Home ফিকহ ও মাসায়েল প্রসঙ্গঃ ট্রান্সজেন্ডার ও ট্রান্সজেন্ডারবাদ (২)

প্রসঙ্গঃ ট্রান্সজেন্ডার ও ট্রান্সজেন্ডারবাদ (২)

।। আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন ।।

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

ট্রান্সজেন্ডার বলতে বুঝানো হয় যাদের Gender Identity বা মানসিক লিঙ্গবোধ জন্মগত লিঙ্গ চিহ্ন থেকে ভিন্ন মনে হয়। তারা যে শরীর নিয়ে জন্মেছে তাদের ধারণা এই শরীর তাদের নয়, তারা বরং ভুল শরীরে আটকে পড়েছে। তাই তারা তাদের এই শরীর মেনে নিতে পারছে না। অর্থাৎ- একজন সুস্থ সবল পুরুষ হয়েও তার মনে হয় সে একজন নারী বা একজন গর্ভধারণে সক্ষম নারী হয়েও তার মনে হয় সে একজন পুরুষ। অস্ত্রোপচার বা হরমোন থেরাপির মাধ্যমে নিজের জন্মগত লিঙ্গকে মনস্তাত্বিক লিঙ্গে রুপান্তরিত করে তারা। আবার অনেকে শুধু বাহ্যিক বেশভূষা গ্রহণ করেই ভেতরগত মানসিক লিঙ্গেও প্রকাশ ঘটায় এবং নিজেকে সেই লিঙ্গে পরিচয় দিতে সাচ্ছন্দবোধ করে। এই শ্রেণীর মানুষকে পরিভাষায় (Transgender) ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত লিঙ্গ বলা হয়। একরকম উদ্ভট মতোবাদকে (Transgerderism) বা ট্রান্সজেন্ডারবাদ বলা হয়। আর যখন তাদের এই মনে করাটা অস্বস্তিতে পৌঁছায় তখন তাকে (Genser Dusphoria/ Genser Identity Dusphoria ) বা লিঙ্গ ডিসফোরিয়া বলে- এমনটিই বলা হয়েছে আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (APA) এর বক্তব্যে-

The term “transgender” refers to a person whose sex assigned at birth (i.e. the sex assigned at birth, usually based on external genitalia) does not align their gender identity (i.e., one’s psychological sense of their gender). Some people who are transgender will experience “gender dysphoria,” which refers to psychological distress that results from an incongruence between one’s sex assigned at birth and one’s gender identity. Though gender dysphoria often begins in childhood, some people may not experience it until after puberty or much later. (Psychiatry.Org- Wgat Is Genser Dusphoria?)

ট্রান্সজেন্ডার বা ‘রূপান্তরকামী’ কোনো শব্দ বা পরিভাষাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি রূপ নিয়েছে একটি মতোবাদে। যা অতি দ্রুত গতিতেই স্থান করে নিয়েছে পশ্চিমা বিশ^ জুড়ে। যাকে বলা হয় ‘ট্রান্সজেন্ডারবাদ’ বা রূপান্তরকামিতো। আবার এই মতোবাদকে লিঙ্গ পরিচয় মতোবাদও বলা হয়ে থাকে। তাদের ধারণা একজন পুরুষের যদি মনে হয় সে একজন নারী তাহলে সে একজন নারী, অন্যদেরকেও তাকে একজন নারী হিসেবে মেনে নিতে হবে। তাকে নারী হিসাবেই দেখতে হবে আইন বা সমাজের চোখে। যদিও সে হোক কয়েক বাচ্চার জন্মদাতা বা কয়েকজন রমণীর স্বামী। আবার কোনো নারী যদি মনে করে সে একজন পুরুষ তাহলে সকলকে তাকে একজন পুরুষ হিসেবেই দেখতে হবে। চাই হোক সে কয়েক বাচ্চার গর্ভধারিণী মা, অথবা হোক কোনো পুরুষের পত্নী।

এই মতোবাদের দাবি, যদি কোনো বালকের মনে হয় সে একজন বালিকা, তাহলে সে একজন বালিকা। তার ‘অধিকার’ আছে তার এই ‘মনে হওয়ার’ ভিত্তিতে নিজের শরীরকে বদলে ফেলার। হরমোন ট্রিটমেন্ট বা শরীরে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে শরীরের বিকৃতি ঘটিয়ে তার অধিকার আদায় করতে পারবে। আবার সে বালক তার এই বিদঘুটে অধিকার চাওয়া মাত্র তাকে তার অধিকার হতে তুলে দিতে হবে! তার ‘মনে হওয়ার’ চিকিৎসা করা যাবে না। এই মতোবাদ মানুষকে শিখাচ্ছে, জন্মগত দেহ মূল পরিচয় নয়। দেহ যাই হোক ‘মন’ই আসল পরিচয়। ‘মনে করাই’ মূল লিঙ্গ। তার এই ‘মনে করা’কেই মেনে নিতে হবে যে কোনো সভ্য সমাজকে। পক্ষে বলতে হবে যে কোনো আইনের আদালতকেও। সে তার ইচ্ছা মতো পোষাক পরবে, মনের মতো সাজবে, ওষুধ বা অপারেশনের মাধ্যমে যেভাবে খুশি বদলে দিবে তার শরীরকে। তার এই বিকৃত মানসিকতা ও শরীর নিয়ে মর্যাদা ও গর্বের সাথে ঘুরে বেড়াবে সভ্য সমাজেÑএসব তার অধিকার। তারা মানুষকে শেখাচ্ছে ‘সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী’র বুলি আওড়িয়ে অধিকার আদায়ের সবক। এই মনগড়া ও বিকৃত ‘অধিকার আদায়’ শিখতে হবে পুুরো সমাজকে। মগজ ধোলাই করতে হবে কোমলমতি শিশুদেরও। এই আলোচনা তুলতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এবং সন্নিবেশ ঘটাতে হবে এই বিকৃত আলোচনাকে পাঠ্যপুস্তকেও। হচ্ছেও তাই।

