Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ বয়স্ক নেতারা দায়িত্ব থেকে কেন সরতে চান না?

বয়স্ক নেতারা দায়িত্ব থেকে কেন সরতে চান না?

ছবি- ইনক ডটকম।

কালের বিবর্তনে দেখা যায়, বিশ্বের অধিকাংশ বিখ্যাত নেতা বয়সের ভারে যেন নুয়ে পড়ছে। তবুও তারা দায়িত্ব ছেড়ে অবসরে যেতে রাজি নন। এই তালিকায় নতুন যুক্ত হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নাম।

আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৮১ বছর বয়সে ডেমোক্রেট প্রার্থী বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন। বার্ধক্যজনিত কারনে তিনি প্রায়শই খেই হারিয়ে ফেলছেন। অনেকে তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন। তবে মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট যেন কিছুতেই নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছেন না।

শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, বরং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা যায়। সেক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়িক পরিবারকে পরামর্শ দিয়ে থাকি। যাতে করে তারা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে সফলভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারেন।

এক্ষেত্রে আমরা কয়েকশ ব্যবসায়িক নেতার সাথে কাজ করেছি। এদের মধ্যে এমনও রয়েছে যারা কি-না পরিবারের প্রথম প্রজন্মের ব্যবসায়ী। তারা ব্যবসা করে বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। এক্ষেত্রে জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে জনসম্মুখে কোনোরকম বিতর্কের জন্ম না দিয়েই উত্তরাধিকার নির্বাচিত করা যেতে পারে। তবে এই কাজটি খুব একটা সহজ নয়। এক্ষেত্রে ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিকে দায়িত্ব ছাড়তে রাজি করানোই যেন সবচেয়ে কঠিন কাজ।

একজন নেতার পরিচয় নিজের কাজের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। মূলত দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ধীরে ধীরে তিনি এটিকে অর্জন করেন। এক্ষেত্রে জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তারা সিইও, ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিংবা প্রেসিডেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব লাভ করেন। যেখান থেকে তিনি কর্মী কিংবা মানুষের জীবনে বড় প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।

কিন্তু একইসাথে ঐ শীর্ষ পদে থাকলেও বয়সের সাথে সাথে তার কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। কেননা দিনশেষে বয়স আসলেই শুধু একটা সংখ্যা না। এর শারীরিক ও মানসিক বেশকিছু প্রভাব রয়েছে। তাই তিনি আর কতদিন সঠিকভাবে সেবা দিতে পারবেন, সেটি নিয়ে সন্দিহান থেকেই যায়।

আরও পড়তে পারেন-

এক্ষেত্রে ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট বলেছেন, “আমি যা ইচ্ছা তাই কিনতে পারি। কিন্তু আমি সময় কিনতে পারি না।”

এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটিও সম্পর্কযুক্ত। এটি ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক দুটিই হতে পারে। নেতিবাচক দিকটি হলো, আমরা এমন নেতাদেরও চিনি যারা কি-না দায়িত্ব ছেড়ে দিলেও কোনো না কোনোভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ জারি রাখার চেষ্টা করে। বিষয়টা অনেকটা এমন যে, ‘আমি আমার স্থান কখনোই ছাড়বো না।’ এমনকি তরুণ কেউ যদি তার থেকে ভালো করার সম্ভাবনা থাকে তবুও না।

ইতিহাসে এমন নজির বহু রয়েছে। যেমন, ৯০ বছর বয়সে এসেও শারীরিক ও মানসিক অবস্থার গুরুতর অবনমন সত্ত্বেও অনেকে পারিবারিক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে রাখে। এমনকি এমন একজন পারিবারিক ব্যবসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন যিনি তার পরিবারের উল্লেখযোগ্য ব্যবসা ও সম্পদ এমনভাবে রেখে গিয়েছিলেন, যা আদালতের আদেশ ছাড়া ১৮০ বছর পর্যন্ত কিছু করা যাবে না। বিষয়টা অনেকটা এমন যে, তিনি যেন কবর থেকেও সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছেন।

এমন সব প্রবণতা প্রায়শই অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক হয়। কেননা এতে পরবর্তী প্রজন্মের নেতারা নিজেদের নেতৃত্ব বিকাশের যথাযথ সুযোগ পায় না।

উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি যদি ৮০ কিংবা ৯০ বছর বয়সেও দায়িত্ব না ছাড়েন তবে এতে অন্য তরুণ সদস্যরা নিরুৎসাহিত হয়। এতে পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের সদস্যরা সাধারণত ব্যবসা থেকে এমনকি প্রায়শই নিজেকে পরিবার থেকে সরিয়ে নেয়। এতে ব্যবসা পরিবার থেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বেশ নেতিবাচক।

অন্যদিকে সফল নেতারা হয়তো পুরোপুরি অবসরে না গিয়ে নিজেদের কর্মক্ষম রাখতে পদ আগলে রাখেন। এক্ষেত্রে হয়তো সেখানে সে বছরের পর বছর সময় ব্যয় করেছেন। যা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাই এই যুক্তিতে তিনি সেটিকে ছাড়তে চান না।

যেমনটা বলেছেন প্রয়াত হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের একাডেমিক ক্লেটন ক্রিস্টেনসেন। নির্দিষ্ট কোনো চাকরির কথা উল্লেখ না করে তিনি বলেন, “কাজ করতে হবে।” তবে তবুও আমাদের অভিজ্ঞতায় সফল উত্তরাধিকারের কথা বিবেচনা করে নেতাদের উচিত দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া।

পদ ধরে রাখার বিপরীতে সফল নেতারা তাদের দায়িত্ব পরিবর্তন করে। এক্ষেত্রে তারা প্রতিষ্ঠানের প্রতি ভিন্নভাবে অবদান রাখতে পারে। নানা সমস্যা সমাধানে তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

একজন নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তির বয়সের সাথে সাথে ভাবতে হবে যে, তিনি কোন কাজে ভালো অবদান রাখতে পারবেন। যাতে করে তিনিও নিজের মেধাকে কাজে লাগাতে পারেন এবং অপরপক্ষও লাভবান হন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। তিনি হয়তো অন্য কোনো পদে থেকে ভালো কিছু দিতে পারবেন। তবে আপাতদৃষ্টিতে ওভাল অফিসের দায়িত্ব পালনে তাকে অনেকেই অনুপযুক্ত বলে মনে করছেন।

কয়েক ডজন বয়স্ক নেতাদের সাথে কাজ করে আমরা তাদের পরিস্থিতিও গভীর সহানুভূতি নিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে আপনি যেই কাজ করতে ভালোবাসেন তা ছেড়ে দেওয়া সহজ নয়। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছেও এখন পর্যন্ত এই সুযোগ রয়েছে।

সূত্র- ইনক ডটকম

অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।