।। নূর হোসাইন সবুজ ।।
এই পৃথিবীর ধনি-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, প্রত্যেক নর-নারীই কোনো না কোনোভাবে শ্রমিক। শ্রমিক নিজের ও পরিবারের যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন। প্রত্যেক রাষ্ট্র উন্নয়নের পিছনেও থাকে শ্রমিকের অগ্রণী ভূমিকা।
শীত, গরম, বৃষ্টি কিংবা যেকোনো প্রতিকূল আবহাওয়াই ম্লান হয়ে যায় শ্রমিকের কাছে। কিন্তু যুগ যুগ ধরে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত। অধিকার চাইতে গিয়ে প্রায়ই মালিকপক্ষের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হন তারা। অথচ শ্রমিকের হাড়ভাঙ্গা খাটুনিই মালিকপক্ষের খাদ্য, বস্তু ও বাসস্থানের ব্যবস্থা হয়।
এই দিনমজুর শ্রমিকরের অধিকার দিয়েছে একমাত্র ইসলাম। পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম, অন্য কোনো মানব রচিত মতবাদ বা আদর্শ ইসলামের মতো শ্রমিকদের অধিকার দিতে পারেনি। বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমরা তোমাদের অধীনস্থ লোকদের সাথে খারাপ আচরণ করো না কেননা তোমাদের অধীনস্থ ব্যক্তিরা তোমাদের ভাই। তুমি যা খাবে, তাকে-ও তাই খেতে দাও। তুমি যা পরিধান করবে, তাকে তাই পরিধান করতে দাও।” এ-থেকে বুঝা যায় একমাত্র ইসলামই শ্রমিকের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে।
হযরত আবুবকর (রাযি.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, “ক্ষমতার বলে অধীনস্থ চাকর-চাকরানী বা দাস-দাসীর প্রতি মন্দ আচরণকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (ইবনে মাজাহ)।
‘শ্রমিকের পারিশ্রমিক ও ঋণ পরিশোধ নিয়ে ধনী ব্যক্তিদের টালবাহানা করা জুলুম।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
শ্রমিকের বেতন-ভাতার ব্যাপারে বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, “শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তাদের প্রাপ্য মজুরি পরিশোধ করো।” শ্রমিক অবসর নেয়ার পর তার বাকি জীবন চলার জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা থাকা প্রয়োজন। এ ব্যাপারেও ইসলাম নীরব নয়। হযরত ওমর (রাযি.) বলেছেন, “যৌবনকালে যে ব্যক্তি শ্রম দিয়ে রাষ্ট্র ও জনগণের খেদমত করেছেন বৃদ্ধকালে সরকার তার হাতে ভিক্ষার ঝুলি তুলে দিতে পারে না।
আরও পড়তে পারেন-
- সাদকায়ে ফিতরের মাসাইল
- রমজানে মুমিনের প্রতিদিনের আমল
- মাহে রমযানের সিয়াম সাধনা ও তার আহকাম
- রমযান মু’মিনের জন্য কী প্রতিফল বয়ে আনে?
- ইসলামে শাসক ও শাসিতের পারস্পরিক হক
কিন্তু আজ দুঃখের সাথে বলতে হয় প্রতিটি সেক্টরেই আজ শ্রমিকরা অবহেলিত, বঞ্চিত। সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে পাওনা চাইতে গিয়ে প্রায়ই লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে কোন না কোনোভাবে। বছর শেষে বেতন ও বোনাস দিতে টালবাহানা অথচ একজন সাধারণ শ্রমিক মুখ বুঝে শত কষ্ট সহ্য করে বছর শেষে বোনাস পাওয়ার আসায়। অধিকার চাইতে রাস্তায় নেমে এসে গুলির মুখোমুখি হতে হয় তাদের। এইতো কিছুদিন পূর্বে বাঁশখালীতে অধিকার চাইতে এসে সাতজন শ্রমিক মারা যায়, আহত হয় অনেকেই। কিন্তু এই সমাজ, এই রাষ্ট্রে এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠ বিচার কখনো কি হবে?
রিক্সা চালক, ভ্যান চালক ও লেবার শ্রেণির শ্রমিকদেরতো এখন প্রায় কেউ নেই বললেই চলে। টানা লকডাউনে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে মাঠে নামার উপক্রম। অথচ রাষ্ট্রের উচিৎ ছিলো লকডাউন কার্যকর করার পূর্বে এই অসহায় শ্রমিকদের খাদ্যের নিশ্চয়তা দেয়া, ত্রাণের ব্যবস্থা করা।
পরিশেষে রাষ্ট্র’সহ সকল বিত্তশালীদের আহবান করবো আসন্ন ঈদে অধীনস্থ শ্রমিকদের যথাযথ পাওনা বুঝিয়ে দিন। কারণ শ্রমিক বাঁচলে বাঁচবে দেশ। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে মানবিক হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন
লেখকঃ কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