এই মতোবাদই শেখানো হচ্ছে পশ্চিমের স্কুলগুলোতে। প্রবল আগ্রহের সাথে গ্রহণ করছে অসাধু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো। মধ্যপন্থী থেকে শুরু করে বামপন্থী, রাজনৈতিক দল থেকে নিয়ে সামাজিক প্রতিষ্ঠান- সবাই এই মতোবাদ প্রচার করে চলছে উগ্রভাবে। নগ্ন সমর্থন করে যাচ্ছে হলুদ মিডিয়াগুলো। আমেরিকান রাষ্ট্রপ্রধানের এক্সিকিউটিভ নির্দেশ, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় আইন থেকে শুরু করে কূটনৈতিক পলিসিও ঠিক হচ্ছে নতুন এই মতোবাদকে সামনে রেখে। এর ভিত্তিতে প্রশ্ন উঠছে নাগরিক ও মানবাধিকারের। বিশ^জুড়ে মানবাধিকারের নামে এই বিকৃত মতোবাদের ঝুলি নিয়ে বেড়াচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব ও জাতিসংঘের মতো ফেরিওয়ালারা। অন্যদিকে বিকৃত যৌনাচারী ও প্রবৃত্তিপুজারী ধনকুবেররা বিলিয়ে বেড়াচ্ছে বিপুল অর্থ। ফলে বাংলাদেশের মতো স্বল্প আয়ের দেশেও প্রশ্ন উঠছে মানবাধিকারের নামে। ঢুকে পড়ছে পাঠ্যপুস্তকে ‘শরিফার গল্প’-র শিরোনামে। আইনী লড়াই হচ্ছে পাকিস্তানের আদালতেও।

এই মতোবাবেদের বাস্তবতা এতেঠই বিদঘুটে ও বিচিত্র যে, তাদের বক্তব্য শুনে যে কোনো সভ্য সমাজে বেড়ে ওঠা যে কারোই বিশ^াস করতে কষ্ট হবে যে, আদৌও এটা কোনো মতোবাদ হতে পারে কি না। অনেকেই হয়তো মনে করবেন হয়তো কোনো কারণে মতোবাদটির উপস্থানের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন করা হচ্ছে। কেউ হয়তো মনে করবেÑএটি আন্তলিঙ্গ বা হিজাড়া সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে কোনো আন্দোলন, হয়তো এটা মানবাধিকারের কোনো বিষয়, হয়তো লিঙ্গ পরিবর্তন করতে চাওয়া লোকগুলো শারীরিক কোনো সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু না, বাস্তবেই মতোবাদটির চিত্র এতেঠই বিদঘুটে। বাস্তবেই শারীরিকভাবে কোনো সুস্থ-সবল একজন পুরুষ নিজের শরীর কাটিকুটি করে সাজছে নারী, আবার কোনো সুস্থ নারী রূপ নিতে চাচ্ছে কোনো পুরুষের। কোথাও আবার বিয়ে করা হচ্ছে ছয় সন্তানের জনককে। পুরুষ হিসাবে কেরিয়ার শুরু করা জলজ্যান্ত আপাদমস্তক একটা পুরুষ শেষ বয়সে এসে দাবি করছে নিজেকে নারী হিসেবে। আবার কোথাও এমন পুরুষ আত্মপ্রকাশ করছে নারী কর্মকর্তা হিসেবে। কোথাও শিরোনাম কারা হচ্ছে ‘‘ নারী থেকে পুরুষ হয়েছেন তিনি, এখন জটিলতা বংলাদেশ রেলওয়ের চাকরিতে’’। আবার কোথাও নারী-পুরুষে তালগোল পাকিয়ে শিরোনাম করছে ‘‘ভারতে প্রথমবার সন্তানের জন্ম দিলেন ট্রান্সজেন্ডার দম্পতি’’।  কোনো পুরুষ আবার নিজেকে মেলে ধরছেন সংবাদ পাঠিকা হিসাবে। বলতে গেলে এর ফিরিস্তি আরো অনেক দীর্ঘ হবে। যা এখানে বলে শেষ করা যাবে না। মোটকথা ট্রান্সজেন্ডারবাদীদের দাবি হলো মানুষের মনই আসল পরিচয়। যে কোনো সময় মানুষ নিজেকে সাজাতে পারে তার মনের আদলে। পরিচয় দিতে পারে নিজেকে নারী হয়েও পুরুষ হিসেবে, বা পুরুষ হয়েও নারী হিসাবে। চাই অস্ত্রোপচার করা হোক বা না হোক। কোউ কখনো তাকে বিপরীত লিঙ্গের বলে দাবি করলে বাকিদেরকদেও তার এই দাবিকে সম্মান জানাতে হবে। সামাজিক ও আইনী ভাবেও মেনে নিতে হবে তার এই দাবি।

ট্রান্সজেন্ডারবাদের উৎপত্তি ও ইতিহাস

এলজিবিটিকিউআমব্রেলার ছত্রাক

ট্রন্সজেন্ডারবাদ উৎপত্তি সম্পর্কে জনতে হলে আমাদের প্রথমেই একটি সম্প্রদায় সম্পর্কে জানতে হবে। আর সেটি হচ্ছে ‘এলজিবিটিকিউ’। আমরা অনেকেই হয়তো জানি এই সম্প্রদায়ের কথা। তাদের রংধনু বিশিষ্ট পতাকাও হয়তো অনেকের চোখে পড়েছে। ইংরেজি কয়েকটা বর্ণমালা দিয়ে সম্প্রদায়টির নামের সংক্ষিপ্ত রূপ এই এলজিটিবিকিউ। LGBTQ এর পূর্ণরূপ হলো: Lesbian (নারীর প্রতি নারী আসক্ত), Gay (পুরুষের প্রতি পুরুষ আসক্ত), Bisexual (নারী-পুরুষ উভয়ের প্রতি আসক্ত), Transgender (রূপান্তরকামী) এবং Queer।

