Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন সার্থক জীবনের পথে প্রতিবন্ধকতা

সার্থক জীবনের পথে প্রতিবন্ধকতা

- প্রতিকী ছবি।

।। ডা. তানজিনা রহমান ।।

রমযান আমাদের ছেড়ে গেছে প্রায় ২ মাস হতে চললো। হজ্জের মাস প্রায় এসেই গেছে। আমাদের আমল বা আখলাকে কী কী পরিবর্তন আনতে পেরেছি, হিসাব নিয়েছি কি?

সালাফদের প্র্যাক্টিস ছিল রমযান চলে যাবার পরবর্তী ৬ মাস বিগত রমযানে যা আমল করেছে, তার ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে তা কবুল করে নেওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে দোয়া করতে থাকা। আর তার পরের ৬ মাস তাদের কেটে যেতো আসছে রমযানে যেন আরও ভাল আমল করতে পারে, আল্লাহ তাআলা যেন সেই তাওফীক দেন, তাদের সুস্থ অবস্থায় রমযানে পৌঁছে দেন- সেই দোয়ায়।

অর্থাৎ বছরের পুরোটা সময় তারা রবের সন্তষ্টি অর্জন কী করে করবেন, আর আল্লাহ তাআলা তা কবুল যেন করেন সেই ফিকিরেই  লেগে থাকতেন। তাদের মন মগজ চিন্তা চেতনা জুড়ে কেবলই ছিল জান্নাতের আকাক্সক্ষা, সর্বক্ষণ তারা থাকত নিজের গুনাহের জন্য ভীত।

দৈনন্দিন জীবনে আমরাও হয়তো যিকির করছি, নফল সালাত, সিয়াম রাখছি। ভাবছি আমলের কমতি কোথায়! কিন্তু এইটা লক্ষ করছি না, আমাদের ইবাদতগুলোয় প্রাণ নেই। আমাদের জিহ্বায় যিকির, কিন্তু মন মগজ দুনিয়াবি চিন্তায় আচ্ছন্ন। হাসাদ নামক রোগে অন্তর আক্রান্ত। জান্নাত পাবার, আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্যে যাবার সেই আকুলতা প্রকৃতপক্ষে আমাদের নেই, যা তাদের মাঝে ছিল।

দুনিয়াবী কাজের ভেতরেই খুঁটে খুঁটে আখিরাতকে সহজ করবার উপায় কি আমরা খুঁজি? মুসলিমের একটিই লক্ষ্য হবার কথা ছিল জান্নাতে যাওয়া। আমরা এও জানি আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ছাড়া নিজের কোন নেক আমলই জান্নাতে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট হয় না।

আমাদের অন্তর কঠিন। আমাদের যবান তিক্ত। আমরা একে অপরকে ঠকিয়ে চলেছি, মিথ্যা বলে চলেছি। কাউকেই তার প্রাপ্য সম্মান দিচ্ছি না। আমাদের সন্তানরা বেড়ে উঠছে হারাম মিশ্রিত উপার্জনে। আল্লাহ তাআলার ভয় আমাদের অন্তরে নেই।

এভাবে দিনের পর দিন আল্লাহ এবং তার রাসূলের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে জীবন পরিচালনা করে কেবল প্রাণহীন যিকির আযকারে আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ হাসিল করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

মহিলাদের জন্য জান্নাত আল্লাহ তাআলা সহজ করেছেন। আমাদের উপর কোন কঠিন দায়িত্বের ভার চাপাননি। অথচ সেই সহজ রাস্তাকেও আমরা কঠিন করে ফেলছি নিজেদের অবাধ্যতা দিয়ে।

আমি ঘুরে ফিরে একটি কথা বার বার মনে করাই; স্বামীর অনুগত হওয়া এমন একটি আমল যা মহিলাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রচণ্ড কঠিন। হয়তো এই একটি কারণেই অনেক মহিলা জান্নাতে যেতে যেতেও জাহান্নামে ঢুকে পড়বেন। মাআযাল্লাহ।

যে সন্তান দেখে তার মা তার বাবাকে সম্মান করে না, সে সন্তান সম্মান করতে শেখে না, সেই পরহেযগার মায়ের সালাত সিয়াম কোন কিছুই সন্তানের উপর প্রভাব ফেলে না। এভাবে পরবর্তী প্রজন্ম ধ্বংস হয়।

বাইরের নানা ঝামেলা, মানুষের তীর্যক মন্তব্য, অপমান সহ্য করে আসা মানুষটি যদি ঘরেও স্ত্রী সন্তান দ্বারা অপমানিত হয়; তার কাছে কতটুকু উত্তম আচরণইবা আশা করা যায়? বোনদের কাছ থেকে একটু বিচক্ষণতা আশা করা কি খুব বেশি কিছু, তাও যদি হয় তাদের নিজেদের স্বার্থেই?

