হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী বলেছেন, ফ্যাসিবাদ উৎখাতের লড়াইয়ে আলেম সমাজের ধারাবাহিক দীর্ঘ রক্তাদান ও আত্মত্যাগ রয়েছে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারে অবশ্যই তাঁদের হিস্যা থাকতে হবে।
বুধবার (৭ আগস্ট) এক বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, জাতির ঘাড়ে চেপে বসা দীর্ঘ ফ্যাসিবাদ উৎখাতের চূড়ান্ত লড়াইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গৌরবময় ভূমিকাকে আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। একই সাথে এই আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে উলামায়ে কেরাম, মাদ্রাসা ছাত্র, কর্মজীবি মানুষ, লেখক, সাংবাদিক, অনলাইন এক্টিভিস্টসহ দলমত নির্বিশেষে দেশের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ, নানাভাবে সহযোগিতা এবং উদীপ্ত সমর্থন মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। সুতরাং ফ্যাসিবাদিদের হাতে ধ্বসে পড়তে বসা দেশ গড়তে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে ফ্যাসিবাদ উৎখাতের লড়াইয়ে অংশ নেওয়া সকলপক্ষের প্রত্যাশা ও প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী ফ্যাসিবাদ উৎখাতের সংগ্রামে দেশের আলেম সমাজ ও মাদ্রাসা ছাত্রদের দীর্ঘ লড়াইয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের ৯২ ভাগ মানুষ অত্যন্ত ধর্মভীরু মুসলমান। ধর্মের উপর আঘাত বা অবমাননা এবং ধর্মীয় আদর্শ ও কালচারকে উৎখাত বা বাধা দেওয়ার চেষ্টা তারা কোনভাবেই মেনে নিতে পারেন না। এ পর্যায়ে দেশের আলেম সমাজ হেফাজতে ইসলাম সহ অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক দলের ব্যানারে শেখ হাসিনার সরকারের ফ্যাসিবাদি চরিত্র প্রকাশ পাওয়ার শুরু থেকেই তার জননিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ধর্মবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেও জোরালো প্রতিবাদ-সংগ্রাম চালিয় এসেছে।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের ছত্রছায়ায় ইসলামবিদ্বেষী নারীনীতি, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাদ দেওয়ার উদ্যোগ, দাড়ি-টুপি নিয়ে কটাক্ষ, শিক্ষা থেকে ধর্মকে সংকোচন বা উৎখাত উদ্যোগ, মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ চেষ্টাসহ নানা বিষয়ে দেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলসমূহ, হেফাজতে ইসলাম ও আলেম সমাজ লাগাতার আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিপক্ষে ব্যাপক জনমত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে আলেম-উলামা ও মাদ্রাসা ছাত্রদের উপর চালানো গণহত্যা, ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে আলেম ও মাদ্রাসা ছাত্রদের উপর হত্যাকাণ্ড, গণগ্রেফতার, হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন, মামলা, জেল-জুলুম, হয়রাণী সর্বজন বিদিত।এছাড়াও মসজিদের ইমাম-খতীব, ধর্মীয় শিক্ষাদানসহ ধর্মীয় কারণে তৃণমূল পর্যায়ে দেশের আলেম সমাজের জনসমপৃক্ততা অনেক গভীর ও ব্যাপকতর।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
এ পর্যায়ে হেফাজতের অন্যতম শীর্ষ নেতা মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী বলেন, ফ্যাসিবাদ উৎখাত আন্দোলনে দীর্ঘ সম্পৃক্ততা, ব্যাপক আত্মত্যাগের কারণে অন্তর্বর্তী সরকারে অবশ্যই উলামায়ে কেরামের হিস্যা থাকতে হবে। এছাড়াও বৈষম্যমুক্ত স্থিতিশীল নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্যও সরকারে আলেমদের প্রতিনিধিত্ব জরুরি। কারণ, ধর্মীয় কারণে দেশের সাধারণ মানুষের উপর উলামায়ে কেরামের প্রভাব ও সম্পৃক্ততা বিশাল। তাদেরকে উপেক্ষা করে বৈষম্যমুক্ত স্থিতিশীল দেশ গড়ার উদ্যোগ সহজ কাজ হবে না।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