পৃথিবীর ইতিহাসে যে সকল অপরাধীরা নিজেদের অপরাধ ও অপকর্ম নিয়ে গর্ব করতো, সমাজে প্রচার করে বেড়াতো নিজেদের বিকৃত ও বিদঘুটে সব চিন্তাধারা, আধুনিক পৃথিবীতে তাদের অন্যতম দোসর হলো ‘এলজিবিটিকিউ’ সম্প্রদায়। কালের আবর্তে, ফিতনার সয়লাবে, প্রবৃত্তির তাড়নায় মানুষ কত অপরাধেই না জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এর সাথে যদি যোগ হয় নীতি-নৈতিকতার অভাব, দ্বীন-ধর্ম, সুশিক্ষা, মনুষ্যত্ব ছেড়ে লাগামহীন ভাবে পশুত্বের চর্চা তাহলে যা হবার তাই হবে। জন্ম লাভ করবে এলজিবিটিকিউর মতো বিকৃত যৌনাচারী সম্প্রদায়। দেখা যাক কীভাবে জড়ো হলো এমন বিকৃত যৌনাচারীর দল একই পতাকার নিচে।

সংক্ষেপে বলতে গেলে, পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই দুয়েকটা বিচ্ছিন্ন সম্প্রদায় ছাড়া পুরো মানব সমাজ সমকামিতাকে জঘন্য অপরাধ হিসাবে দেখতো। এখনও এগুলোকে সভ্য সমাজ বড় ধরণের অপরাধ হিসেবেই দেখা হয়। কিন্তু সময়ে-সময়ে কিছু বিকৃত চিন্তা-চেতনার অধিকারী, চরিত্রহীন ও গুটি কয়েক পাপীষ্ঠের দল নিজেদের অশ্লিলতাকে স্বাভাবিকীকরণের জন্য তাদের অপকর্মগুলোর সাথে একেক সময় একেক নাম জুড়ে দিতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ঊনবিংশ শতাব্দীর Karl Heinrich Ulrichs নামক একজন জার্মানি উকিল ও লেখক। যিনি ছিলেন একজন সমকামী। তিনি মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিলেন একটি শব্দের সাথে। ১৮৬২ সালের প্রথম দিকে কার্ল হেনরিক যেসব পুরুষ অন্য পুরুষের প্রতি আকর্ষণ বোধ করতো তাদেরকে urning আর্নিং হিসাবে অবহিত করেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমরা আর্নিংরা মানব লিঙ্গের এক বিশেষ শ্রেণি গঠন করি। আমরা নিজেরাই নিজেদের জন্য একটা লিঙ্গ পরিচয় বহন করি। আর সেটা হলো থার্ড সেক্স বা তৃতীয় লিঙ্গ’’।

এলজিবিটিকিউ এর শব্দগুলোও এমনই বিকৃত যৌনাচারের একেকটি ধরণের নাম। যেমন, লেসবিয়ান। শব্দটি এসেছে (Lesbos) ‘লেসবোস’ নামক এক দ্বীপের নাম থেকে, (Sappho) ‘সাফো’  নামে একজন প্রাচীন গ্রিক নারী ছিলো, যিনি লেসবোস দ্বীপে বসবাস করতো। সে সমলিঙ্গ প্রেম নিয়ে কবিতা লিখতো। শব্দটির সর্বপ্রথম ব্যবহার শুরু হয় ১৭ শতকের দিকে। পরে ১৮৯০ সালের দিকে মেডিকেল ডিকশনারী, মনোবিজ্ঞান ও যৌন বিষয়ক কিছু বইয়ে এই শব্দের অন্তর্ভূক্তিকরণের মাধ্যমে এর আধুনিক ব্যবহার শুরু হয়। এখন নারী সমকামীদেরকে লেসবিয়ান বলা হয়।

আর কোনো সমকামী তথা পুরুষ যদি পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয় তাকে ‘গে’ শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়। এর ব্যবহার শুরু হয় ১৯৬০ সালের শেষের দিকে। ১৯৮০ সালে প্রাবন্ধিক এডমান্ড হোয়াইট বলেন: ‘গে’ শব্দটি একজন পুরুষ অন্য পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট বোঝাতে ব্যবহার হয়। এটি প্রকাশের দিক থেকে অন্য যে কোনো শব্দকে ছাড়িয়ে গেছে।

বাইসেক্সুয়াল বলা হয় ঐ সব পুরুষদেরকে যারা পুরুষ-নারী উভয়ের প্রতিই আকৃষ্ট হয়। অথবা ঐ-সব নারী, যারা নারী-পুরুষ উভয়ের প্রতিই আকৃষ্ট হয়। এর ব্যবহার শুরু হয় ১৮৬৯ সালে। অস্ট্রো-হাংগেরিয়ান একজন সাংবাদিক ক্যারোলি মারিয়া কার্টবেনি দুটি শব্দের সাথে পরিচয় করান: (heterosexual) হেট্রোসেক্সুয়াল বা বিষমকামী ও (bisexual) বাইসেক্সুয়াল বা উভয়কামী। যেসব পুরুষ বিপরীত লিঙ্গের কারও প্রতি আকর্ষিত হয় তাদেরকে হেট্রোসেক্সুয়াল আর যারা নারী-পুরুষ উভয়ের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন তাদেরকে বাইসেক্সুয়াল বলে আখ্যা দেওয়া হয়।

আরও পড়তে পারেন- ট্রান্সজেন্ডারবাদ ও ইসলাম

ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামী শব্দের সাথে মানব সমাজ পৃথীবির সূচনালগ্ন থেকে পরিচিত ছিল না। শব্দটি মানুষের সামনে আসে ১৯৬০ সালের দিকে। এর ব্যবহার হয় শুরু হয় ১৯৬৫ সালের দিকে মনোবিজ্ঞান বিষয়ক বইয়ে স্থান পাওয়ার মাধ্যমে। এবং ভর্জিনিয়া প্রিন্সের মতো ট্রান্সফেনিন এক্টিভিস্টদের দ্বারা এটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। (https://www.nationalgeographic.com/history/article/from-lgbt-to-lgbtqia-the-evolving-recognition-of-identity)।