আজকাল কিছু দুষ্টু মহিলার মুখে শুনি “আগে আল্লাহর রাসূলের মতো হয়ে দেখাও পরে খাদিজা (রাযি.)এর মতো বউ খোঁজ”-এর অর্থ দাঁড়ায় তুমি ভাল হলে আমি ভাল হবো। তুমি খারাপ হলে আমি হবো দ্বিগুণ খারাপ।

আরও পড়তে পারেন-

এই আচরণে আছে হিংসুটে মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। খাদিজা (রাযি.) সম্মান পেয়েছেন কারণ তিনি সম্মান দিয়েছেন। নিজেকে ভাল হতে হলে কেন আগে অন্যের উপর ভাল হওয়ার শর্তারোপ করতে হবে? অথচ এরাই আবার সুযোগ বুঝে সম্পর্ক, অবস্থান পাল্টে বলে ‘নিজে ভাল তো দুনিয়া ভাল’।

ধূর্ত এবং চতুর মানুষেরা আল্লাহ তাআলার ক্ষমা, রহমত এবং সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়। আল্লাহ তাআলা এমন দ্বিমুখী হওয়ার হাত থেকে মু’মিনা নারীদের হিফাজত করুন।

কারও স্বামী যদি খারাপ হয় তার দায়ভার স্ত্রীর না। আল্লাহ তাআলা সব দেখেন। খারাপ আচরণকারী তার ফল ভোগ করবে। সবরকারী আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ পাবে। মেনে চলা, মানিয়ে নেওয়া, সবর করার ভেতরে ব্যর্থতা নেই, বরং সফলতা লুকিয়ে আছে। ফিতনা সৃষ্টিকারীকে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না।  অবস্থা সঙ্গীন হলে, কোনভাবেই চেষ্টা ফলপ্রসূ না হলে সেই ব্যবস্থাও আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন, সেটি ভিন্ন আলোচনা।

দুনিয়াতে কোন কিছুই পারফেক্ট না। এটাই নিয়ম। দুনিয়াকে জান্নাতের মর্যাদা দিতে চায় অবিশ্বাসী মহিলারা। আখিরাত ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শয়তান ছাড়া কার কাজ হতে পারে?

দুনিয়ার কোন কষ্ট বৃথা যায় না। দুটো কথার খোঁচা, সামান্য কায়িক শ্রম সহ্য করবার মতো সবর আমাদের নেই। আমরা কেমন করে উপলব্ধি করব ইসলামের জন্য বিলাল (রাযি.)এর উপর কাফিরদের করা অত্যাচারের ভয়াবহতা? সুমাইয়ার শরীরে বিঁধিয়ে দেওয়া বর্ষার আঘাতের ব্যাথা? যাতা পিষতে পিষতে হাতে কড়া আর পানি আনতে আনতে ফাতিমা (রাযি.) ঘাড়ে দাগ পড়ে যাবার মতো শ্রমের মূল্য?

গাজার ভাই বোনদের দিনের পর দিন খোলা আকাশের নিচে দিন যাপন, একটু রুটি পর্যন্ত সন্তানের মুখে দিতে না পারার কষ্ট?

লেখাটি শুরু করেছিলাম আমল ইবাদতের কথা দিয়ে। এতক্ষণ যা যা বললাম সবই ইবাদতের সাথেই সম্পৃক্ত।

রবের সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখতে হলে নিজের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে সচেতন হতে হয়। বিবাহিত মহিলাদের প্রধান দায়িত্ব স্বামীর হক সম্পর্কে সচেতন থাকা। এর সাথে সাথে ফরয দায়িত্ব, যিকির, কুরআনের আয়াতের উপর তাদাব্বুর করা। খুব কি কঠিন? অথচ বোনেরা আমার মৃত ভাইয়ের মাংসের স্বাদ নিতেই মগ্ন।

যে দুনিয়া মু’মিনের জন্য কারাগারের মতো সেই দুনিয়াকে প্রাসাদসম বানানোর প্রতিযোগিতায় আমরা লিপ্ত। আমাদের দোয়াসমূহ কবুল হয় না আমাদেরই গুনাহের কারণে।  “হে নারীগণ! তোমরা দান-সদকা করো। বেশি বেশি করে আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। কেননা, আমি জাহান্নামে তোমাদের অধিকহারে দেখেছি। এ কথা শোনার পর উপস্থিত মহিলাদের মধ্য থেকে একজন (যার নাম ছিল জাযলা) প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কেন এ অবস্থা? কেন জাহান্নামে আমরা বেশি সংখ্যায় যাবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তোমরা স্বামীর প্রতি বেশি অকৃতজ্ঞ ও অভিশাপ দাও বেশি”। (সহীহ মুসলিম)।

আমাদের সমাজের নারীদের বাস্তব চিত্র এমনই, যা আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু বছর আগেই দেখিয়ে গেছেন। বহু নারী স্বামীর প্রতি চরম অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, হয়তো সে যুগেও করতো।

আমাদের লক্ষ্য জান্নাত। অথচ সালাত, সিয়াম, পর্দা সব ঠিক থাকার পরও কোন কাজ আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য পূরণ হবার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, জানার পরও কি আমরা সাবধান হবো না?

লেখক: কন্সালটেন্ট, সনোলজিস্ট।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।