Home মহিলাঙ্গন সেক্যুলার চিন্তা যেভাবে আমাদের দ্বীনি মা-বোনদের আক্রান্ত করছে

সেক্যুলার চিন্তা যেভাবে আমাদের দ্বীনি মা-বোনদের আক্রান্ত করছে

।। ডা. তানজিনা রহমান ।।

বর্তমান দুনিয়ার ফিতনা বৃষ্টির ফোঁটার মতই ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে দ্বীনি পরিবারগুলোতেও। দ্বীনের নির্যাস রয়ে যাচ্ছে কিন্তু দ্বীন হারিয়ে যাচ্ছে। দুনিয়াবী সফলতার হাতছানি একমাত্র কারণ না হলেও অন্যতম একটি কারণ বা একটি অজুহাতও বলা যেতে পারে।

সংসার পরিবারকে তুচ্ছ জ্ঞান করা, বৈবাহিক সম্পর্কে অপ্রয়োজনীয় মনে হওয়া আজকালকার তরুন তরুনীদের ভেতরে একটি কমন চিন্তা। তারা মনে করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে উপার্জন করতে পারাটাই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। যারা ব্যর্থ সংসার কেবল তাদের জন্যই। যারাই দুনিয়াবী পড়াশোনায় এগিয়ে যাচ্ছে তাদের ভেতর অনেকেই বিয়ে বা সংসার বিমুখ হয়ে পড়ছে। কারণ তারা চায় স্বাধীন দায়িত্বহীন জীবন।অথচ ইসলামে প্রতিটি কাজই একটি দায়িত্ব।এই ধরনের চিন্তা সেক্যুলার সমাজ ধারণ করত যা এখন দ্বীনি পরিবারেও ঢুকে পড়েছে।

ইলম অর্জনের সাথে পয়সা উপার্জনের কোন সম্পর্ক নেই। ইলম অর্জন ফরজ নারী পুরুষ উভয়ের উপর।দ্বীনি ইলম এর সাথে উপকারী দুনিয়াবী ইলম অর্জন করতে ইসলাম অনুৎসাহিত করে না যতক্ষন তা শরীয়া বিরুদ্ধ কোন উপায়ে হয়।

যেমন ইলম  অর্জন ফরজ তাই মাহরাম ছাড়াই উপকারী জ্ঞান অর্জন করতে বিদেশ চলে গেলাম!এই কাজটি তারাই করে যাদের জন্য ইলমই মুখ্য নয় দুনিয়াবী স্ট্যাটাস স্বাধীন জীবনের লোভও সাথে আছে এবং ওই উদ্দেশ্যেই তারা শরীয়ার নিষেধ অমান্য করে।

ইলম অর্জন হলেই উপার্জন করতে হবে, উপার্জন করলেই স্বামী সংসারকে তুচ্ছ জ্ঞান করতে হবে এমন ধারণা থেকেই অনেক দ্বীনি পরিবারের মেয়েদেরও সংসার ভেঙে যাচ্ছে আজকাল।অথচ আমরা একবারও ভাবছি না এই দুনিয়ায় আমরা খুব অল্প দিনের বাসিন্দা। দুনিয়া সাজাতে আল্লাহ তা’লা আমাদের এখানে পাঠাননি।

সুক্ষ ভাবে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় ইলম অর্জনের উদ্দেশ্য হিসেবে উপার্জনকেই এরা গুরুত্ব দিচ্ছে।ফরজকে নয়। তাদের আর দাবিয়ে রাখা যাবে না,এই আগ্নেয়গিরি একটি মহল তাদের ভেতর স্লো পয়জনিং এর মত ঢুকাচ্ছে।কেউ বলছে, “বিপদে পড়লে যেমন স্বামী মারা গেলে সেই ইলম কাজে লাগিয়ে চলা যাবে”। জেনে রাখুন এমন নিয়্যাত থাকলে আল্লাহ তা’লা তেমন অবস্থাতেই আপনাকে ফেলবেন। মা’আযাল্লাহ!

যা হোক ঘুরে ফিরে উদ্দেশ্য সেই দুনিয়াই। আল্লাহ তা’লার উপর ভরশা করে সুন্নাহ অনুসরণে কাজ করে যাওয়া নয়।আল্লাহর আদেশ মেনে চলা নয়। একজন মুসলিম প্নুশাসন মেনে চলা বান্দার জন্য এ চিন্তা লজ্জাজনক।

সেক্যুলার সমাজের নারীরা যেভাবে বেরিয়ে এসেছে তারা একই পন্থায় দ্বীনি পরিবারগুলোতেও নিজেদের আদর্শ ঢোকাচ্ছে।আমাদের মেয়ে বোনেরা এই কুচক্রী নারীদের আইডেন্টিফাই করতে না পেরে নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে।