আর কুইয়ার অর্থ অদ্ভূত। শব্দটি সমকামীদেরকে বিদ্রুপাত্মক ব্যবহার করা হতো। তবে ১৯৯০ সালে সমকামী অধিকার নিয়ে চলমান আন্দোলনে শব্দটির ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। পরে ১৯৮০ দশকে ‘কুইয়ার নেশন’ নামে যৌন এবং লিঙ্গগতভাবে সংখ্যালঘু ব্যক্তিদের অধিকারের পক্ষে কাজ করা সংস্থাটি ‘কুইয়ার’ শব্দটিকে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সমস্ত শাখাকে বোঝাতে আরম্ভ হয়েছিল। শূন্য দশক থেকে ‘কুইয়ার’ শব্দটিকে যৌন বৈচিত্রকে বোঝাতে ব্যবহৃত হতে আরম্ভ হয়।

লেসবিয়ান, গে ও বাইসেক্সুয়াল এই তিনটিকে ১৯৮০ সালের পূর্ব পর্যন্ত ‘গে কমিউনিটি’ নামে পরিচিত ছিল। পরে নামটি সম্প্রদায়ের অনেকের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব করছে না বলে ১৯৮০ এর দশকের শেষ ভাগে এর নাম বদলে সংক্ষেপে রাখা হয় ‘এলজিবি’ । এরপর ১৯৯০ দশকের দিকে আরেকটি লেটার (T) যোগ হয়ে ‘এলজিবিটি’ হয়। পরে ১৯৯৬ সালে ‘কিউ’ শব্দ নথিভুক্ত হয়। এরপর এসে এর পূর্ণ নাম দাঁড়ায়েছে- ‘এলজিবিটিউ’। বর্তমান শব্দটির শেষে যোগ চিহ্ন যুক্ত করে এভাবে লেখা হয়- LGBTQ+। যা একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এদের নির্র্দিষ্ট পতাকাও আছে। আছে এদের উৎসবের দিনও। জুন মাসের তাদের সেই পদযাত্রাকে তারা ‘প্রাইড প্যারেড’ বলে থাকে। (উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত)।

মোটকথা অন্যান্য সমকামীদের মতো ট্রান্সজেন্ডারদেরও আছে একটি কালো ইতিহাস। আছে এক বিকৃত ও বিদঘুটে বাস্তবতা। বিষয়টি তাদের কার্যক্রম ও কর্মকান্ডগুলো ভালোভাবে প্রত্যক্ষ করলে আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠবে।

ট্রান্সজেন্ডারবাদীদের দাবি

ট্রান্সজেন্ডারবাদের দাবি হলো, একটা শিশু জন্ম লাভ করার পরে আভ্যন্তরীণ প্রজনন যোগ্যতা বা বাহ্যিক অঙ্গ দেখে ছেলে বা মেয়ে হিসেবে যেই লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয়- তার পুরোটাই অনুমানের ভিত্তিতে। শিশুটি বড় হওয়ার পর তার জন্মগত নির্ধারিত লিঙ্গ-পরিচয়ের বদলে অন্য পরিচয়ও বেছে নিতে পারবে। যে ছেলে হিসেবে জন্মলাভ করেছে সে একসময় চাইলে নিজেকে মেয়ে বলে দাবি করতে পারে। আর যে সৃষ্টিগত মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েছে সে একসময় নিজেকে ছেলে বলে দাবি করতে পারবে। শরীর যেমনই হোক না কেন তাকে তার দাবি অনুযায়ীই মেনে নিতে হবে। কারণ কিছু মানুষ নাকি ‘ভুল দেহে জন্ম নেয়’। তারা মনে করে যে, একজন নারী নারী হিসেবে জন্ম নেয় না, বরং সমাজ তাকে নারী হিসাবে গড়ে তোলে।

সেক্স (লিঙ্গ)-কে জেন্ডার নামক শব্দে প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে এলজিবিটিকিউ বা ট্রান্সজেন্ডার মতোদর্শ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পথ সুগম হয়। তারা নিজের অবস্থানকে ব্যাখ্যা করার জন্য চারটি ধারণাকে ব্যবহার করে থাকে। যথা-

১)       বায়োলজিকাল সেক্স (Biological Sex) বা জন্মগত লিঙ্গ।
২)       সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন (Sexual Orientation) বা প্রণয়বোধ ও যৌন আকর্ষণ।
৩)      জেন্ডার।
৪)       জেন্ডার আইডেন্টিটি (Gender Identity) মনস্তাত্ত্বিক লিঙ্গবোধ/‘মনের লিঙ্গ’।

ট্রান্সজেন্ডারবাদ উপরোক্ত চারটি জিনিসকে আলাদা চোখে দেখে থাকে। সংক্ষেপে তাদের বক্তব্য তুলে ধরা হলো। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বায়োলজিকাল সেক্স দেহের বর্ণনা মাত্র। মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট হলো কিছু মানুষের পুরুষাঙ্গ থাকে, আর কিছু মানুষের থাকে যোনী। মানুষের যৌন ও প্রজনন অঙ্গ, ক্রোমজোম, হরমোন ইত্যাদি দিয়ে মানুষের লিঙ্গ ঠিক হয়। তবে এসব দিয়ে তথা দেহ দিয়ে মানুষের পরিচয় ঠিক হয় না।

সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন হলো মানুষের যৌন রুচি বা আকর্ষণ। যৌর আকর্ষণ ও রুচিতে ভিন্নতা থাকতে পারে। কারো আকর্ষণ থাকতে পারে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি, কারো থাকতে পারে সমলিঙ্গের প্রতি। কেউ আকৃষ্ট হতে পারে উভয় লিঙ্গের প্রতি, কারো আবার যৌন কোনো আকক্সক্ষাই না থাকতে পারে। সম্পূর্ণটাই রুচির ব্যপার। যৌন রুচি বর্ণালীর মতো। এখানে আছে রঙ্গের বৈচিত্র। এক্ষেত্রে ভালো-মন্দ, ভুল কিংবা সঠিক বলতে কিছু নেই। পুরুষ হলে নারীর প্রতিই আকর্ষণ থাকতে হবে বা নারী হলেই পুরুষের প্রতি আকর্ষণ বোধ করতে হবে- এমন কোনো কথা নেই।

