের অন্যতম জোগানদাতা এস আলমসহ তার পরিবারের সদস্যরা ইতোমধ্যে দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর এস আলমের দখলে থাকা ব্যাংকগুলোতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আট ব্যাংক থেকে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা ঋণের নামে বের করে নেয়া হয়েছে। এখন ইসলামী ধারার আট ব্যাংকই চরম অর্থসঙ্কটে ভুগছে। ইসলামী ব্যাংক ছাড়া বাকি সাতটি ব্যাংকই গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন। গতকাল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ অন্য ছয় ব্যাংকে গ্রাহকরা তাদের আমানত প্রত্যাহারের জন্য ভিড় করতে থাকেন। একজন শাখা ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, বেশির ভাগ শাখাই গ্রাহকের টাকা দিতে পারেনি। এ নিয়ে ব্যাংকগুলোতে চলছে চরম বিশৃঙ্খলা। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যত দ্রুত ব্যাংকগুলোকে এস আলম মুক্ত করতে পারবে তত দ্রুতই গ্রাহকদের আস্থা ফিরে আসবে।

এমনি পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার এস আলম মুক্ত হয় ন্যাশনাল ব্যাংক। সাত সদস্যের নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সাথে এস আলম যাতে ছয় ব্যাংক থেকে তাদের শেয়ার হস্তান্তর করতে না পারে সে জন্য এস আলম পরিবারের ২৫ সদস্য ও তার ৫৬ প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকা ব্যাংকগুলোর শেয়ার হস্তান্তরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। আজ ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়া হচ্ছে। আগামী রোববার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়া হতে পারে। এভাবে পর্যায়ক্রমে এস আলমের মালিকানায় থাকা সব ব্যাংকেরই পর্ষদ ভেঙে দেয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
এ দিকে এস আলমের দখলে থাকা ছয় ব্যাংকের ৮০ থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে এস আলমের মালিকানায়; কিন্তু ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো একটি ব্যাংকে একক ব্যক্তি, পরিবার বা গোষ্ঠী সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা নিতে পারে; কিন্তু দেখা যাচ্ছে ইসলামী ব্যাংকে নামে-বেনামে এস আলমের দখলে রয়েছে ৮১ দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ার।

আরও পড়তে পারেন-

ইসলামী ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, বেশির ভাগ শেয়ারের মালিক হয়েছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দেশী-বিদেশী পরিচালকদের কাছ থেকে শেয়ার কিনে আলোচ্য পরিমাণ শেয়ারের মালিক হয়েছেন এস আলম। আর তার এ কাজে সরাসরি সহযোগিতা করেছে বোর্ড সেক্রেটারি ও এডিশনাল এমডি হাবিবুল্লাহ, ডিএমডি আকিজউদ্দিন ও মেফতা উদ্দিন। ইসলামী ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে এভাবে নামে-বেনামে এস আলমের ২৪ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৩১ কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার ১৬৫টি শেয়ারের মালিকানা নিয়েছে এস আলম গ্রুপ, যা ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ৮১ দশমিক ৯২ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও এস আলমের ছেলে আহসানুল আলমের মালিকানাধীন জেএমসি বিল্ডার্সের নামে শেয়ার রয়েছে তিন কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার ৮১২টি, যা ২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। এ ছাড়া বিটিএ ফাইন্যান্স, প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল, এবিসি ভেঞ্চারস, এক্সেল ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, প্লাটিনাম এনডেভার্স, এক্সেলশিয়ার ইমপেক্স, গ্র্যান্ড বিজনেস, লায়ন হেড বিজনেস রিসোর্সেস, বিএলইউ ইন্টারন্যাশনাল, আর্মদা স্পিনিং মিলস, কিংসওয়ে এনডেভার্স, ইউনিগ্লোব বিজনেস, সোলিভ ইন্স্যুরেন্স, হলিস্টিক ইন্টারন্যাশনাল, হাই ক্লাস বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, ক্যারেলিনা বিজনেস, ব্রিলিয়ান্ট বিজনেস, ব্রডওয়ে ইম্পেক্স, পিকস বিজনেস, এভারগ্রিন শিপিং, ম্যারাথন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, কিংস্টোন ফ্লাওয়ার মিলস ও পারসেপ্টা এনডেভার্স। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো একক ব্যক্তি, পরিবার ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করলেই তা হবে বেআইনি। প্রায় ৯২ শতাংশ শেয়ারের মালিক হয়ে এস আলম ব্যাংক কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করেছেন। এ কারণে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী এস আলমকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তার শেয়ারগুলো বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে। সবমিলেই এস আলম ব্যাংকিং খাতে যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। তাকে শাস্তি ভোগ করতেই হবে।

আর এ বিষয়টি গতকাল পরিষ্কার করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, যারাই অপরাধ করেছেন তাদেরকেই আইনের আওতায় আসতে হবে। ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত দেননি, তাদের ছাড় দেয়া হবে না। টাকা উদ্ধারে আইনগত যত পন্থা আছে, সবই অনুসরণ করা হবে।

তিনি বলেন, এস আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব শেয়ার সরকারের দায়িত্বে নেয়া হবে। এস আলম যদি সব দায় পরিশোধ করে তবে তাদের শেয়ার ছেড়ে দেয়া হবে, না হলে সমন্বয় করা হবে। এখন ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপ বা তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কারো নামে এককভাবে দুই শতাংশ শেয়ারের মালিক নেই। তাই পরবর্তী সময়ে যখন কোনো শেয়ারহোল্ডার দুই শতাংশ শেয়ারের মালিক হবেন তখন তাদের মধ্য থেকে পরিচালক নিয়োগ দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।