মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী: টঙ্গীর তুরাগতীরে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমা। দেশ-বিদেশের লাখো মুসলিমের পদচারণায় এখন মুখরিত ইজতেমার ময়দান। সমাজে ইজতেমার প্রভাব, তাবলিগের কাজের গুরুত্বসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর মুগদা বাইতুল আমান জামে মসজিদের সহসভাপতি আলহাজ সৈয়দ জহির উদ্দীন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষ আর জিন জাতি সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য।’ এই ইবাদতের রূপরেখা ও একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে আল্লাহতায়ালা নাজিল করেছেন মহাগ্রন্থ আল কোরআন। আল্লাহর এই শাশ্বত বিধান যথাযথভাবে মেনে চলার মধ্যেই উভয় জাহানের কল্যাণ নিহিত এবং চিরশান্তি ও মুক্তির ঠিকানা।
কিন্তু মানুষ শয়তানের প্ররোচনায় দ্বীনের পথ ও ইসলামের শিক্ষা ভুলে যায়। এই দ্বীন ভোলা মানুষের হৃদয়ে ইসলামের আলো জ্বালাতে দাওয়াতে তাবলিগের গুরুত্ব অপরিসীম। দ্বীনের দাওয়াতের কাজে নানাভাবে মানুষ সম্পৃক্ত হচ্ছে, ইসলামের প্রচার-প্রসারে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছে। আলহাজ সৈয়দ জহির উদ্দীন তেমনি একজন ইসলামপ্রেমী দ্বীন-দরদি মানুষ। শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক, উম্মাহ২৪ডটকম এর প্রকাশক এবং আল বাশার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল মাদানি মানিকনগর ঢাকার সভাপতি।
তিনি শুধু তাবলিগের কাজে নয়, বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসার উন্নয়নসহ সমাজসেবার কাজে জড়িত। ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার সোনাপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া এই কৃতি সন্তান নিজগ্রামে প্রতিষ্ঠিত একটি কওমি মাদ্রাসার সিংহভাগ ব্যয় বহন করেন। মাদ্রাসার উস্তাদ, শিক্ষকদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকেন। ভালোবাসেন তাবলিগের কাজকে। দাওয়াতে তাবলিগের কাজে সময়ও দিয়েছেন মুফতি মুশতাকুন্নবী কাসেমির সঙ্গে।
তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে লক্ষাধিক নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তারা পৃথিবীতে এসে এই তাবলিগের গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সব নবী-রাসুলের মিশন ছিল এক ও অভিন্ন। পথভোলা মানুষগুলোর দ্বারে দ্বারে গিয়ে সত্যের বাণী পৌঁছে দেওয়া। ইসলামেই রয়েছে চিরশান্তি সফলতা এই অনুভূতি জাগিয়ে তোলা।
হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জীবনের দীর্ঘ ২৩ বছর এই মিশন নিয়েই মানুষদের দাওয়াত দিয়েছেন। খুলনায় তিন দিনের জামাতে গিয়ে আমার হৃদয়ে এ উপলব্ধি বদ্ধমূল হয়েছে।
তাবলিগ নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় একসময় তাবলিগবিরোধী মানুষের সংখ্যা বেশি ছিল। আমরা তখন ছোট, আমাদের এলাকায় তাবলিগের জামাত এলে বিরোধীরা তাদের মসজিদ থেকে বের করে দিয়েছিল। কিন্তু এরপর এলাকায় তাবলিগের কাজ শুরু হয়। এখন ব্যাপকভাবে তাবলিগের কাজ চলছে। তিনি দাওয়াতে তাবলিগের কাজকে মনেপ্রাণে ভালোবাসেন। বিশ্ব ইজতেমার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে হেদায়েতের বাতাস জারি হবে, পথভোলা মানুষ সঠিক পথের দিশা পাবে এবং মানুষের হৃদয়ে ইসলামের আহ্বান পৌঁছবে বলে বিশ্বাস করেন।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
দেশের শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে তাঁর। শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.), মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.), আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমি (রহ.), মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারি (রহ.) ও নানুপুরের পীর সাহেবসহ অনেকের স্নেহ, সান্নিধ্য লাভ করেছেন। দেশের শীর্ষ ও প্রাচীন ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উম্মুল মাদারিস জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার সাথেও তিনি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। বর্তমান সময়ের শীর্ষ আলেমদের অন্যতম মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী ও মুফতি মুস্তাকুন্নবী কাসেমিসহ অনেক আলেম-ওলামার সঙ্গে রয়েছে তার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক।
শীর্ষ আলেমদের সাথে এই সম্পর্কের দাবিতে তিনি বলেন, সময়ের প্রয়োজনে কওমি মাদ্রাসায় ইংরেজিসহ সাধারণ শিক্ষার বিষয়াবলি রাখা দরকার। ইসলামের দাওয়াত আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাড়ানোর জন্য ইংরেজি শিক্ষার খুব প্রয়োজন। সেই সঙ্গে কওমি সনদের স্বীকৃতি কার্যকরের ব্যবস্থাও করা দরকার। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, বর্তমানের কওমি মাদ্রাসাগুলো প্রকৃত আলেম তৈরি করছে, সমাজের উপকারে নানাভাবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, আমি আলিয়া মাদ্রাসায় ফাজিল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। বর্তমানে আলিয়া মাদ্রাসায় আর আগের মতো পড়াশোনা নেই। দরসি কিতাবাদির বাইরে জেনারেল শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় আগের মতো মুহাক্কিক (যোগ্য) আলেম তৈরি হচ্ছে না। এটা খুবই হতাশাজনক এবং দুঃখজনক একটি ব্যাপার।
আলহাজ সৈয়দ জহির উদ্দীন বলেন, শুরুর পর থেকে তাবলিগ আজ অবধি জারি আছে, থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত ইনশাআল্লাহ। মানুষকে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগির প্রতি আগ্রহী করে তোলাই তাবলিগ জামাতের মূল কাজ। এর জন্য তাবলিগ জামাতের সাথীরা নিরলস চেষ্টা করে থাকেন। দাওয়াত ও তাবলিগের বড় জমায়েতে বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়েছে। ইজতেমা হচ্ছে, মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার এক অন্যতম মাধ্যম। ইজতেমার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় পরস্পরের মাঝে সৌহার্দ্য, ভালোবাসা। ইজতেমার মাধ্যমে অনেক মানুষ সঠিক পথের সন্ধান পায়। পায় সিরাতে মুস্তাকিমের দিশা। ইজতেমার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্য ও সংহতির প্রকাশ ঘটে।
ইজতেমা থেকে অনেক মানুষ দ্বীনের দাওয়াতের জন্য এক চিল্লা, তিন চিল্লা, এক সাল কেউ আবার জীবন সাল লাগানোর জন্য বিভিন্ন দেশ সফরের উদ্দেশ্যে বের হবেন। তার প্রত্যাশা, ইজতেমায় দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা মুসল্লি, দেশ-বিদেশের সব মুসলিম হৃদয়ে প্রভুভীতি এবং প্রভুপ্রেম সৃষ্টি হোক।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