জেন্ডার হলো নারী বা পুরুষ হবার সাথে যুক্ত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রত্যাশা। সমাজ ও সংস্কৃতি নারীর কাছ থেকে বেশকিছু আচরণ আশা করে, আবার ভিন্ন কিছু আচরণ কামনা করে পুরুষের কাছ থেকে। নারী-পুরুষ কেমন হবে, তাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ- এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। এ ক্ষেত্রে সমাজের নির্দিষ্ট কিছু ধারণা আর  দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, যেগুলো সবই মানুষের বানানো। সর্বজনীন কিছু না।

জেন্ডারও আসলে একটি বর্ণালীর মতো। নারী কিংবা পুরুষ হবার নির্দিষ্ট কোনো পথ নেই। কেউ নিজেকে নারী বা পুরুষ, নুরী-পুরুষ দুটোই, কোনোটাই না অথবা নারী-পুরুষের মাঝামাঝি কোনো কিছু হিসেবে পরিচয় দিতে পারে। সবই সমান, সবই বৈধ।

আরও পড়তে পারেন-

জেন্ডার আইডেন্টিটি বা মনস্তাত্ত্বিক লিঙ্গবোধ হলো মানুষের নিজের ব্যাপারে নিজের অনুভুতি। যেমন একজন মানুষের দেহ পুরুষের, কিন্তু সে নিজেকে নারী মনে করে, নিজেকে নারী হিসাবে প্রকাশ করে। নারীসুলভ আচরণ করে, নারীদের পোষাক পরে, নারীদের মতো সাজগোজ করে, নারীদের নাম ব্যবহার করে ইত্যাদি। আর সে ব্যক্তির নিজেকে নারী মনে হওয়াটা হলো মনস্তাত্ত্বিক লিঙ্গবোধ বা জেন্ডার আইডেন্টিটি। আর নিজেকে নারী হিসেবে প্রকাশ কারাটা হলো (Gender Expression) জেন্ডার এক্সেপ্রেশন বা মনের লিঙ্গ বহিঃপ্রকাশ।

একজন মানুষ নিজেকে যা মনে করে সমাজ ও আইন তাকে সেটাই গণ্য করবে। অর্থাৎ জন্মগত নিঙ্গের উপর মনস্তাত্ত্বিক লিঙ্গবোধ প্রাধান্য পাবে। তাই পুরুষাঙ্গ থাকলেও কেউ ‘নারী’ হতে পারে, যোনী থাকলেও কেউ পুরুষ হতে পারে। (ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ – আসিফ আদনান)।

মোটকথা তাদের মূল দাবি হলো সমকামিতা ও বিকৃত যৌনাচারকে বৈধতা দেওয়া। যাকে তারা বিভিন্ন শব্দ, বাক্য আর পরিভাষার রঙ্গিন কাপড়ে মুড়ে সময়ে সময়ে সভ্য সমাজের সামনে উপস্থাপন করছে। বানোয়াট সব শ্রেণীভাগ সমাজে প্রচার করছে। অন্যথায় ‘দেহ যাই হোক লিঙ্গ নির্ভর করে মনের উপর’ তাদের এই বক্তব্যের কোনো যৌক্তিকতা নাই। কীভাবে একটা সুস্থ-সবল পুরুষ তার প্রজনন গ্রন্থি থেকে শুরু করে পুরুষাঙ্গ সহ পুরুষালি সব অঙ্গ নিয়ে শুধু মনে মনে নারী হতে পারে? আবার একজন নারী মেয়েলি সব সুস্থ অঙ্গ নিয়ে কীভাবে মনে মনে পুরুষ হতে পারে? কীভাবে দেহ, যৌন আকর্ষণ, পরিচয় ও প্রকাশ অভিন্ন হতে পারে? অথচ একটা অন্যটার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো পরিচয় হয় না। যার দেহ পুরুষের সে পুরুষই, যার দেহ নারী সে নারীই।

মনস্তাত্ত্বিক লিঙ্গ ও তার বায়োলজিক্যাল ভিত্তি

মূলত ট্রান্সজেন্ডারবাদীদের দাবির কোনো বায়োলজিক্যাল বা জৈবিক কোনো ভিত্তি নেই। তারা একটি দাবি তুলছিল যে, তাদের জেন্ডারও জন্মগতভাবে নির্দিষ্ট হয় (Born this way’ hypotheis)। (সূত্র- NGLTF Staemnt 0n NIH Genetic Study on Homosexualitu. http://www.cs.cmu.edu/afs/cs/user/scotts/ftp/bulgarians/nih-ngltf.html (accessd Feb 5, 2023).  অবশেষে তারা ‘গে জিন’ আবষ্কিার করলÑএই নিয়ে ১৯৯৩ সালে শুরু হলো বিশ^মিডিয়াগুলোর তোলপাড়। এই বুঝি পাওয়া গেল এলজিবিটির জেনেটিক ভিত্তি! আনন্দে তো আমেরিকার NATIONAL GAY & LESBIAN TASK FORCE বিবৃতি দিয়েই বসল যে, “The NIH study… shows that homosexuality is a naturally occurring and common variation among humans… ”। (সূত্র- NGLTF Statement on NIH Genetic Study on Homosexuality https://www.cs.cmu.edu/afs/cs/user/scotts/ftp/bulgarians/nih-ngltf.html)।  পরে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের জেনেটিক ডাটা যাচাই করে সায়েন্টিফিক মহল এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, ‘গে জিন’ বলে কোনো কিছুর অস্তিত্বই মিলেনি। জেনেটিক বৈচিত্রতা বা ভিন্নতা দিয়ে হোমো সেক্সুয়ালিটি নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। (সূত্র- Lamber J. No `gay gene’: Massive study homes in on gemetic bassis of human sexuality. Nature 2019; 573: 14-5.)।