মহিলাদের নিজেদের সাথে নিজেদের ভেতর যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে এই স্মার্ট ফোনের কল্যানে।স্মার্ট ফোনের ভাল দিকের সাথে এটি মারাত্মক একটি খারাপ দিক।মহিলারা যখন একত্রিত হয় বেশিরভাগ সময় নিজেদের স্বামী সংসারের কুতসা নিয়েই আসর বসায়। অশান্তির আলাপ গীবত ছাড়া ভাল আলাপ এদের কমই হয়।অসহিষ্ণু বোনেরা এই সূযোগে উপদেশ দেয়”বেরিয়ে আস”! এমন শুনতে শুনতে একসময় বোকা মেয়ের সংসার ভেঙেই যায়। সন্তানের কথা কেউ ভাবে না।

অশান্তি প্রতিটা ঘরেই আছে এমনকি ঝগড়া মা ফাতিমা এবং আলী রা: এর ঘরেও হয়েছে।তারা তো সংসারের কাজ নিজ হাতে করতে হওয়ায় বা হালকা ঝগড়া হওয়ায় ডিভোর্স করে চলে যাননি।তবে হেঁটে যাবার জন্য এরা কেন কেবল বারীরার উদাহরণই টানে?অন্যান্য ডিভোর্স হওয়া সাহাবী উদাহরণ টানে?এতে কি উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়? দুষ্টু গরু চিনতে পারার ক্ষমতা সব মহিলাদের নেই। এজন্য স্মার্ট ফোন বা ঢালাও ভাবে সব বোনদের সাথে মেলা মেশা করার ব্যাপারে পরিবারে নিয়ম থাকা উচিৎ। স্বামীদেরও এ বিষয়ে নজরদারীর প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। স্ত্রী বুদ্ধিমতি হলে ভিন্ন কথা।

আরও পড়তে পারেন-

মহিলাদের স্বামীকে অভিভাবক না মানার যে অবস্থা তাকে স্বাধীনচেতা হিসেবে আখ্যা দেয়া ভুল। আদৌ এর সাথে উপার্জনের কোন সম্পর্ক নেই!এটা এক ধরনের বখাটেপনা যা পারিবারিক শৃংখলা নষ্টেরও প্রধান কারণ। স্ত্রীর মানষিক এ বিকৃতি বুঝে ব্যাবস্থা নিতে না পারলে ইসলামিক পরিবার গঠন করাই অসম্ভব হয়ে পড়বে।এরা মা বোন বান্ধবীকে অভিভাবক মানবে কিন্তু স্বামীকে নয়।

স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের পরিচালনা করার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন না করলে তার সন্তান,উম্মাহর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রসাতলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।পারিবারিক কাঠামো যে ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকে তা ভেঙে ফেলতে পারলে বাকী কাজ আপনা আপনি হয়।

আজকাল যেসব বোনেরা পর্দাহীন ভাবে জীবন যাপন করছেন তারাই উমরাহ করে এসেও একই ভাবে পর্দাহীন থেকেই উমরাহ ভ্লগ বানাচ্ছেন, আলেমা না হয়েও হজ্জ এর আহকামগুলো নিয়ে ভ্লগ ভিডিও বানাচ্ছেন বিষয়টা “অদ্ভুত উটের পিঠে ইসলাম” এর মতই মনে হয়। এই বাংলাদেশে নিজেকে আলেম দাবী করা মহতারামরা মহিলাদের মাহরাম ছাড়াই উমরাহ যেতে উস্কে দিচ্ছেন। ফিমেইল ট্রাভেলার্স গ্রুপের সাথে তারা চলেও যাচ্ছে হয়ত স্বামীর অনুমতিরও তোয়াক্কা করছে না।এরা ধীরে ধীরে  অদম্য হয়ে উঠেছে।

ব্যাক্তিজীবনে কে কি করছে তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না।কিন্তু এমন কাজগুলো সামাজিক মাধ্যমে এলে তা একটি ভুল বার্তা পৌঁছোয়। আরও দশ জন ভুল পথে পা বাড়ায়।যার দায়ভার কম বেশী সকলের উপরেই পড়বে।আলেম উলামাদের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করছি। উম্মাহর পুরুষেরা তাদের দায়িত্ব কোনটা এটাই বুঝতে পারছেনা, কিভাবে পালন করবে তাও বুঝতে পারছে না।

সব মিলিয়ে সময়টা খুব অস্থির।আমরা সবাই যে যার দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছি।নারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধীরে ধীরে বেপরোয়া হয়ে উঠছে।তারা ভীষনভাবে লাইনচ্যুত এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে এরাই আবার অনেকের আইডলও বটে।

এমন অবস্থা চলতে থাকলে তা মুসলিম অনুশাসন মেনে চলা পরিবারগুলোর জন্য কখনোই ভাল ফল বয়ে আনবে না।কথায় বলে, “নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না”! তাই হতে চলেছে। সেক্যুলারদের আগুন এখন মুসলিমদের ঘরে লেগে যাচ্ছে। আল্লাহ তা’লা আমাদের তার  হিফাজতে রাখুন।

লেখক: কন্সালটেন্ট, সনোলজিস্ট।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।