নিইরোবায়োলজিক্যাল (ইমেজিং টেকনোলোজি) গবেষণার মাধ্যমে নারী এবং পুরুষের মস্তিষ্কে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া গেলেও জন্মগত ট্রান্সজেন্ডার বা এলজিবিটি দাবি করার মতো অগ্রগতি নেই। ট্রান্সজেন্ডারদের সেই ÔBorn this way’ (‘এভাবেই তারা জন্মগ্রহণ করে’) হাইপোথিসিস প্রমাণে ভ্রূণ পর্যায়ে কোনো হরমোনগত পার্থক্য বা ভিন্নতা দেখা যায় কি না- তা নিয়ে ইন্টারসেক্স (হিজড়া) শিশুদের উপর পর্যাপ্ত রিসার্চ করেও কোনো ভিত্তি দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। (সূত্র- Pasternack E. You can’t be born in the wrong body. UnHerd. 2022; published online May 4. Https://unherd.com/2022/05/you-cant-be-born-in-the-wrong-body/ (accessed March 21, 2023)।

এতেঠ প্রচেষ্টার পরও ট্রান্সজেন্ডার হওয়ার কারণ যেহেতু খঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাই এটি নিয়ে বেশি মরিয়া হলে কিন্তু ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির জন্য ভালো হবে না বলে বিখ্যাত সায়েন্টিফিক ম্যাগাজিন ‘সায়েন্টিফিক আমেরিকান’ এই শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপে- The search for a ‘Cause’ of Transness is Misguided অর্থাৎ ট্রান্সজেন্ডারের কারণ খোঁজা বিপথগামিতার নামান্তর। (সূত্র- The Search for a cause of Transness Is Misguided – Scientific American. https://www.scientificamerican.com/articla/the-search-for-a-lsquo-cause-rsquo-of-transness-is-misguided/ (accessd Feb 5, 2023)।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- ট্রান্সজেন্ডার শনাক্তকরণে কোনো মেডিক্যাল পরীক্ষ-নিরীক্ষা নেই। কেননা এটি মনের ইচ্ছাধীন Qvaxb (self-identified) এবং কিছু প্রশ্নমালার (Questionnaire) উপর জরিপ করে শনাক্ত করা হয়। (সন্তান প্রতিপালনে এ যুগের চ্যালেঞ্জ, – ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, পৃ: ৪৮, প্র: সিয়ান)।

ট্রান্সজেন্ডার বা লিঙ্গ রুপান্তরের পক্রিয়া, পদ্ধতি ও ধরণ

অনেকের মনে হতে পারে যে, ‘লিঙ্গ পরিবর্তন’ সার্জারির মাধ্যমে বাস্তবেই বুঝি কোনো নারী পুরুষ হয়ে যায়, বা কোনো পুরুষ বুঝি নারীতে রূপান্তরিত হয়! কিন্তু না, এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। মূলত লিঙ্গ রুপান্তর করা হয় দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে; (Hormones Therapy) বা হরমোন থ্যারাপি এবং (Sex Reassignment Surgery) বা লিঙ্গ রূপান্তর সার্জারি। নারী-পুরুষ প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন হরমোন থাকে, যা তাদের বাহ্যিক বেশভূষা, শক্তি ও সক্ষমতা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাবে ফেলে। পুরুষদের হরমোনকে বলা হয় (Testosterone) ‘টেস্টোসটেরন’ আর (Estrogen) ‘ইস্ট্রোজেন’ বলা হয় নারীদের হরমোনকে।

টেস্টোসটেরন পুরুষত্বের জন্য দায়ী প্রধান হরমোন। এর প্রভাবেই একজন পুরুষের বয়ঃসন্ধির সময় কন্ঠ ভারি হয়, লোম, দাড়ি গজায়, মাংশপেশী ও হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে। পুরুষের রাগ, আগ্রাসী মনোভাব এবং যে কোনো কাজে ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতার পেছনেও জোরালো ভুমিকা রাখে এই হরমোন। মোটকথা, এই হরমোনই পুরুষকে তৈরী করে নারীদের থেকে ভিন্ন করে। আর ইস্ট্রোজেন হলো নারীত্বের জন্য প্রধান দায়ী। বয়ঃসন্ধিকালে নারীর দেহে আসা পরিবর্তনগুলো এই হরমোনের ভুমিকায়ই হয়ে থাকে। এর প্রভাবেই তাদের শরীরে চর্বি বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে, শরীরের কাঠামোও হয় কমনীয়।

ট্রান্সজেন্ডাররা তাদের শরীরে বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিজেদেরকে ভিন্ন লিঙ্গের সদস্য হিসেবে উপস্থাপন করে। একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী (বাস্তবে পুরুষ) তার শরীর থেকে অন্ডকোষ কেটে ফেলে দিয়ে পুরুষাঙ্গ কেটে উল্টে দিয়ে কৃত্রিম যোনী তৈরি করার চেষ্ট করে। হরমন থ্যারাপি গ্রহণের মাধ্যমে পুরুষালি হরমোন টেস্টোসটেরনকে নিয়মিতো শাষিত করে বক্ষদেশ ফুলিয়ে তোলে, কন্ঠ ও শরীর নারীদের মতো করে নিজেকে নারী হিসাবে উপস্থাপন করে।

অন্যদিকে একজন ট্রান্সজেন্ডর পুরুষ (বাস্তবে নারী) তার স্তন, জরায়ু এবং গর্ভধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য অংশ কেটে ফেলে দেয়। তারপর হাতের কবজি কিংবা পা থেকে কিছু পেশী নিয়ে কৃত্রিমভাবে একটি ‘পুরুষাঙ্গ’ তৈরি করে এবং হরমোন ট্রিটমেন্ট নিয়ে কন্ঠকে পুরুষের মতো ভারি করে তোলে, এবং এই হরমোনের কারণে নারীর লোম ও দাড়ি-গোফ গজাতে শুরু করে।

কিন্তু এসব সার্জারির মাধ্যমে কখনও ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ (যে জন্মগত নারী) প্রকৃত পুরুষের বীর্য উৎপাদন করতে পারবে না। তার ঔরসে সন্তান জান্মাবে না কোনও দিন, যা কিনা পুরুষত্বের প্রধান চিহ্ন। অপরদিকে ট্রান্সজেন্ডার নারী (যে জন্মগত পুরুষ) শত সার্জারির মাধ্যমেও সন্তান গর্ভধারণ করতে পারবে না, যে গর্ভধারণ কিনা নারীত্বের সবচেয়ে বড় চিহ্ন। আর তাদের কৃত্রিম যোনী বা কৃত্রিম পুরুষাঙ্গ কখনই সত্যিকারের অঙ্গের মতো কাজ করবে না। না প্রজননের ক্ষেত্রে, না যৌন ক্ষুধা নিবারণের ক্ষেত্রে। এক কথায় একটা পাঠাকে যেমন খাসি করিয়ে দিলে সেটা মাদি ছাগল হয়ে যায় না। বাচ্চা দিতে পারে না, বাচ্চাকে দুধ পান করানোর যোগ্য হয়ে উঠে না, তেমনই একটা ট্রান্সজেন্ডারও পারে না বিপরীত লিঙ্গের মতো হতে।

আবার কেউ শুধু হরমোন ট্রিটমেন্টেই সীমাবদ্ধ থাকে। তাদের যৌনাঙ্গ আগের মতোই অক্ষত রেখে দেয়। যার মাধ্যমে বাহ্যিক বেশভূষায় পরিবর্তন আসলেও সেই পুরুষ তার পুরুষত্ব নিয়েই থাকে, আর নারী থাকে তার নারীত্ব নিয়েই; করণ শুধু হরমোনের ট্রিটমেন্ট গ্রহণ করলেই একজন পুরুষ সত্যিকারের মেয়ে হয়ে যায় না। জন্মগতভাবেই একজন পুরুষের সাথে একজন মেয়ের দৈহিক গঠনে অনেক পার্থক্য থাকে। যেমন: পুরুষের পুসপুস বড়, পেশির সাইজ এবং হাড়ের ঘনত্ব বেশি। হরমোন ট্রিটমেন্টের ফলে সেগুলোতে ৫%-র বেশি পরিবর্তন হয় না। (সন্তান প্রতিপালনে এ যুগের চ্যালেঞ্জ, ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, পৃ: ৪২, প্র: সিয়ান)।  পশ্চিমা বিশে^ও নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার বলে দাবি করা লোকদের বড় একটা অংশই শুধু এই হরমোন ট্রিটমেন্টই নিয়ে থাকে। বাকি ২৫% এর মতো লিঙ্গ পরিবর্তনের সার্জারি করে। (সূত্র- Cf. J. Herman et al., “2015 U.S. Transgender Survey,” National Center for Transgender Equality, 99,100, Cf. I. Nolan et al., “Demographic and Temporal Trends in Transgender Identities and Gender Confirming Surgery,” Translational Andrology and Urology, 8:3 (June 2019).)। 

আবার কেউ তো অস্ত্রোপচার বা হরমোন ট্রিটমেন্ট ছাড়াই শুধু পোষাক আর নাম পরিবর্তন করে নিজেকে ভিন্ন লিঙ্গের বলে দাবি করে বসে, কারণ তারা মনে করে লিঙ্গ পরিচয় হলো একটি মনস্তাত্ত্বিক বোধ, জন্মগত লিঙ্গ পরিবর্তন করে ট্রান্সজেন্ডার হওয়া কোনো চিকৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের উপর নির্ভরশীল নয় Ñএমনটিই বলা হয়েছে তাদের এক ওয়েবসাইটে। সেখানে উল্লেখ আছে-

Transgender is a term used to describe people whose gender identity differs from the sex they were assigned at birth. Gender identity is a person’s internal, personal sense of being a man or a woman (or boy or girl.) For some people, their gender identity does not fit neatly into those two choices. For transgender people, the sex they were assigned at birth and their own internal gender identity do not match….

As part of the transition process, many transgender people are prescribed hormones by their doctors to change their bodies. Some undergo surgeries as well. But not all transgender people can or will take those steps, and it’s important to know that being transgender is not dependent upon medical procedures. (What does transgender mean? https://glaad.org/transgender/transfaq/).

নিজেকে বিপরিত লিঙ্গের বলে মনে করার কারণ ও প্রতিকার

কোনো মানুষ নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের বলে মনে করার পিছনে অনেকগুলো কারণ হতে পারে। তন্মধ্যে কয়েকটি কারণ অন্যতম। যথা-
* মানসিক সমস্যা
* যৌন বিকৃতি
* সামাজিক প্রভাব

মানসিক সমস্যা:

কিছু মানুষ আছে যারা মানসিক রোগে ভোগার ফলে তাদের মনে হয় তারা ‘ভুল শরীরে আটকে পড়েছে’। এক সময় সে চরম অস্বস্তিতে ভোগতে থাকে। তার মনে হতে থাকে সে যদি বিপরীত লিঙ্গের কেউ হতে পারতো তাহলে হয়তো এই অস্বস্তি থেকে মুক্তি লাভ করতে পারতো। এই রোগকে আগে (Gender Identity Disorder) জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার বলা হতো। বর্তমানে এই মানসিক রোগটাকে (Gender Dysphoria) জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিসফোরিয়া বলা হয়, যার আলোচনা গত হয়েছে। এই মানসিক রোগের অনেকগুলো কারণ হতে পারে। যেমন: ডিপ্রেশন, হতাশা, শৈশবে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া অথবা হতে পারে পরিবারিক কিংবা সামাজিকভাবে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার ইত্যাদি।

যৌন বিকৃতি:

নিজেদেরকে নারী হিসাবে উপস্থাপন কারা পুরুষদের বড় একটা অংশ আছে যারা এর মাধ্যমে যৌন আনন্দ পায়। নিজেদেরকে নারী হিসাবে চিন্তা করে, নারী হিসাবে দেখে, নারীদের পোষাক পরে, নারীর সাজে নিজেকে উপস্থাপন করে যৌন আনন্দ লাভ করে। এটা এক ধরনের কুরুচি বা যৌন বিকৃতি। এটাকে বলা হয় (Autogynephillia) অটোগাইনেফিলিয়া, যার শাব্দিক অর্থ দাঁড়ায় ‘নিজেকে নারী হিসাবে কামনা করা’। (সূত্র- James Shupe, “I Was America’s First ‘Nonbinary’ Person. It Was All a Sham,” Daily Signal (March 10, 2019), https://www.dailysignal.com/2019/03/10/i-was-americas-first-non-binary-person-it-was-all-a-sham/.
Ray Blanchard, “Gender Identity Disorders in Adult Men,” in Clinical Management of Gender Identity Disorders in Children and Adults, ed. Ray Blanchard and B.V. Steiner (Washington, D.C.: American Psychiatric Publishing, 1990): 49–75.)।

অটোগাইনেফিলিয়া বিভিন্নভাবে হতে পারে, কেউ নিজেকে উপস্থাপন করতে চায় খোলামেলা পোষাকে নারী হিসেবে, কারো ভাল্লাগে নারীসুলভ আচরণ করতে, কারো ভালো লাগে নারী সদস্য হয়ে তাদের সাথে মিশতে। কেউ আবার চায় নারী হিসাবে যৌনকর্ম করতে। এধরণের মানুষ আবার সবাই সমকামী হয় না, বরং তাদের বড় একটা অংশ নারীদের প্রতি চরম আকর্ষণ বোধ করে। তারা নিজেকে দেখতে চায় নিজের ভালবাসার বস্তুর সাজে। কারণ যাই হোক, বিষয়টি একটি যৌন বিকৃতি, বিকৃত চিন্তা-চেতনা আর অবাধ যৌনাচারের ফল।

সামাজিক প্রভাব:

ট্রান্সজেন্ডারবাদের দাবিদারদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ার পিছনে বড় ধরণে ভুমিকা পালন করছে সামাজিক প্রভাব। পশ্চিমা সমাজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, হলুদ মিডিয়া ও তার পরিপাশির্^কতা। একটা শিশুকে শৈশবেই পরিচয় করানো হচ্ছে ট্রান্সজিন্ডারবাদের সাথে। মিডিয়াগুলো ফলাও করে প্রচার করছে ট্রান্সজেন্ডার হওয়া খারাপ কিছু না, বরং তারা বিশেষ ধরণের মানুষ। সমাজে তাদের আলাদা দাম আছে। তাদের কৃতিত্ব তুলে ধরা হচ্ছে বড় করে। অন্যদিকে ছেলে-মেয়েরা যে সময় শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা রাখতে যায়, সে সময়টা তাদের জন্য অনেক জটিল হয়ে থাকে। এ সময় নানা ধরণের বিভ্রান্তি, আবেগ আর প্রবৃত্তির বশে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। আবার কেউ এ সময় বিভিন্ন নেশা ও মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে সামাজিক নানা নষ্ট প্রভাবে নিজেকে ভাসিয়ে দেয় এক বিভ্রান্তির স্রোতে, নিজেকে দাবি করে বসে ট্রান্সজেন্ডার হিসাবে। (সূত্র- ট্র্যান্সজেন্ডর মতবাদ, আসিফ আদনান)।

মোটকথা, নিজেকে ভিন্ন লিঙ্গের মনে করার কারণ অনেক হতে পারে। আর ট্রান্সজেন্ডার দাবিদার যেমন পুরুষ বা নারী হতে পারে, আবার একজন আন্তলিঙ্গ বা হিজড়াও নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার দাবি করতে পারে। সহজে বলতে গেলে, একজন জন্মগত নারী যেমন নিজেকে পুরুষ মনে করতে পারে বা একজন জন্মগত পুরুষ যেমন নিজেকে নারী দাবি করতে পারে, তেমনই একজন আন্তলিঙ্গ বা হিজড়াও তার আভ্যন্তরীণ লিঙ্গের বিপরিত লিঙ্গ বলে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে, যেমনটি বলছে জাতিসংঘ তার এক বক্তব্যে-

Gender identity refers to a person’s experience of their own gender. Transgender people have a gender identity that is different from the sex that they were assigned at birth. A transgender or trans person may identify as a man, woman, transman, transwoman, as a non-binary person, and with other terms such as hijra, third gender, two-spirit, travesti, fa’afafine, genderqueer, transpinoy, muxe, waria and meti. (সূত্র- https://www.unfe.org/wp-content/uploads/2017/05/UNFE-Transgender.pdf)।

এক কথায় যে-ই নিজেকে ভিন্ন লিঙ্গের বলে দাবি করুক- হোক সে পুরষ, নারী কিংবা হিজড়া- সবারই হয়তো মানসিক সমস্যা আছে অথবা তার চিন্তা-চেতনা বা যৌনতায় বিকৃতি ঘটেছে। তার জন্য আবশ্যক হলো মানসিক চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হওয়া। তার দরকার সুস্থ চিন্তা ও সভ্যতার শিক্ষা। শরীর কাটিকুটি করে মনের মতো সাজানো এর সমাধান নয়। যেমন এক ধরণের রোগ আছে, যে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের কোনো অঙ্গকে কেটে ফেলতে চায়। অর্থাৎ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি মানসিক সমস্যার কারণে নিজের সুস্থ হাত বা অন্য কোনো অঙ্গকে কেটে ফেলতে চায়। এই রোগকে ‘বডি আইডেন্টিটি ইন্টেগ্রিটি ডিসঅর্ডার’ বলা হয়। এখন এই রোগীর চিকিৎসা হিসাবে কী করা উচিৎ? তার সুস্থ হাত ফেলা, নাকি মনের চিকিৎসা করা? [চলবে]

– আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন (দা.বা.), মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও সহযোগী পরিচালক- জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম এবং প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব- নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।